ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের আলোচনায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে ‘জুলাই সনদ’ হবে, সেটা বাস্তবায়নের ওপর আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আজ বুধবার তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন শফিকুল আলম।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, রাজনৈতিক দল আগে নির্বাচনের কথা বলছে। সরকারের পক্ষ থেকে কি এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে যে এই সংস্কারগুলো করতেই হবে, তারপর নির্বাচন। নাকি পুরোটাই রাজনৈতিক দল বা অন্যদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।

জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ছয়টি প্রধান সংস্কার কমিশন সংস্কারের যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলো নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন করেছে। এই কমিশনের প্রধান হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা নিজেই। ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বাকি পাঁচটি কমিশনের প্রধানেরা এটার সদস্য। এই ঐকমত্য কমিশন ছয় কমিশনের প্রতিবেদনগুলো নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবে।

প্রেস সচিব বলেন, ‘এই ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে কতটুকু সংস্কার খুব দ্রুত করতে হবে, কতটুকু পরে করা যাবে, কোনটা করার জন্য কনস্টিটিউশনাল অ্যামেন্ডমেন্ড (সংবিধান সংশোধন) দরকার, আবার কিছু কিছু সংস্কার আছে এটা ইমিডিয়েটলি (তাৎক্ষণিকভাবে) মন্ত্রণালয় করে দিতে পারে, সেটার জন্য আসলে কনস্টিটিউশনাল রিফর্মের প্রয়োজন হয় না, এমনকি রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সেভাবে কথাবার্তা বলার প্রয়োজন না–ও হতে পারে। তবে ওনারা সবার সঙ্গে কথা বলবেন।’

আলোচনার ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে মতৈক্য হবে, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবাই স্বাক্ষর করবে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘সাইন করার পর যেটা দাঁড়াবে, সেটাই হবে জুলাই চার্টার (জুলাই সনদ)। এই জুলাই চার্টারের বাস্তবায়ন এই সরকার কিছু করবে, পরবর্তী সরকারগুলো এসে করবে, এই বাস্তবায়নের আলোকে নির্ভর করবে নির্বাচনটা কি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে হবে নাকি আগামী বছর জুনের মধ্যে হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঐকমত য সরক র র করব

এছাড়াও পড়ুন:

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি

সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) বিষয়ে একমত পোষণ করলেও এটি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে।’

আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেই রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনকে কার্যকর আলোচনা জন্য আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষে সংবিধান সংশোধনের জন্য ‘টু-থার্ডস মেজরিটি’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন—এমন কথা বলা হলেও, বিশ্বজুড়ে এফপিটিপি (যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান) ও পিআর উভয় পদ্ধতিতেই বৈধতা রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।

কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন সময়সীমাকে এনসিপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান দলটির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সিদ্ধান্তগুলো তৎক্ষণাৎ কার্যকর হোক।’ তিনি বলেন, ‘১ শতাংশ ভোট পেলেও যেন একটি দল একজন করে প্রতিনিধি উচ্চকক্ষে পাঠাতে পারে—এটি বহু মতের ও বহু দলের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। আইন পাসের আগে যদি উচ্চকক্ষে আলোচনা হয়, তাহলে ভুলত্রুটি ধরার সুযোগ তৈরি হবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরেও আইন নিয়ে আলোচনা গড়ে উঠবে।’

‘বর্তমানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেভাবে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটা যেন না হয়’ উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব থাকলে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও জনগণের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।’

উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তাঁরা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—তাঁরা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কি না। আমরা বিশ্বাস করি, ১০০ আসনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশ একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে। এতে গণতন্ত্রচর্চার নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’

আলোচনার সময় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আখতার হোসেন। যদিও কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে, তবে সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে বলেও তিনি দাবি করেন।

আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ১০০ আসনের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যেখানে প্রতিনিধিরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। এ কক্ষে নিম্নকক্ষ থেকে পাঠানো বিল সর্বোচ্চ দুই মাস আটকে রাখা যাবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘সিম্পল মেজরিটি’র কথা বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে কমিশনের সভা বর্জন বাম দলগুলোর
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
  • সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের, সদস্য মনোনীত হবেন পিআর পদ্ধতিতে
  • ‘জুলাই সনদের’ দাবিতে শাহবাগে অবরোধ, যানজট
  • ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করলে এনসিবি তা করবে: আখতার হোসেন
  • খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি
  • প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে
  • ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার প্রত্যাশা
  • ‘বাদ দেওয়ার চেষ্টা হলেও ঘোষণাপত্রে নিশ্চিত হবে জুলাই ছাত্র-জনতার ন্যায্য স্বীকৃতি’