সিদ্ধিরগঞ্জে ৫ আগস্টের পর একটি অপরাধী বাহিনী সংগঠিত হয়েছে। এই বাহিনীর সদস্যরা পতিত আওয়ামী দোসর হিসেবে চিহ্নিত ছিলো। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর নিজেদের বিএনপির লোক পরিচয় দিয়ে গত ৫ মাস ধরে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে তারা। এতে বিএনপির ভাবমূর্তি বিনস্ট হচ্ছে। 

তাদের বিচরণ আদমজী ইপিজেড, কদমতলী, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল, মিজমিজি ক্যানেলপাড়, চিটাগাংরোড ও হিরাঝিল এলাকায়। এই বাহিনীর সদস্যরা হলো-সিদ্ধিরগঞ্জের ২নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহসভাপতি সোহাগ, আওয়ামী লীগ কর্মী শেফা, যুবলীগ কর্মী বাদল, ফিরোজ, নিশান, আকতার, রিতু, লিটন, আলম, সুমন এবং জাতীয় পার্টির বর।

এই বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছে আদমজীর লোহা চোর আকরাম। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও বিএনপির ভাবমূর্তি নস্ট করার জন্য লোহা চোর আকরাম এই বাহিনী গড়ে তুলেছে।

তবে স্থানীয় বিএনপি বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, আকরাম হোসেন ওরফে লোহা চোর আকরামের নানা অপকর্মের ইঙ্গিত পেয়ে সম্প্রতি গিয়াস উদ্দিন তাকে নিজের কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দিয়েছেন। 

তাছাড়া ৫ আগস্টের পর একটি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন তদন্তে আদমজী ইপিজেডে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টাকারী হিসেবে লোহা চোর আকরামের নাম উঠে আসে। 

তারা আরও জানান, গিয়াস উদ্দিন লোহা চোর আকরামকে সরিয়ে দেয়ায় এবং বিএনপির কোন নেতাকর্মী তার সাথে না থাকায় সে আওয়ামী দোসদের নিয়ে এই বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এই বাহিনীর সদস্যরা আকরামের পুর্ব পরিচিত।

আকরাম নিজেকে বিএনপির নেতা পরিচয় দিলেও বিএনপিতে তার কখনো কোন পদপদবী ছিল না এবং বর্তমানেও নাই বলে জানিয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির একাধিক নেতা।

এদিকে স্থানীয়দের তথ্যমতে, সোহাগ হচ্ছে লোহাচোর আকরামের শ্যালক। সে সিদ্ধিরগঞ্জের দুই নং ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহসভাপতি।

আওয়ামীলীগ আমলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়ার সাথে সখ্যতা থাকায় সানারপাড় ও মৌচাক বাসস্ট্যান্ডে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে। এবং সবশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হাজী ইয়াছিন মিয়ার সাথে সকল আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। 

সেই সকল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘাটলেই পাওয়া যাচ্ছে। ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগের পতনের পর কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে ছিল। পরে আকরামের শেল্টারের প্রকাশ্যে আসে।

১৯ ডিসেম্বর ইপিজেডের সামনে মিনিবাসস্ট্যান্ডে কথিত মানবাধিকার সংগঠনের শীত বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে আকরামের সাথে সোহাগকে দেখা যায়। বতর্মানে লোহা চোর আকরামের পক্ষে আদমজী ইপিজেডে ফ্যাক্টরীর কর্মকর্তাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে ব্যবসা দেখা শোনা করে। 

শেফা সুমিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। পুতা ফিরোজ ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি সিরাজ মন্ডলের সাথে। নিশান সিরাজমন্ডলের সহযোগি সম্রাটের সাথে থেকে ইপিজেডে ব্যবসা করেছে। মাদক সেবন ও বিক্রির সাথেও সে জড়িত। 
আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে বাদল দীর্ঘদিন আদমজী ইপিজেডে ব্যবসা করেছে। ৫ আগস্টের পর আকরাম তাকে দলে টানে। এখন সে আকরামের অফিসিয়াল কাজকর্ম দেখা শোনা করে। লিটন আকরামের সাথে গাড়িতে থাকে। থানায় আকরামের সোর্স হিসেবে কাজ করে। থানার গোপন খবরা খবর ও তথ্য আকরামের কাছে পাচার করে। 

রিতু আকরামের অগ্নিপতি। সে বীরমুক্তি যোদ্ধা নান্নুর ছেলে যুবলীগকর্মী আল আমিনের সাথে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আদমজী ইপিজেডে ব্যবসা করেছে। যুবলীগের পরিচয়ে রিতু ইইপজেডে ব্যবসা করলেও এখন আকরামের অর্থনৈতিক বিষয় দেখা শোনা করে। 

সুমন আকরামের কথিত ভাতিজা পরিচয়ে ইপিজেডে হুমকি-ধামকি দিয়ে ব্যবসা দখল করার মিশনে থাকে সব সময়। আকতার যুবলীগের খোকনের কর্মী ছিল। এখন আকরামের জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করে। 

আলম ইপিজেডে সারাদিন ঘুরাঘুরি করে ব্যবসা খোঁজ রাখে। এবং আকরামকে সেই তথ্য দেয়। জাতীয় পাটির রব কদমতলী দশ তলার সামনে জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা আকরামের কাঁচাবাজর থেকে টাকা তুলতো। কিন্তু সোমবার সেই বাজার উচ্ছেন করে দেয়া হয়েছে। 

এলাকাবাসী আরও জানায়, হীরাঝিল এলাকার লোহা চোর আকরামের অফিসে বসেই সকল অপকর্মের শলাপরামর্শ হয়। এবং আদমজী ইপিজেডের পাশে মিনিবাস স্ট্যান্ডে কথিত মানবাধিকার অফিসে বসে আড্ডাবাজি ও ইপিজেডে আসা যাওয়ার পথে নারী শ্রমিকদের ইভটিজিং করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই অফিসে আকরাম বাহিনীর সদস্যরা আড্ডাবাজি করে। 

আকরাম তার এই বাহিনীকে দিয়ে কদমতলী দশতলার সামনে ৯৫ শতাংশ জায়গা দকল করে রাতের অন্ধকারে কাচাবাজার গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে জমির মালিক এক ঘন্টার নোটিশে সেই বাজার উচ্ছেদ করে দেয়। কিন্তু আকরাম ঘটনাস্থলে যায়নি ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের রোষানলের ভয়ে।

ওই ব্যবসায়িরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে উচ্ছেদের সময় অভিযোগ করেন। মোটকথা আকরাম বাহিনীর নানা অপকর্মের কারণে সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির ভাবমূর্তি নস্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ স দ ধ রগঞ জ চ র আকর ম র এই ব হ ন র আওয় ম ল গ ন আকর ম ৫ আগস ট ব এনপ র অপকর ম কর ম র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল

সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতা নীলফমারী জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি, নীলফমারী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জনাব ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন এর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সোমবার (৩০ এপ্রিল) সাড়ে ৫ টার দিকে আদমজী চাষাড়া সড়কে ইপিজেড এর সামনে নারায়ণগঞ্জে বসবাসরত রংপুর বিভাগীয় বিএনপি সমর্থক গোস্ঠীর উদ্যোগে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য অকিল উদ্দিন ভূঁইয়া, রংপুর বিভাগ তরুণ দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির ক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এস, এম খোরশেদ আলম, নারায়ণগঞ্জ জেলা তরুণ দলের সাধারণ সম্পাদক মাজারুল ইসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা তাঁতী দলের সদস্য সচিব আরিফ মুন্সী, ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন ভূঁইয়া, নীলফামারী জেলা তাঁতী দলের সদস্য মোঃ খোকা, লালমনিরহাট জেলা তাঁতি দলের সদস্য আশরাফ আহমেদ খান, রংপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য নিতাই সরকার ,সঞ্চালনায় জাহাঙ্গীর হোসেন সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলা জাসাস, ও এলাকাবাসী। 

তারা সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন কদমতলী হইতে বিক্ষোভ মিছিল পরিচালনা শুরু করেন এবং আদমজী ইপিজেড এর সামনে অবস্থান করেন। 

এসময় মানববন্ধনে নারায়ণগঞ্জে বসবাসরত রংপুর বিভাগীয় বিএনপি সমর্থক গোস্ঠী নেতারা বলেন, এই দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরন করে।

আমরা অন্তবর্তী সরকারের কাছে এই মামলা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে নীলফমারী জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি, নীলফমারী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জনাব ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন এর মুক্তির দাবি জানাই।

বক্তারা আরো বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্র মূলক মামলা তাকে মিথ্যা আসামী বানিয়ে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। আমরা চাই দ্রুত যেন তার মুক্তি দেওয়া হয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল
  • কেউ অপকর্ম করতে চাইলে সরাসরি ধরে পুলিশের কাছে দেবেন: মির্জা ফখরুল