পুতুলের বিরুদ্ধে চিঠি এখনও পায়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
Published: 28th, January 2025 GMT
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে সরাতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চিঠি এখনও পায়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে গতকাল সোমবার মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট আসেনি। সুতরাং, এখানে প্রিম্যাচিউরড স্টেটমেন্ট দেওয়া ঠিক হবে না। আমরা এখনও চিঠি পাইনি, চিঠি আসেনি।’ এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা নিয়ে হালনাগাদ তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
এর আগে পুতুলের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দুই মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছিল দুদক। গত ১৯ জানুয়ারি দুদকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের দুর্নীতির একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দুই-এক দিনের মধ্যে চিঠি পাঠানো হবে।
অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুদক জেনেছে, পুতুলকে ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এবং নিয়মবহির্ভূত কাজ করা হয়েছে। তাঁর ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে প্রদত্ত তথ্যাদি যথাযথ ছিল না। এ সময় তিনি কানাডার নাগরিক ছিলেন। দ্বৈত নাগরিকত্বের পরও ডব্লিউএইচওর দায়িত্বে আসার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই সময়ের ভূমিকা নিয়ে গতকাল এক প্রশ্নে মুখপাত্র রফিকুল বলেন, ‘দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রমাণের কথা যেটা বললেন, এটা সে সময়ে যারা কাজ করেছে, তারা হয়তো বলতে পারবে। আমি একটু আগে বলেছি যে, আমাদের কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট আসে নাই। এ ব্যাপারে প্রিম্যাচিউরড স্টেটমেন্ট দেওয়া ঠিক হবে না।’
দ্বৈত নাগরিকদের সরকারি দায়িত্বে থাকার বিষয়ে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে সরকারি কোনো কর্মে নিযুক্ত হওয়া যায় না; এটা সাধারণ একটা প্রক্রিয়া। এর ব্যত্যয়গুলো কোথায়-কীভাবে হয়েছে, সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো খতিয়ে দেখতে পারে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারত যান। তখন থেকে তিনি সেখানে আছেন। ডব্লিউএইচওতে পুতুলের কর্মস্থল নয়াদিল্লি। সরকার পতনের পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। তাঁর মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।
দুদকের তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। এমন ব্যক্তি ডব্লিউএইচওর পদে থাকা দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর। বিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রফিকুল আলম বলেন, ‘কোনো দেশ থেকে সন্দেহভাজন অপরাধীর তথ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশ ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করতে পারে। রেড নোটিশ ইন্টারপোলের আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সমতুল্য।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রেড অ্যালার্টের বিষয়ে আমার কাছে হালনাগাদ তথ্য নেই।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ ট্রাম্পের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ‘অত্যন্ত উস্কানিমূলক’ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন ‘যথাযথ অঞ্চলে মোতায়েন’ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “ওই মন্তব্য় যদি নেহাতই বোকামি ও উস্কানিমূলক বক্তব্য না হয়ে, তার থেকে বেশি কিছু হয়, তাই আমি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছি।” খবর বিবিসির।
ট্রাম্প আরো লিখেছেন যে, “শব্দগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রভাবও অপ্রত্যাশিত হতে পারে। তবে আশা করি এই বিবৃতি তেমন কিছু ঘটাবে না।”
আরো পড়ুন:
পুতিনকে এবার ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প
পুতিনকে এবার ১২ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প
মার্কিন সামরিক প্রোটোকল মেনে দুটি সাবমেরিন কোথায় মোতায়েন করা হচ্ছে, তা তিনি বলেননি।
একদিন আগেই ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে মস্কোকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এরপরই প্রতিক্রিয়া দেন মেদভেদেভ।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ, যিনি বর্তমানে রাশিয়ান ফেডারেশনের নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান, তার অত্যন্ত উস্কানিমূলক বক্তব্যের ভিত্তিতে, আমি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিনকে উপযুক্ত অঞ্চলে মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছি।”
ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পারমাণবিক চালিত নাকি পারমাণবিক অস্ত্রধারী সাবমেরিনের মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন, তা খোলাসা করেননি।
রাশিয়া এবং আমেরিকার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে এবং উভয় দেশেরই পারমাণবিক সাবমেরিনের বহর রয়েছে।
শুক্রবার পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, “একটি হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং আমরা এটিকে উপযুক্ত মনে করিনি। তাই আমাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “আমি মার্কিন জনগণের নিরাপত্তার ভিত্তিতে এটি করেছি। রাশিয়ার একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুমকি দিয়েছিলেন। এবং আমরা আমাদের জনগণকে রক্ষা করব।”
ক্রেমলিন এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেনি, তবে ট্রাম্পের বক্তব্যের পর মস্কোর শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প এবং মেদভেদেভ সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যক্তিগত আক্রমণে জড়িয়ে পড়েছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দুই দফায় নতুন করে সময় বেধে দিয়েছেন, তবে যুদ্ধ থামানোর কোনো লক্ষণ পুতিন এখনও দেখাননি।
মেদভেদেভ- যিনি ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন- এই সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘রাশিয়ার সঙ্গে আল্টিমেটাম খেলা’ খেলার অভিযোগ করেছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে মেদভেদেভ বলেছিলেন, “প্রতিটি নতুন আল্টিমেটাম একটি হুমকি এবং যুদ্ধের দিকে একটি পদক্ষেপ।”
এর আগে, তিনি জুলাইয়ের শুরুতে তিনি ট্রাম্পের আল্টিমেটামকে ‘নাটকীয়’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, “রাশিয়া এসবের পরোয়া করে না।”
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) টেলিগ্রামে একটি পোস্টে মেদভেদেভ ট্রাম্পকে রাশিয়ার ‘ডেড হ্যান্ড’ সম্পর্কে সতর্ক করেন। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘ডেড হ্যান্ড’ হলো রাশিয়ার প্রতিশোধমূলক পারমাণবিক হামলা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কোডনাম।
এরপরই শুক্রবার ট্রাম্প মেদভেদেভের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি মেদভেদেভকে ‘রাশিয়ার ব্যর্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট, নিজেকে এখনো প্রেসিডেন্ট বলে ভাবেন’ বলে কটাক্ষ করেন।
ট্রাম্প মেদভেদেভকে ‘তার কথার দিকে নজর রাখার’ বিষয়ে সতর্কও করে বলেন, “তিনি খুব বিপজ্জনক অঞ্চলে প্রবেশ করছেন!”
মেদভেদেভ ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণকে সমর্থন করেন এবং পশ্চিমাদের একজন স্পষ্ট সমালোচক।
ঢাকা/ফিরোজ