বিশ্বে যেসব দেশ চরম জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছে, বাংলাদেশ সেখানে অষ্টম। জলবায়ু ঝুঁকির সুস্পষ্ট লক্ষণ হিসেবে দেশে ‘সামার হিট ওয়েভ’, ‘ফ্লাশ ফ্লাড ও শহরাঞ্চলে বন্যা’, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড় ও ঘন ঘন বজ্রপাত, ভূমিধস ও দীর্ঘ সময় খরা পরিলক্ষিত। জলবায়ুর এসব পরিবর্তনে প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ই দায়ী। তবে মানুষের ভূমিকা তুলনামূলক বেশি। মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ একদিকে যেমন প্রাইম ভূমিকা পালন করছে, ঠিক তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ইনফ্লুয়েন্সার যথাক্রমে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড নামে ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাস। এক কেজি মাংস বা দুধ উৎপাদন করতে একটি প্রাণী যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে নির্গমন করে তাকে কার্বন ফুটপ্রিন্ট বলে। গবাদি পশু যেমন– গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল যখন ঘাস খায়, তখন তাদের অন্ত্রের গাজন প্রক্রিয়ায় বাই-প্রডাক্ট হিসেবে সরাসরি পশুর মুখ ও এনাস দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়, যা ‘অ্যান্টারিক মিথেন’ নামে অধিক পরিচিত। বায়ুমণ্ডলে নির্গত মিথেন গ্যাস ২৫ বছর পর্যন্ত অ্যাক্টিভ থাকে এবং এক কেজি মিথেন গ্যাস প্রায় ৮৪ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য। বায়ুমণ্ডলে নির্গত নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস ২৯৮ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে এবং এক কেজি নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস প্রায় ২৯৮ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য। শক্তির দিক দিয়ে নাইট্রাস অক্সাইড বেশি হলেও তা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কারণ এ গ্যাসের উৎস হলো গোবর। কিন্তু মিথেন গ্যাস সরাসরি বায়ুমণ্ডলে অ্যাড হওয়ায় তা জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গাভি থেকে এক লিটার দুধ উৎপাদনের ফলে প্রায় ২ ড্রাম সমপরিমাণ পিউর মিথেন গ্যাস বের হয়।
গবাদি পশুকে সবুজ ঘাস বা শুকনা খড় জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ালে তা বেশিক্ষণ পাকস্থলীতে থাকে বিধায় মিথেন গ্যাস বেশি উৎপাদিত হয়। অন্যদিকে যেসব খাবার পেটে কম সময় থাকে, সেগুলো খাওয়ালে এ গ্যাস হয় না। গবাদি পশুর প্রকারভেদে মহিষ বেশি পরিমাণে ওই গ্যাস উৎপন্ন করে। তার পরের স্থানে আছে গরু, ছাগল ও ভেড়া। তবে পোলট্রি ও শূকরের অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদনে ভূমিকা নেই। লোকাল বা দেশীয় গরু তাদের ক্রস বা পিউর জাতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ অ্যান্টারিক মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
মোটা দাগে তিনটি উপায়ে অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদন কমানো সম্ভব। প্রথমত, খাবারের ধরন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া ভিন্নতর করা। যেহেতু পশুকে সবুজ ঘাস বা খড় খাওয়ালে পেটে এসিড বেড়ে যায়, তাই হোল ক্রপ ও কনসেনট্রেড খাওয়ালে পেটের পরিবেশ অ্যালকালাইন হয়। এতে অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদন থাকে শূন্যের কোঠায়। উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার দিলে পেটে প্রচুর পরিমাণে ফ্রি হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা পেটের কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় মিথেন গ্যাস তৈরি করে। তাই কিছু গাছপাতা যেমন– শজনে, তেঁতুল ও কাঁঠাল গবাদি পশুকে খাওয়ালে অ্যান্টারিক মিথেন গ্যাস তৈরি হয় না। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সবুজ ঘাস, খড়, গাছপাতা এবং কিছু পরিমাণ কনসেনট্রেড মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ করলে মিথেনের সমস্যা দূর হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পেটের ভেতরকার ফ্রি হাইড্রোজেন ট্র্যাপ করার জন্য নাইট্রেটস, সালফেটস, অর্গানিক এসিড, আইয়োনফোরস জাতীয় বিভিন্ন উপাদান খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। পরীক্ষামূলক অস্ট্রেলিয়ায় বিশেষ টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে, যাতে এটি প্রয়োগে মিথেন গ্যাস কমানো যায়। ইদানীং সামুদ্রিক শৈবাল থেকে বিশেষ ধরনের পাউডার তৈরি করা হয়েছে, যা খাওয়ালে ৮০ শতাংশ মিথেন হ্রাস পায়। সব শেষে গবাদি পশুর জাত নির্বাচন জরুরি হয়ে পড়েছে।
ড.
বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুর গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা, নির্বাচনী আচরণবিধির সংশোধন চায় ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা এবং নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনে নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের কাছে এ স্মারকলিপি দেন ছাত্রদলের নেতারা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আসন্ন জকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন গোষ্ঠী জকসু সংবিধি এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ। ন্যায্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিতে আমাদের অনুরোধ, ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় প্রত্যেক ভোটারের ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচনে অমোচনীয় কালি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং স্বচ্ছ, নাম্বারযুক্ত ব্যালট বক্স রাখা আবশ্যক।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ব্যালট ছাপার সংখ্যা, ভোট প্রদানকারীর সংখ্যা এবং নষ্ট ব্যালটের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। মিডিয়া ট্রায়াল বা ভুল তথ্য প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার অনুমোদিত সব মিডিয়াকে নির্বাচনকালীন সময়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ডাকসুর তফসিল ঘোষণার ৪১ দিন, চাকসুর ৪৪ দিন, রাকসুর ৮০ দিন এবং জাকসুর তফসিল ঘোষণার ৩১ দিন পর নির্বাচন হয়েছে। যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এ ছাড়া বাকি চার বিশ্ববিদ্যালয়ের তফসিল ঘোষণার সময় ও নির্বাচনের মধ্যবর্তী পার্থক্য বিবেচনা করে জকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠু একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, এজন্য ছাত্রদল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। আশা করছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে।’