জামিনে মুক্তির পর কারাফটকে আটক সাবেক এমপি কালাম
Published: 29th, January 2025 GMT
জামিনে মুক্তির পর কারাফটকে ফের আটক হয়েছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাত ৮টার সময় তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর কারাফটকেই জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা তাকে আটক করেন।
এর আগে বিকেল থেকে সাবেক এমপি কালামের জামিনে মুক্তি পাওয়ার খবর জানাজানি হয়। এরপর বিকেল থেকে কারাগারের বাইরের সড়কে অবস্থান নেন ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। কারো কারো হাতে লাঠিশোটা ও ইটপাটকেলও দেখা যায়।
বাইরে পুলিশের সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। রাত ৮টার সময় কারাগারের ভেতরের প্রধান ফটক থেকে বের হন কালাম। পরে ডিবি পুলিশের সঙ্গে হেঁটে কারাগারের বাইরের প্রধান ফটকের কাছে আসেন। এ সময় বাইরে অপেক্ষমাণ ডিবি পুলিশের একটি জিপে তাকে তুলে নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
বগুড়ায় মেয়েকে হত্যার দায়ে বাবার যাবজ্জীবন
সাবেক এমপি নদভী আরো ৪ দিন রিমান্ডে
আবুল কালাম আজাদকে এ সময় উদ্বিগ্ন ও বিমর্ষ দেখা যায়। গাড়িতে তোলার সময় ছাত্রদল, যুবদল ও মহিলা দলের নেতাকর্মীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ডিবি পুলিশের এক সদস্য বলতে থাকেন, ‘‘এটা পুলিশের গাড়ি, পুলিশের গাড়ি।’’ কালাম পুলিশের গাড়িতে উঠে যাওয়ার পর নেতাকর্মীরা গাড়িটি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেকে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যান। দু’-একজন ইটপাটকেলও ছোঁড়েন। এ সময় গাড়ির বাইরে থাকা পুলিশ সদস্যরা নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিলে দ্রুত গাড়িটি ডিবি কার্যালয়ে চলে যায়।
কথা বলতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার রত্মা রায় ও জেলার মো.
তিনি জানান, বাগমারা থানার দুটি মামলায় কারাগারে বন্দি ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। হাইকোর্টে তিনি দুটি মামলাতেই জামিন পেয়েছেন। বুধবার জামিনের কাগজ কারাগারে পৌঁছালে তার মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে বিষয়টি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো হয়েছিল।
এমপি হওয়ার আগে আবুল কালাম আজাদ বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন। মেয়র থাকাকালে ঠিকাদারকে অতিরিক্ত ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬১ টাকা বিল পরিশোধ করার অভিযোগে গত ২১ জানুয়ারি কালামসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তবে এ মামলায় কালামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি বলে জানিয়েছেন কারাগারের ওই ডেপুটি জেলার। তিনি জানান, ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে বাগমারা থানায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায় কারাগারে ছিলেন কালাম। এর বাইরে তার নামে অন্য কোনো মামলা আছে কি-না তা তাদের জানা নেই। অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না থাকায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
রাজশাহী জেলা ডিবি পুলিশের পুরিদর্শক আরিফ আলী জানান, কারাগারের সামনে থেকে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তাকে কোন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে তা জানতে চাইলে আরিফ আলী জানান, এটা পরে জানানো হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন আবুল কালাম আজাদ। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। পরবর্তীতে গত ২ অক্টোবর রাতে র্যাব-৪ ও র্যাবের গোয়েন্দা শাখার যৌথ অভিযানে রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা/কেয়া/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আটক স ব ক এমপ ন ত কর ম সদস য এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।