‘চুড়ি দিও গো মোরে শ্যাম, রাঙা চুড়ি দিও গো।
তোমার রাঙা চরণে সেথা বাজবে রাঙা রূপকথা’– কাজী নজরুল ইসলাম
দু’হাত ভর্তি চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজ যেন বাঙালি নারীর হৃদয়াবেগেরই প্রতিধ্বনি। শখের চুড়ির ভাঙা টুকরোগুলোও নারীরা গভীর মমতায় যত্নে রেখে দেন। চুড়ি শুধু অলংকার নয়, এটি নারী হৃদয়ের আবেগ, ভালোবাসা আর স্মৃতির আধার। আধুনিকতার ছোঁয়ায় জীবন যান্ত্রিক হলেও বাংলার নারীর কাছে চুড়ির কদর এক বিন্দুও কমেনি। সাজগোজ শেষে দু’হাত ভর্তি চুড়ি না পরলে সাজটাই যেন অসম্পূর্ণ রয়ে যায়।
আধুনিক নারীর কাছে এখনও সবচেয়ে প্রিয় অলংকার হিসেবে কাচের চুড়িই সমাদৃত। যান্ত্রিকতা যেন এ আবেগকে একটুও কেড়ে নিতে পারেনি। চুড়ির দাম যেমনই হোক, প্রিয়জনের দেওয়া একগুচ্ছ কাচের চুড়িতেই যেন ভালোবাসা লেপ্টে থাকে আর নারীরা এ ভালোবাসার উপহার সযতনে রেখে দেন।
বর্তমান যুগে ফ্যাশনসচেতন শৌখিন নারীর প্রবল আগ্রহ বাড়ছে নান্দনিকতায়। তাই তো কাচের চুড়িতে বাহারি রং আর ডিজাইনে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নান্দনিকতার ছোঁয়া ।
কালের স্রোতে বয়ে চলা রেশমি চুড়ি, জয়পুরি চুড়ি, ঢাকাই চুড়ির পাশাপাশি সমানভাবে স্থান করে নিয়েছে চৌকো, ত্রিকোণ, ডিম্বাকৃতির প্লাস্টিক ও মেটাল চুড়ি। কাঠ, সুতা, মাটি, রাবার, পুঁতি, পাথর, সিটি গোল্ডসহ বিভিন্ন ধরনের চুড়িও বৈচিত্র্য বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শৌখিন নারীরা এখন শাড়ির পাশাপাশি ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ, লং স্কার্ট এবং ওয়েস্টার্ন পোশাকের সঙ্গেও সামঞ্জস্য রেখে চুড়ি পরেন। শখের চুড়িগুলো যাতে সযতনে অনেক দিন থেকে যায় সে জন্য জানা প্রয়োজন কীভাবে আপনার শখের চুড়িগুলো যত্নে রাখবেন।
চলুন জেনে নিই কীভাবে যত্নে থাকবে শখের চুড়ি।
ব্যবহারের পর বাতাসে উন্মুক্ত করে রাখুন: যে কোনো ধরনের চুড়ি ব্যবহারের পর বাড়িতে এসে সুতির নরম কাপড় দিয়ে মুছে বাতাসে উন্মুক্ত করে রাখুন। এতে চুড়িতে লেগে থাকা ঘাম শুকিয়ে যাবে এবং চুড়ির ঔজ্জ্বল্য ঠিক থাকবে।
যে কোনো চুড়ি সংরক্ষণের উপায়: বাঙালি নারীর শখের চুড়ি সংরক্ষণের জন্য চুড়ির আলনা আবহমানকাল ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানের আধুনিক যুগে চুড়ি সংরক্ষণের জন্য নারীরা ব্যবহার করেন বাহারি ডিজাইনের চুড়ির বাক্স বা কৌটা। যেখানে যত্নে থাকে শখের চুড়িগুলো।
মেটাল ও পাথরের চুড়ি সংরক্ষণের উপায়: সংরক্ষণের জন্য পরিষ্কার নরম সুতি কাপড়ে চুড়িগুলো মুড়িয়ে রাখুন।
চুড়িগুলো আলাদা করে রাখুন: চুড়িগুলো একসঙ্গে রাখলে ঘষা লেগে স্ক্র্যাচ পড়তে পারে। বিভিন্ন ধরনের চুড়ি আলাদা আলাদা কৌটায় বা বাক্সে রাখুন। যদি কাচের বা মেটালের চুড়ি হয়, সেগুলো নরম কাপড়ে মোড়ানো উচিত।
শুকনো জায়গায় রাখুন: চুড়ি সংরক্ষণের জায়গা শুকনো ও ঠান্ডা হওয়া উচিত। মনে রাখবেন, আর্দ্রতা মেটালের চুড়ির ক্ষতি করতে পারে এবং কাচের চুড়ি সহজেই ভেঙে যেতে পারে।
অ্যান্টি-টার্নিশ পেপার ব্যবহার করুন: ধাতব চুড়ির রং নষ্ট হওয়া ঠেকাতে অ্যান্টি-টার্নিশ পেপারে মুড়ে রাখুন।
কেমিক্যাল থেকে দূরে রাখুন: চুড়ি ব্যবহারের সময় পারফিউম, লোশন, সাবান বা অন্য কেমিক্যাল থেকে দূরে রাখুন। এগুলোর প্রভাবে চুড়ির রং বা গ্লসিভাব নষ্ট হতে পারে।
খেলাধুলা, সুইমিং বা ভারী কাজের সময় খুলে রাখুন: ভারী কাজ বা খেলাধুলা এবং সুইমিং করার সময় চুড়ি পরা থেকে বিরত থাকুন। এতে চুড়ি ভেঙে যাওয়া বা ক্ষতির ঝুঁকি বেশি।
নিয়মিত পরিষ্কার করুন: কাচের চুড়ি নরম কাপড় দিয়ে মুছে উজ্জ্বল রাখতে পারেন। ধাতব চুড়ি পরিষ্কার করার জন্য নির্দিষ্ট পলিশ ব্যবহার করুন।
ভ্রমণের সময় সতর্ক থাকুন: ভ্রমণের সময় চুড়ি একটি সেফটি কেসে বা বাক্সে রাখুন।
এ নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার শখের চুড়িগুলো দীর্ঘদিন পর্যন্ত নতুনের
মতো থাকবে। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র র জন য র কর ন র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?