বরিশাল তথা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদনদীর পানি লবণাক্ত হইবার যেই চিত্র মঙ্গলবার সমকালের এক প্রতিবেদনে তুলিয়া ধরা হইয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। প্রতিবেদনে উদ্ধৃত বরিশাল মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্য বলিতেছে, সেচের জন্য উপযুক্ত নদীর প্রতি মিটার পানিতে শূন্য দশমিক ৭ ডিএস এবং প্রতি মিটার মাটিতে ২ ডিএসের কম লবণাক্ততা থাকিতে হয়। কিন্তু ইনস্টিটিউটের সম্প্রতি পরিচালিত গবেষণায় দক্ষিণাঞ্চলের নদীর পানিতে সর্বোচ্চ ১৫ হইতে ২০ ডিএস পার মিটার এবং মাটিতে সর্বোচ্চ ২৫ ডিএস পার মিটার লবণাক্ততা পাওয়া গিয়াছে। উপরন্তু, এক দশক পূর্বেও শুষ্ক মৌসুম তথা নভেম্বর হইতে এপ্রিল অবধি সমুদ্র-সংলগ্ন তিন-চারটি নদীতে লবণপানি পৌঁছাইত। বর্তমানে সেই নদীর সংখ্যা ২০। বিশেষ করিয়া বর্ষা মৌসুমে প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত না হওয়া, তৎসহিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতু স্বাভাবিক আচরণ হারাইবার কারণে সংকট তীব্র হইয়াছে। নদনদীর পানিতে লবণ বৃদ্ধি পাইলে স্বাভাবিকভাবেই উহার প্রভাব পড়ে মাটিতে এবং মাটির লবণাক্ততার নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করিলে উহা ফসল উৎপাদনে প্রতিবন্ধক হইয়া দাঁড়ায়। ইহার প্রতিফলস্বরূপ দক্ষিণাঞ্চলের অর্ধেকের বেশি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হইবার কারণে খাদ্য উৎপাদন লইয়া শঙ্কা তৈয়ার হইয়াছে।
বলা বাহুল্য, এই সংকট কেবল বরিশালেই নহে; দেশের অন্যত্র বিরাজমান। ইতোপূর্বে সমকালেই প্রকাশিত একাধিক সংবাদ অনুসারে, খুলনা অঞ্চলের অধিকাংশ নদী লবণাক্ততার কবলে পড়িয়াছে। চট্টগ্রামসহ অন্য উপকূলীয় জেলাসমূহেও অনুরূপ সংকটে ভুগিতেছেন কৃষকরা। লবণাক্ততার কারণে দেশের অনেক জমি পতিত এবং এক ফসলি থাকিয়া যাইতেছে। এই সংকট জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাকে যে হুমকির মুখে ফেলিতেছে, ইহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। নদীর পানি লবণাক্ত হইবার ফলে ফসল শুধু নয়; সামগ্রিক পরিবেশ-প্রতিবেশও বিপর্যয়ের সম্মুখীন। বিশেষত মিঠাপানির জীববৈচিত্র্যের জন্য লবণ হুমকিস্বরূপ। লবণের আগ্রাসনে মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়িয়া থাকে। এমনকি স্বাস্থ্যের জন্যও এই পানি বিপদ ডাকিয়া আনিতে পারে। লবণাক্ত পানি পান করিলে ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্মরোগসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। নিঃসন্দেহে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তবে নির্বিচার দখল-দূষণের শিকার এবং সীমান্তের অপর পার্শ্বে বাঁধ দিয়া নদনদীর স্রোতধারা বাধাগ্রস্ত করাও ইহার জন্য কম দায়ী নহে।
এই সংকট কাটাইয়া উঠিতে পদক্ষেপ লওয়া জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। অস্বীকার করা যাইবে না, জলবায়ুর বাস্তবতায় নদনদীর লবণাক্ততা বিশেষ করিয়া শুষ্ক মৌসুমে শূন্যে নামাইয়া আনা কঠিন হইবে। তবে দখল-দূষণ বন্ধ এবং আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সরকারের পক্ষ হইতে যথাযথ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি। লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে দেশের কৃষি বিভাগের তৎপরতাও জরুরি। লবণসহিষ্ণু প্রযুক্তি ও ফসলের জাত উদ্ভাবন এবং উহার ব্যবহার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। আমরা জানি, ইতোমধ্যে কৃষি বিভাগ এই লক্ষ্যে কাজ করিতেছে। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে অতিদ্রুত উদ্যোগ না গ্রহণ করিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলিয়া যাইতে পারে। আমরা জানি, লবণাক্ত অঞ্চলে কৃষির অপেক্ষাকৃত নূতন প্রযুক্তি সর্জন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে জমি কাটিয়া উঁচু করিয়া চাষাবাদে বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা সুফল পাইয়াছেন। কৃষি বিভাগ এই ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও নির্দেশনা দিয়া কৃষকদের পাশে অবস্থান করিতে পারে। মনে রাখিতে হইবে, লবণাক্ততার কারণে ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট হইবার পরিণাম শুধু খাদ্য সংকটই সৃষ্টি করিবে না; উপকূলীয় অঞ্চল হইতে নগরমুখী অভিবাসন সমস্যাও গভীরতর করিয়া তুলিবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: লবণ ক ত র জন য হইব র
এছাড়াও পড়ুন:
হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত–আহতদের ছবি ও ভিডিও সরাতে এবং সেগুলো ছড়িয়ে পড়া বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে রিট হয়েছে। এ রিটের ওপর আদেশের জন্য ৩ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
আজ বৃহস্পতিবার শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের এই দিন ধার্য করেন।
ওই ঘটনায় নিহত–আহতদের ছবি–ভিডিও সরাতে এবং সেগুলো ছড়িয়ে পড়া বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদ ২৯ জুলাই রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান ২১ জুলাই বিধ্বস্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩০ জুলাই পর্যন্ত হিসাবে, ওই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৩৪।
পরে আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই দুর্ঘটনায় আহত–নিহতদের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ও ডিজিটাল মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোতে শিশুদের প্রায় পোশাকহীন, অগ্নিদগ্ধ ও আহত অবস্থায় দেখা যায়। এসব ছবি–ভিডিও শিশুদের পরিবারের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের ট্রমাটাইজ (মানসিকভাবে আঘাত) করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী এ ধরনের দুর্ঘটনায় আহত–নিহতদের ছবি–ভিডিও প্রকাশে সংবেদনশীল হওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে এসব ছবি ব্যবহারে আরও সতর্কতা প্রয়োজন। তাই হতাহতদের ছবি–ভিডিও সরাতে এবং সেগুলো আর যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।