ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে (ইপিএল) এই সপ্তাহের রাউন্ডে দুটি ম্যাচে গোল উৎসব হয়েছে। একটি নটিংহ্যাম ফরেস্ট-ব্রাইটন ম্যাচে অন্যটি আর্সেনাল-ম্যানসিটি মহারণে। এখন যে কেউ বলতেই পারেন- এমন তো হরহামেশাই ঘটে ইপিএলে। সত্য, তবে এই দুই বড় স্কোরের ম্যাচ স্মরণ করিয়ে দিয়েছে কিছু পুরোনো স্মৃতি। ফরেস্ট ভাগ বসিয়েছে ২৭ বছরের পুরোনো এক রেকর্ডে। অন্যদিকে রেকর্ড না হলেও বর্তমান মালিকানায়, দেড় যুগের মাঝে সবচেয়ে বাজে অ্যাওয়ে ম্যাচটা খেলেছে গার্দিওলার সিটি।

এই মৌসুমে ফুটবলবোদ্ধারা বোর্নমাউথকে ‘বড় দলগুলোর ঘাতক’ বলে মর্যাদা দিলেও মূল চমকটা দেখিয়েছে নুনো সান্তোর ফরেস্ট। আগের মৌসুমে (২০২৩-২৪) অবনমন অঞ্চলের ঠিক একধাপ উপরে শেষ করা দলটি এবার পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে আছে ২৪ ম্যাচ খেলে। সমান ম্যাচে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে আছে আর্সেনাল। শীর্ষে থাকা লিভারপুল এক ম্যাচ কম খেলে ৫৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে।

 

ইপিএলে ২৩ নম্বর রাউন্ডের ম্যাচে বোর্নমাউথের বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে হেরেছিল ফরেস্ট। এরপর শনিবারের (১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) ম্যাচে ব্রাইটনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে নুনো সান্তোর শিষ্যরা। তাতেই ফরেস্ট স্পর্শ করল একটি রেকর্ড। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে কোন দল ৫ গোলের ব্যবধানে হেরে পরের ম্যাচেই একই ব্যবধানে জেতার ঘটনা এই নিয়ে দ্বিতীয়বার। এর আগে ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে শেফিল্ড ইউনাইটেড এই রেকর্ড প্রথম গড়েছিল। তারা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডর বিপক্ষে ৬-১ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হওয়ার পরের ম্যাচে বোল্টন ওয়ান্ডার্সের বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে জয় লাভ করে।

অন্যদিকে পেপ গার্দিওলা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে মৌসম পার করছেন। পারিবারিক জীবনে অশান্তিতে থাকা স্প্যানিশ কোচ দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত ৮ বছরে ম্যানসিটি হারলেই বড় ঘটনা হতো। জয়টা রুটিন বানিয়ে ফেলেছিল তারা। সেই সিটি সবশেষ ২২ ম্যাচের মধ্যে কিনা হেরেছে ১০টিতে; ড্র করেছে ৪ ম্যাচ। জয় মাত্র ৮ ম্যাচে।

কঠিন সময়ের মধ্যে থাকা সিটি রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে আর্সেনালের বিপক্ষে। প্রায় ১৭ বছরের মধ্যে এই প্রথম প্রিমিয়ার লিগের কোনো অ্যাওয়ে ম্যাচে ৫ গোল হজম করল সিটি। এর আগে সবশেষ তাদের এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল ২০০৮ সালের মে মাসে। মিডলসবরোর বিপক্ষে তারা হেরেছিল ৮-১ গোলে। এরপর সেই বছরের আগস্টে আবু দুবাই ইউনাইটেড গ্রুপ সিটির মালিকানা কিনে নিলে হঠাৎ করেই ছোট দলের তকমা ঝেড়ে বড় দলে পরিণত হয় তারা। 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবধ ন র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল

বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।

যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।

শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।

এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।

পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।

শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।

বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।

গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলাম

স্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।

আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাকিস্তানি খেলোয়াড়ের থ্রো লাগল আম্পায়ারের মাথায়, এরপর যা হলো
  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার