নবীগঞ্জে মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের বালুর ট্রাক আটকে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ছাত্রলীগের এক নেতা ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। রোববারের ওই ঘটনায় প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ অংশে ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ করছে মা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কাজের জন্য বরাদ্দকৃত বালু আনা হয় জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ থেকে। ঘটনার দিন এ কাজের জন্য কুশিয়ারা নদী থেকে উত্তোলন করা সাত ট্রাক বালু আসছিল নবীগঞ্জে। ঘটনার দিন সকালে সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি বাইপাস মহাসড়ক পার হয়ে কামারগাঁওয়ের মুচিবাড়ি এলাকায় পৌঁছলে ট্রাকগুলো আটক করেন উপজেলার ৪ নম্বর দীঘলবাক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হক ও তাঁর লোকজন। এ সময় তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টদের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে নবীগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় সেগুলো উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগে মা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক সাঈদ আলী জানান,  মুচিবাড়ির ব্রিজ-সংলগ্ন রাস্তায় ট্রাকগুলো আটকে ১০ লাখ টাকার জন্য চাপ দেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও তাঁর ৭ থেকে ৮ অনুসারী। তাদের মধ্যে ছিলেন– স্বস্তিপুর গ্রামের জগলু মিয়া, কামারগাঁওয়ের মুকিদ মিয়া ও শিপন মিয়া, বহরমপুরের রউফ মিয়া এবং নগরকান্দির জয়নাল মিয়া। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা হক ও তাঁর লোকজন ট্রাকের সঙ্গে থাকা লোকজনকে মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুর করে বলেও জানান সাঈদ আলী।
এ ব্যাপারে দীঘলবাক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হক জানান, চাঁদা আদায়ের জন্য তারা ট্রাকগুলো আটক করেননি। নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত বালু বহন করায় সেগুলো আটক করা হয়।
মা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমান জানান, বৈধভাবে মহাসড়কের কাজের জন্য বালু আনা হয়েছে। একটি চক্র অনেক দিন ধরেই বালুর ট্রাক আটকে চাঁদাবাজি করে আসছে। 
নবীগঞ্জ থানার ওসি কামাল হোসেন জানান,  ট্রাকগুলো উদ্ধারের পর গন্তব্যে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ