Samakal:
2025-07-31@21:47:24 GMT

গবাদি পশু ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট

Published: 3rd, February 2025 GMT

গবাদি পশু ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট

বিশ্বে যেসব দেশ চরম জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছে, বাংলাদেশ সেখানে অষ্টম। জলবায়ু ঝুঁকির সুস্পষ্ট লক্ষণ হিসেবে দেশে ‘সামার হিট ওয়েভ’, ‘ফ্লাশ ফ্লাড ও শহরাঞ্চলে বন্যা’, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড় ও ঘন ঘন বজ্রপাত, ভূমিধস ও দীর্ঘ সময় খরা পরিলক্ষিত। জলবায়ুর এসব পরিবর্তনে প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ই দায়ী। তবে মানুষের ভূমিকা তুলনামূলক বেশি। মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ একদিকে যেমন প্রাইম ভূমিকা পালন করছে, ঠিক তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ইনফ্লুয়েন্সার যথাক্রমে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড নামে ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাস। এক কেজি মাংস বা দুধ উৎপাদন করতে একটি প্রাণী যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে নির্গমন করে তাকে কার্বন ফুটপ্রিন্ট বলে। গবাদি পশু যেমন– গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল যখন ঘাস খায়, তখন তাদের অন্ত্রের গাজন প্রক্রিয়ায় বাই-প্রডাক্ট হিসেবে সরাসরি পশুর মুখ ও এনাস দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়, যা ‘অ্যান্টারিক মিথেন’ নামে অধিক পরিচিত। বায়ুমণ্ডলে নির্গত মিথেন গ্যাস ২৫ বছর পর্যন্ত অ্যাক্টিভ থাকে এবং এক কেজি মিথেন গ্যাস প্রায় ৮৪ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য। বায়ুমণ্ডলে নির্গত নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস ২৯৮ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে এবং এক কেজি নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস প্রায় ২৯৮ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য। শক্তির দিক দিয়ে নাইট্রাস অক্সাইড বেশি হলেও তা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কারণ এ গ্যাসের উৎস হলো গোবর। কিন্তু মিথেন গ্যাস সরাসরি বায়ুমণ্ডলে অ্যাড হওয়ায় তা জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গাভি থেকে এক লিটার দুধ উৎপাদনের ফলে প্রায় ২ ড্রাম সমপরিমাণ পিউর মিথেন গ্যাস বের হয়।
গবাদি পশুকে সবুজ ঘাস বা শুকনা খড় জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ালে তা বেশিক্ষণ পাকস্থলীতে থাকে বিধায় মিথেন গ্যাস বেশি উৎপাদিত হয়। অন্যদিকে যেসব খাবার পেটে কম সময় থাকে, সেগুলো খাওয়ালে এ গ্যাস হয় না। গবাদি পশুর প্রকারভেদে মহিষ বেশি পরিমাণে ওই গ্যাস উৎপন্ন করে। তার পরের স্থানে আছে গরু, ছাগল ও ভেড়া। তবে পোলট্রি ও শূকরের অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদনে ভূমিকা নেই। লোকাল বা দেশীয় গরু তাদের ক্রস বা পিউর জাতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ অ্যান্টারিক মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে। 

মোটা দাগে তিনটি উপায়ে অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদন কমানো সম্ভব। প্রথমত, খাবারের ধরন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া ভিন্নতর করা। যেহেতু পশুকে সবুজ ঘাস বা খড় খাওয়ালে পেটে এসিড বেড়ে যায়, তাই হোল ক্রপ ও কনসেনট্রেড খাওয়ালে পেটের পরিবেশ অ্যালকালাইন হয়। এতে অ্যান্টারিক মিথেন উৎপাদন থাকে শূন্যের কোঠায়। উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার দিলে পেটে প্রচুর পরিমাণে ফ্রি হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা পেটের কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় মিথেন গ্যাস তৈরি করে। তাই কিছু গাছপাতা যেমন– শজনে, তেঁতুল ও কাঁঠাল গবাদি পশুকে খাওয়ালে অ্যান্টারিক মিথেন গ্যাস তৈরি হয় না। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সবুজ ঘাস, খড়, গাছপাতা এবং কিছু পরিমাণ কনসেনট্রেড মিলিয়ে খাদ্য সরবরাহ করলে মিথেনের সমস্যা দূর হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পেটের ভেতরকার ফ্রি হাইড্রোজেন ট্র্যাপ করার জন্য নাইট্রেটস, সালফেটস, অর্গানিক এসিড, আইয়োনফোরস জাতীয় বিভিন্ন উপাদান খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। পরীক্ষামূলক অস্ট্রেলিয়ায় বিশেষ টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে, যাতে এটি প্রয়োগে মিথেন গ্যাস কমানো যায়। ইদানীং সামুদ্রিক শৈবাল থেকে বিশেষ ধরনের পাউডার তৈরি করা হয়েছে, যা খাওয়ালে ৮০ শতাংশ মিথেন হ্রাস পায়। সব শেষে গবাদি পশুর জাত নির্বাচন জরুরি হয়ে পড়েছে। 

ড.

মো. আবুল কালাম আজাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ম ণ জলব য় উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে সুনামির সতর্কতা

রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় কামচাতকা উপদ্বীপে গতকাল বুধবার ৮ দশমিক ৮ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। অল্প সময় ব্যবধানে সেখানে আরও বেশ কয়েকটি পরাঘাত অনুভূত হয়। এরপর উপদ্বীপটির আশপাশের অঞ্চলে ৫ মিটার বা ১৬ ফুট পর্যন্ত সুনামি আঘাত হানে।

রাশিয়ার কামচাতকা উপদ্বীপ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। ফলে এই অঞ্চলে উৎপন্ন ভূমিকম্পের কারণে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলসহ প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রায় সব দেশ ও অঞ্চল সুনামি–সম্পর্কিত সতর্কতা প্রত্যাহার করলেও কোথাও কোথাও বহাল রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্যমতে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ভূপৃষ্ঠের ১৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার গভীরে। তুলনামূলকভাবে কম গভীরতায় এটি উৎপন্ন হয়েছে। এর কেন্দ্র ছিল পেট্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি শহর থেকে ১১৯ কিলোমিটার (৭৪ মাইল) পূর্ব-দক্ষিণপূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশ। শহরটির জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার।

অবশ্য আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেসের ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্যমতে, ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় পেট্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি থেকে প্রায় ১৩৬ কিলোমিটার দক্ষিণ–পূর্বে অনুভূত হয়েছে। ১৯৫২ সালের পর, তথা ৭৩ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।

ভূমিকম্পের কারণে জাপান থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন, অরেগন, আলাস্কা, ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের নানা অঞ্চল এবং হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে নানা মাত্রায় সুনামির ঢেউ দেখা গেছে। তা ছাড়া কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, চিলি, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, সলোমন আইল্যান্ডস, ভানুয়াতুসহ প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে হয়তো ‘সুনামি–সতর্কতা’ নয়তো ‘সুনামি অ্যাডভাইজারি’ বা ‘সুনামি ওয়াচ’ জারি করা হয়েছিল।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুনামি অ্যাডভাইজারি জারি আছে। চিলির পাসকুয়া দ্বীপে জারি আছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।

পেট্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি শহরের বাসিন্দা ইয়ারোস্লাভ (২৫) রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি বাসা ছেড়ে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল দেয়ালগুলো যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়বে। কম্পনটা অন্তত টানা ৩ মিনিট স্থায়ী ছিল।’

ভূমিকম্পের কারণে কামচাতকা উপদ্বীপের নানা স্থানে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। অনেকে আহত হয়েছেন। তবে নিহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্পের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে সুনামি আঘাত হানার পরপরই জাপানের পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা প্রয়োজন হয়নি।

সুনামির পরপর জাপানের পূর্ব উপকূলে ছোট ছোট ঢেউ আঘাত হানলেও ধীরে ধীরে তা বড় হতে থাকে। এসব ঢেউ সর্বোচ্চ ৩ মিটার বা ৯ দশমিক ৮ ফুট পর্যন্ত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে গতকাল দেশটির উপকূলের আছড়ে পড়া সবচেয়ে বড় ঢেউ ছিল ১ দশমিক ৩ মিটার বা ৪ দশমিক ৩ ফুট।

টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সুনামির সতর্কতা জারির পর জাপানের ফুকুশিমার দাই-ইচি ও ফুকুশিমা দাইনি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালের মার্চে জাপানে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ও এর জেরে সৃষ্ট সুনামির আঘাতে ফুকুশিমা দাই-ইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এটিকে অন্যতম বড় পারমাণবিক বিপর্যয় হিসেবে দেখা হয়।

জাপানের মন্ত্রিসভার প্রধান সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেছেন, হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে অস্বাভাবিক কোনো কিছু দেখা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি–সতর্কতা কেন্দ্রের তথ্যমতে, সুনামির কারণে হাওয়াই উপকূলে ১ দশমিক ৭ মিটার (৫ দশমিক ৫ ফুট) ঢেউ আছড়ে পড়েছে। সুনামির পরপরই সেখানে সুনামি–সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে তা কমিয়ে সুনামি অ্যাডভাইজারি স্তরে নামিয়ে আনা হয়।

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত

পরে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া জানিয়েছে, শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর দেশটির কামচাতকা উপদ্বীপের ক্লিউচেভস্কয় আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। রাশিয়ার একাডেমি অব সায়েন্সের ভূ-ভৌগোলিক পরিষেবা বিভাগের স্থানীয় শাখা এই তথ্য জানিয়েছে।

ক্লিউচেভস্কয় বিশ্বের সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলোর একটি। এর উচ্চতা ৪ হাজার ৭৫০ মিটার বা ১৫ হাজার ৫৮৪ ফুট। ১৭০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এতে ৫০ বারের বেশি অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে সুনামির সতর্কতা