Samakal:
2025-11-03@09:32:27 GMT

গবাদি পশু ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট

Published: 3rd, February 2025 GMT

গবাদি পশু ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট

বিশ্বে যেসব দেশ চরম জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছে, বাংলাদেশ সেখানে অষ্টম। জলবায়ু ঝুঁকির সুস্পষ্ট লক্ষণ হিসেবে দেশে ‘সামার হিট ওয়েভ’, ‘ফ্লাশ ফ্লাড ও শহরাঞ্চলে বন্যা’, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড় ও ঘন ঘন বজ্রপাত, ভূমিধস ও দীর্ঘ সময় খরা পরিলক্ষিত। জলবায়ুর এসব পরিবর্তনে প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ই দায়ী। তবে মানুষের ভূমিকা তুলনামূলক বেশি। মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ একদিকে যেমন প্রাইম ভূমিকা পালন করছে, ঠিক তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ইনফ্লুয়েন্সার যথাক্রমে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড নামে ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাস। এক কেজি মাংস বা দুধ উৎপাদন করতে একটি প্রাণী যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে নির্গমন করে তাকে কার্বন ফুটপ্রিন্ট বলে। গবাদি পশু যেমন– গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল যখন ঘাস খায়, তখন তাদের অন্ত্রের গাজন প্রক্রিয়ায় বাই-প্রডাক্ট হিসেবে সরাসরি পশুর মুখ ও এনাস দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়, যা ‘অ্যান্টারিক মিথেন’ নামে অধিক পরিচিত। বায়ুমণ্ডলে নির্গত মিথেন গ্যাস ২৫ বছর পর্যন্ত অ্যাক্টিভ থাকে এবং এক কেজি মিথেন গ্যাস প্রায় ৮৪ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য। বায়ুমণ্ডলে নির্গত নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস ২৯৮ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে এবং এক কেজি নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস প্রায় ২৯৮ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য। শক্তির দিক দিয়ে নাইট্রাস অক্সাইড বেশি হলেও তা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কারণ এ গ্যাসের উৎস হলো গোবর। কিন্তু মিথেন গ্যাস সরাসরি বায়ুমণ্ডলে অ্যাড হওয়ায় তা জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গাভি থেকে এক লিটার দুধ উৎপাদনের ফলে প্রায় ২ ড্রাম সমপরিমাণ পিউর মিথেন গ্যাস বের হয়।
গবাদি পশুকে সবুজ ঘাস বা শুকনা খড় জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ালে তা বেশিক্ষণ পাকস্থলীতে থাকে বিধায় মিথেন গ্যাস বেশি উৎপাদিত হয়। অন্যদিকে যেসব খাবার পেটে কম সময় থাকে, সেগুলো খাওয়ালে এ গ্যাস হয় না। গবাদি পশুর প্রকারভেদে মহিষ বেশি পরিমাণে ওই গ্যাস উৎপন্ন করে। তার পরের স্থানে আছে গরু, ছাগল ও ভেড়া। তবে পোলট্রি ও শূকরের অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদনে ভূমিকা নেই। লোকাল বা দেশীয় গরু তাদের ক্রস বা পিউর জাতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ অ্যান্টারিক মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে। 

মোটা দাগে তিনটি উপায়ে অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদন কমানো সম্ভব। প্রথমত, খাবারের ধরন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া ভিন্নতর করা। যেহেতু পশুকে সবুজ ঘাস বা খড় খাওয়ালে পেটে এসিড বেড়ে যায়, তাই হোল ক্রপ ও কনসেনট্রেড খাওয়ালে পেটের পরিবেশ অ্যালকালাইন হয়। এতে অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদন থাকে শূন্যের কোঠায়। উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার দিলে পেটে প্রচুর পরিমাণে ফ্রি হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা পেটের কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় মিথেন গ্যাস তৈরি করে। তাই কিছু গাছপাতা যেমন– শজনে, তেঁতুল ও কাঁঠাল গবাদি পশুকে খাওয়ালে অ্যান্টারিক মিথেন গ্যাস তৈরি হয় না। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সবুজ ঘাস, খড়, গাছপাতা এবং কিছু পরিমাণ কনসেনট্রেড মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ করলে মিথেনের সমস্যা দূর হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পেটের ভেতরকার ফ্রি হাইড্রোজেন ট্র্যাপ করার জন্য নাইট্রেটস, সালফেটস, অর্গানিক এসিড, আইয়োনফোরস জাতীয় বিভিন্ন উপাদান খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। পরীক্ষামূলক অস্ট্রেলিয়ায় বিশেষ টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে, যাতে এটি প্রয়োগে মিথেন গ্যাস কমানো যায়। ইদানীং সামুদ্রিক শৈবাল থেকে বিশেষ ধরনের পাউডার তৈরি করা হয়েছে, যা খাওয়ালে ৮০ শতাংশ মিথেন হ্রাস পায়। সব শেষে গবাদি পশুর জাত নির্বাচন জরুরি হয়ে পড়েছে। 

ড.

মো. আবুল কালাম আজাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ম ণ জলব য় উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক

গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।

জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’

অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।

জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ