Samakal:
2025-05-01@11:43:58 GMT

গবাদি পশু ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট

Published: 3rd, February 2025 GMT

গবাদি পশু ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট

বিশ্বে যেসব দেশ চরম জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছে, বাংলাদেশ সেখানে অষ্টম। জলবায়ু ঝুঁকির সুস্পষ্ট লক্ষণ হিসেবে দেশে ‘সামার হিট ওয়েভ’, ‘ফ্লাশ ফ্লাড ও শহরাঞ্চলে বন্যা’, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড় ও ঘন ঘন বজ্রপাত, ভূমিধস ও দীর্ঘ সময় খরা পরিলক্ষিত। জলবায়ুর এসব পরিবর্তনে প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ই দায়ী। তবে মানুষের ভূমিকা তুলনামূলক বেশি। মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ একদিকে যেমন প্রাইম ভূমিকা পালন করছে, ঠিক তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ইনফ্লুয়েন্সার যথাক্রমে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড নামে ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাস। এক কেজি মাংস বা দুধ উৎপাদন করতে একটি প্রাণী যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে নির্গমন করে তাকে কার্বন ফুটপ্রিন্ট বলে। গবাদি পশু যেমন– গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল যখন ঘাস খায়, তখন তাদের অন্ত্রের গাজন প্রক্রিয়ায় বাই-প্রডাক্ট হিসেবে সরাসরি পশুর মুখ ও এনাস দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়, যা ‘অ্যান্টারিক মিথেন’ নামে অধিক পরিচিত। বায়ুমণ্ডলে নির্গত মিথেন গ্যাস ২৫ বছর পর্যন্ত অ্যাক্টিভ থাকে এবং এক কেজি মিথেন গ্যাস প্রায় ৮৪ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য। বায়ুমণ্ডলে নির্গত নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস ২৯৮ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে এবং এক কেজি নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস প্রায় ২৯৮ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য। শক্তির দিক দিয়ে নাইট্রাস অক্সাইড বেশি হলেও তা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কারণ এ গ্যাসের উৎস হলো গোবর। কিন্তু মিথেন গ্যাস সরাসরি বায়ুমণ্ডলে অ্যাড হওয়ায় তা জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গাভি থেকে এক লিটার দুধ উৎপাদনের ফলে প্রায় ২ ড্রাম সমপরিমাণ পিউর মিথেন গ্যাস বের হয়।
গবাদি পশুকে সবুজ ঘাস বা শুকনা খড় জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ালে তা বেশিক্ষণ পাকস্থলীতে থাকে বিধায় মিথেন গ্যাস বেশি উৎপাদিত হয়। অন্যদিকে যেসব খাবার পেটে কম সময় থাকে, সেগুলো খাওয়ালে এ গ্যাস হয় না। গবাদি পশুর প্রকারভেদে মহিষ বেশি পরিমাণে ওই গ্যাস উৎপন্ন করে। তার পরের স্থানে আছে গরু, ছাগল ও ভেড়া। তবে পোলট্রি ও শূকরের অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদনে ভূমিকা নেই। লোকাল বা দেশীয় গরু তাদের ক্রস বা পিউর জাতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ অ্যান্টারিক মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে। 

মোটা দাগে তিনটি উপায়ে অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদন কমানো সম্ভব। প্রথমত, খাবারের ধরন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া ভিন্নতর করা। যেহেতু পশুকে সবুজ ঘাস বা খড় খাওয়ালে পেটে এসিড বেড়ে যায়, তাই হোল ক্রপ ও কনসেনট্রেড খাওয়ালে পেটের পরিবেশ অ্যালকালাইন হয়। এতে অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদন থাকে শূন্যের কোঠায়। উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার দিলে পেটে প্রচুর পরিমাণে ফ্রি হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা পেটের কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় মিথেন গ্যাস তৈরি করে। তাই কিছু গাছপাতা যেমন– শজনে, তেঁতুল ও কাঁঠাল গবাদি পশুকে খাওয়ালে অ্যান্টারিক মিথেন গ্যাস তৈরি হয় না। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সবুজ ঘাস, খড়, গাছপাতা এবং কিছু পরিমাণ কনসেনট্রেড মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ করলে মিথেনের সমস্যা দূর হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পেটের ভেতরকার ফ্রি হাইড্রোজেন ট্র্যাপ করার জন্য নাইট্রেটস, সালফেটস, অর্গানিক এসিড, আইয়োনফোরস জাতীয় বিভিন্ন উপাদান খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। পরীক্ষামূলক অস্ট্রেলিয়ায় বিশেষ টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে, যাতে এটি প্রয়োগে মিথেন গ্যাস কমানো যায়। ইদানীং সামুদ্রিক শৈবাল থেকে বিশেষ ধরনের পাউডার তৈরি করা হয়েছে, যা খাওয়ালে ৮০ শতাংশ মিথেন হ্রাস পায়। সব শেষে গবাদি পশুর জাত নির্বাচন জরুরি হয়ে পড়েছে। 

ড.

মো. আবুল কালাম আজাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ম ণ জলব য় উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্যে ভারতে ক্ষোভ, কী বলেছেন তিনি

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সাধারণত আলোচনার কেন্দ্রে আসেন না। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছেন তিনি—শুধু পাকিস্তানে নয়, সীমানা পেরিয়ে ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন কূটনৈতিক কেন্দ্রেও।

ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর কয়েক দিন আগে কাশ্মীর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন আসিম মুনির। তাঁর এসব মন্তব্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান ও আঞ্চলিক উত্তেজনায় তাদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু তারা এটির একেক অংশ শাসন করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে এ ভূখণ্ড।

জেনারেল মুনিরের বক্তব্য যদিও প্রত্যক্ষভাবে পেহেলগামের হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, তবু তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এটিকে বেশি আগ্রাসী মনোভাবের হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল আসিম মুনিরকে বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়। দেশটির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সরকারকে ক্ষমতায় বসানো ও অপসারণে দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনী নানা ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। এখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী প্রতিবেশী এ দুই দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছেন তিনি।

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন জেনারেল মুনির। দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁকে প্রকাশ্যে তেমন কথা বলতে শোনা যায়নি। তবে তাঁর একটি বক্তব্য ব্যাপকভাবে মনোযোগ কেড়েছে।

আরও পড়ুনভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট২৯ এপ্রিল ২০২৫

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

জেনারেল মুনিরের এ বক্তব্যের সঙ্গে পেহেলগামে হামলার কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকতে পারে। কেননা পাকিস্তানের নেতারা অনেক বছর ধরেই এমন ধরনের আদর্শিক বক্তব্য–বিবৃতি দিয়ে আসছেন।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার স্থলে ছড়িয়ে আছে চেয়ার–টেবিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ