ছবিমুক্ত এনআইডি কার্ড চালুর দাবিতে নারীদের বিক্ষোভ
Published: 5th, February 2025 GMT
শুধু ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে ছবিমুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার দাবিতে রাজশাহীতে সমাবেশ করেছেন পর্দাশীল নারীরা। মহিলা আনজুমানের রাজশাহী জেলা ও মহানগর মজলিসের ব্যানারে আজ বুধবার দুপুরে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিলও বের করেন নারীরা।
এর আগে সমাবেশে পর্দাশীল নারীরা বলেন, ‘শুধুমাত্র পরিপূর্ণ পর্দা করার কারণে পর্দাশীল নারীরা বৈষম্যের শিকার। গত ১৬ বছর ধরে অসংখ্য পর্দাশীল নারীর নাগরিকত্ব আটকে রাখা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও করা হচ্ছে বঞ্চিত। পরিচয় যাচাইয়ে জোর করে বেগানা পুরুষের সামনে চেহারা খুলতে বাধ্য করা হচ্ছে। পর্দানশীল নারীরা এসব হেনস্তার অবসান চান। চেহারার বদলে তারা ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে পরিচয় যাচাইয়ের দাবি তোলেন।
তারা বলেন, একজন নারী ছবি তুললে দুটি গুনাহ হয়। একটি ছবি তোলার, অন্যটি বেপর্দা হওয়ার গুনাহ। আবার ওই ছবিটি পরবর্তীতে যতজন বেগানা পুরুষ দেখবে; বেপর্দা হওয়ার গুনাহ তত বাড়তেই থাকবে। এমনকি মৃত্যুর পরও ওই ছবির কারণে বেপর্দার গুনাহ জারি থাকবে। পর্দাশীল নারীরা সেই গুনাহ থেকে বাঁচতে চান।
তারা বলেন, রাষ্ট্রে মৌলিক অধিকার আটকে রেখে পর্দাশীল নারীদের গুনাহ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা তার ধর্মীয় বা দ্বীনি অধিকার লঙ্ঘন। আবার একজন পর্দানশীন নারী তার চেহারা কাউকে দেখাতে চান না, এটা তার গোপনীয়তার অধিকার। কিন্তু জোর করে চেহারা দেখাতে বাধ্য করা; তার গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন। বিক্ষোভকারী নারীরা এর অবসান চান।
সমাবেশে পর্দাশীল নারীরা তিনটি দাবি পেশ করেন। সেগুলো হলো- বিগত ১৬ বছর যে সমস্ত সাবেক ইসি কর্মকর্তা পর্দাশীল নারীদের নাগরিকত্ব আটকে রেখে মানবাধিকার বঞ্চিত করেছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা, পর্দাশীল নারীদের ধর্মীয় ও গোপনীয়তার অধিকার অক্ষুন্ন রেখে অবিলম্বে এনআইডি ও শিক্ষা অধিকার প্রদান করা; সব ক্ষেত্রে পরিচয় শনাক্তে চেহারা ও ছবি মেলানোর পদ্ধতি বাতিল করে আধুনিক ফিঙ্গার প্রিন্ট যাচাই পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করা এবং পর্দানশীন নারীদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার সময় কোনো পুরুষ নয়, নারী সহকারী বাধ্যতামূলকভাবে রাখার ব্যবস্থা করা।
সমাবেশ শেষে নারীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং জেলা ও বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি দেন। কর্মসূচিতে কয়েক শ’ পর্দাশীল নারী উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনআইড স ব পর দ শ ল ন র র
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।