Samakal:
2025-08-01@21:10:01 GMT

ছাড়পত্র ছাড়াই চলে ইটভাটা

Published: 6th, February 2025 GMT

ছাড়পত্র ছাড়াই চলে ইটভাটা

রংপুরের পীরগঞ্জে ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ৫৫টি ইটভাটা। আইন অমান্য করে বনবিট এলাকা, বিদ্যালয়, সড়ক ঘেঁষে এসব ভাটা গড়ে উঠলেও ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। এদিকে ভাটায় উর্বর মাটি ব্যবহার হওয়ায় কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালানো হলেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ভাটার কার্যক্রম।

পরিবেশ অধিদপ্তর-রংপুরের সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মণের দাবি, নীতিমালার আলোকে ইটভাটা স্থাপন না করলে আবেদন করলেও ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। এর পরও ছাড়পত্র ছাড়া ইটভাটা চালানোর অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযান চালিয়ে অবৈধ ও পরিবেশসম্মত নয়– এমন সব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলায় ৫৫টি অবৈধ ইটভাটার মধ্যে ৪৪টিতে ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। ১৯০টি ভাটা গড়ে উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে। চৈত্রকোল ইউনিয়নের ৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে পালগড় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শালটি শমস দিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে মকবুল ইসলামের এমইউবি ভাটা; বড়দরগাহ্‌ ইউনিয়নের ডাসারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২শ মিটার দূরে জোয়াদ মণ্ডলের জেবিএফ ভাটা; কুমেদপুর ইউনিয়নের বাজে শিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে রয়েছে সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক সাজু মাস্টারের এবিএস নামে ২টি ভাটা। একই ইউনিয়নে রয়েছে ফারুক মণ্ডলের এফএমবি ভাটা। মদনখালী ইউনিয়নের কাদিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাদিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৫শ মিটারের মধ্যে রয়েছে শহিদুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম মাস্টার এবং মোস্তাফিজার রহমান মানিক মণ্ডলের ভাটা। টুকুরিয়া ইউনিয়নের মোনাইল দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাতুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাতুয়া দাখিল মাদ্রাসা ও ছাতুয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক থেকে দেড়শ গজের মধ্যে সবুজ মিয়ার এসআরএম ইটভাটা। 

বড়আলমপুর ইউনিয়নের তাঁতারপুর গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন আবুল কালামের পিকেবি ভাটা, পীরগঞ্জ সদর ইউনিয়নে মকিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১শ মিটারের মধ্যে দুটি ইটভাটা রয়েছে। শানেরহাট ইউনিয়নের ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে রয়েছে এইচএনআর ভাটা ও জোয়াদ মণ্ডলের জেবিএফ ভাটা। মিঠিপুর ইউনিয়নে একবারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে সাদেকুল ইসলাম সাদার এমএস ব্রিকস, কাশিমপুর দারুল আমান দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩০ মিটার দূরে আনিছার রহমানের পিবিএস নামে ইটভাটা রয়েছে। চতরা ইউনিয়নের চতরা উচ্চ বিদ্যালয়, চতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চতরা আলিম মাদ্রাসা, চতরা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং, চতরা ২০ শয্যা মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মাত্র ২শ গজের মধ্যে রয়েছে অনিক ব্রিক্স। 

এসব ভাটার সামনে নামমাত্র কয়লা রেখে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। ধোঁয়ায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ভাটার কাঠ, মাটি পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ি চলাচলের সময় ধুলাবালি ওড়ে সব সময়। ধুলাবালি ও ধোঁয়ায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ইট, মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত ভারী যানবাহনে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা। ছোট-বড় গর্ত আর মাটি-কাদায় পিচ্ছিল রাস্তায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। 

এমএসপি ইটভাটার মালিক ফারুক মণ্ডল, ইএসপির আফতাবুজ্জামান আতা ও এমএইচবির মিজানুর রহমান জানান, তারা কাঠ খুব একটা ব্যবহার করেন না। তবে আগুন ধরে রাখতে কয়লার পাশাপাশি খড়ির ব্যবহার করতেই হয়। 

কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান জানান, ইটভাটায় কৃষিজমির উর্বর মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব জমিতে অতিরিক্ত খরচ করে চাষাবাদ হলেও কাঙ্ক্ষিত ফসল পাওয়া যায় না। 

বন কর্মকর্তা মিঠু তালুকদার জানান, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষেধ। এর পরও অনেকে ভাটার সামনে কয়লা সাজিয়ে রেখে কাঠ ব্যবহার করছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম জানান, কিছু ভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইট ভ ট প র সরক র ল ইসল ম ছ ড়পত র ইটভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ