আটকে আছে রোপওয়ের কাজ, উৎপাদন বিঘ্নিত
Published: 7th, February 2025 GMT
দেশের প্রথম সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সুনামগঞ্জের ছাতক সিমেন্ট কারখানা। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আনতে সর্বশেষ যে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয় তার একাংশ থমকে আছে। জানা গেছে, ভারত সরকারের দিক থেকে প্রত্যাশিত সহায়তা না পাওয়ায় এখনও শুরু করা যায়নি প্রকল্পের আওতাধীন রোপওয়ের কাজ।
ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি নামে স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন পদ্ধতি ওয়েট প্রসেস থেকে ড্রাই প্রসেসে রূপান্তর করতে একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণে শুরু করা প্রকল্পটির ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রোপওয়ে (রজ্জুপথ) নির্মাণ ও নতুন গ্যাসলাইন স্থাপনের কাজ শেষ না হওয়ায় এ প্রকল্পের কাজের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল চুনাপাথর আমদানির জন্য ভারত অংশের মাত্র ৫ কিলোমিটারে রোপওয়ে নির্মাণকাজ এখনও শুরু করা যায়নি। এ জন্য ভারত সরকারের গড়িমসির কারণকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্রুত এ জটিলতা নিরসনে বিসিআইসি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
১৯৩৭ সালে সুরমা নদীর তীরে ছাতক উপজেলায় আসাম বেঙ্গল সিমেন্ট কোম্পানি নামে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিমেন্ট উৎপাদনকারী কারখানা স্থাপিত হয়। ১৯৪১ সালে ওয়েট প্রসেস অনুসারে বাণিজ্যিকভাবে সিমেন্ট উৎপাদন শুরু করে আসাম বেঙ্গল। শুরু থেকেই কারখানার অধিগ্রহণ করা নিজস্ব টিলার মাটি সংগ্রহ করার পাশাপাশি সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল চুনাপাথর আমদানি শুরু হয় ভারত থেকে। ছাতক সিমেন্ট কারখানাটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশনের (বিসিআইসি) একটি প্রতিষ্ঠান।
দেশের বিপুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ডায়মন্ড ব্র্যান্ড সিমেন্টের উৎপাদন চালু অবস্থায় প্রতি বছর সর্বোচ্চ দেড় লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। পুরোনো এ কোম্পানিটি নিয়মিত চালু রাখতে বিভিন্ন সময় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে একাধিকবার এর সংস্কার কাজ করেছে বিএমআরই।
২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় ভারত চুনাপাথর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও ভারত সরকার কেএলএমসির নিবন্ধন নবায়ন না করায় প্রতিষ্ঠানটিতে চুনাপাথর আসা বন্ধ থাকে। যদিও এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত চুনাপাথর আমদানির চুক্তি ছিল বলে জানিয়েছে ছাতক সিমেন্ট কারখানার কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানির বিষয়টি নির্ভর করছে কেএলএমসির অনুমোদন পাওয়ার ওপর।
সনাতনি উৎপাদন পদ্ধতির এ সিমেন্ট কারখানা উৎপাদন প্রক্রিয়াটি ছিল অনেকটাই ব্যয়বহুল। যে কারণে কারখানাটির উৎপাদন পদ্ধতি ওয়েট প্রসেস থেকে ড্রাই প্রসেসে রূপান্তরকরণে ২০১৬ সালে ৬৬৭ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশন (বিসিআইসি)। পরে সেই প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে ব্যয় ধরা হয় ৮৯০ কোটি টাকা। নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় পরবর্তী সময়ে বরাদ্দ বাড়িয়ে সর্বশেষ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
ড্রাই প্রসেস প্রকল্পের মূল কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চীনের নানজিং সি-হোপ নামে কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে কাজ শুরুর পর মহামারির কারণে এক বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত কারখানার নতুন প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবনা বিসিআইসির মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এদিকে প্রায় দেড় বছর আগেই ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সিমেন্ট মিলস্, পানি বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্র, ক্লিংকার উৎপাদন, সিমেন্ট সাইলো, কনভেয়ার কারখানার প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়। চুনাপাথর ভারত থেকে আমদানির জন্য ১৭ কিলোমিটার রোপওয়ে নির্মাণকাজ নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। সে সময়ে সৌদি আরবের একটি কোম্পানি বিসিআইসির সঙ্গে যৌথভাবে রোপওয়ে কাজ করার একটি চুক্তি করায় ওই জটিলতা সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
কারখানার নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হলেও এটি উৎপাদন চালু করতে না পারায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে হাজার কোটি টাকার নতুন এ কারখানা।
সম্প্রতি দেশের ভেতরে কারখানা থেকে কুমরা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রোপওয়ে নির্মাণকাজ শুরু হলেও ভারত অংশের ৫ কিলোমিটার রোপওয়ের কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল) এতদিন ছাতক অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের মূল লাইন থেকে ছাতক সিমেন্ট কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করত। নতুন কারখানায় যে পরিমাণ গ্যাস লাগবে, তা এই লাইন থেকে দেওয়া সম্ভব নয়। কারখানাটি চালু করতে গ্যাস সরবরাহের জন্য আলাদা গ্যাস সংযোগ লাইন বসাতে হবে। কারখানাটি স্থাপনে যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, তাতে গ্যাসলাইন স্থাপনের বিষয়টি ছিল না। সর্বশেষ প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর যে প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেখানে ৪৩ কিলোমিটার নতুন গ্যাসলাইন স্থাপনের জন্য ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারত থেকে চুনাপাথর আনার অনুমতি এখনও মেলেনি। বাংলাদেশের ভেতরের অংশের কাজ চলছে। ভারতের অংশের কাজের চুক্তি হয়েছে।
রোপওয়ের কাজ করবে চীনা কোম্পানি। এজন্য রাজি হচ্ছে না ভারত। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে কূটনৈতিক টানাপোড়েন বেড়ে যাওয়ায় জটিলতা বেড়েছে।
পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সুদীপ কুমার দে জানান, ৫ বছর ধরে কারখানা বন্ধ থাকায় এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। অনেকেই চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী আব্দুর রহমান জানান, কারখানার নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভারত অংশে রোপওয়ে নির্মাণকাজের জন্য আলোচনা চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ প রকল প র ব স আইস আমদ ন র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্নে হলো দেখা
কারও স্বপ্নে আপনি প্রবেশ করেছেন বা অন্য কেউ আপনার স্বপ্নে এসেছেন, তাও তখন, যখন আপনি স্বপ্নে নিজের ইচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছেন– এমনটা কি কখনও ভেবেছেন? বিজ্ঞানীদের দাবি– একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এমনটিই করেছেন তারা, যেখানে দু’জন মানুষের মধ্যে স্বপ্নের ভেতরে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। এমনটি সত্যি হয়ে থাকলে এটিই হবে প্রথমবারের মতো ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার সময় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ– যা এখনও বিজ্ঞানের কাছে এক রহস্য।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক নিউরোটেক কোম্পানি রেমস্পেস, যারা মূলত লুসিড ড্রিমিং (স্বপ্নের মধ্যে সচেতন থাকা) ও ঘুমের বিকাশ নিয়ে কাজ করে। তারা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দু’বার দু’জন ব্যক্তিকে লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করিয়ে একটি সাধারণ বার্তা আদান-প্রদান করাতে পেরেছে।
কল্পকাহিনির মতো এক স্বপ্নপরীক্ষা
রেমস্পেসের গবেষকরা দাবি করেন, তারা এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করেছেন; যার মাধ্যমে দু’জন ব্যক্তি লুসিড ড্রিম অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। স্বপ্ন এখনও মানবতার জন্য এক বিশাল রহস্য। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন উজ্জ্বল ভাবনা, দৃশ্য, অনুভূতি ও কল্পনা গঠিত হয়। আমরা প্রায় সবাই স্বপ্ন দেখি, যদিও ঘুম ভাঙার পর তা মনে থাকে না। বিজ্ঞানীরা বলেন, স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্ক আমাদের অনুভূতি ও চিন্তা প্রক্রিয়া করে, স্মৃতি দর্শন করে এবং বাস্তব জীবনে এর প্রস্তুতি নেয়।
স্বপ্নের মাধ্যমে যোগাযোগ
রেমস্পেসের দাবি, গত ২৪ সেপ্টেম্বর, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন রেমস্পেসের তৈরি বিশেষ যন্ত্র ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে দূর থেকে তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস রেকর্ড করে। যখন তাদের সার্ভার শনাক্ত করে যে, একজন অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করেছে, তখন তারা একটি র্যানডম শব্দ তৈরি করে সেটি কানে দেওয়া ইয়ারবাডের মাধ্যমে তাকে শুনিয়ে দেয়। কোম্পানি শব্দটি প্রকাশ করেনি– এটি শুধু ওই ব্যক্তি জানতেন এবং স্বপ্নে পুনরায় উচ্চারণ করেন বলে দাবি করা হয়েছে। এরপর সেই প্রতিক্রিয়া সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। আট মিনিট পরে, দ্বিতীয় অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করলে, সার্ভার থেকে তাঁকে সেই রেকর্ডকৃত বার্তা পাঠানো হয়, যা তিনি ঘুম থেকে উঠে বলেন এভাবেই স্বপ্নে প্রথমবারের মতো একটি ‘যোগাযোগ’ সম্পন্ন হয়। রেমস্পেস জানায়, ‘আমরা একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছি, এতে লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে মানবযোগাযোগ ও সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।’
লুসিড ড্রিম কী?
লুসিড ড্রিম তখন হয়, যখন কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখার সময় সচেতন থাকেন যে, তিনি স্বপ্ন দেখছেন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, এটি সাধারণত ঘুমের ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ ধাপে ঘটে, যেখানে সবচেয়ে প্রাণবন্ত স্বপ্ন দেখা যায়। এ অবস্থায় মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো স্বপ্নে কাজ করতে পারেন, পরিকল্পিতভাবে কিছু করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘যে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– যে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য। অর্থাৎ, এই গবেষণা অন্য কেউ অন্য কোনো জায়গায় করলে একই ফল দেবে কিনা। ঘুমের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মোটা দাগে ঘুমের দুইটা ভাগ আছে– এক. ননরেম ঘুম, যখন আমাদের চোখের মণি নড়ে না; দুই. রেম ঘুম, এ পর্বে আমাদের চোখের মণি নড়াচড়া করে। এ সময়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নও দুই রকমের। লুসিড ড্রিম; যে স্বপ্নগুলো একদম বাস্তবের মতো জলজ্যান্ত। এমন এক স্বপ্ন যা দেখার পর ঘুম থেকে উঠে মনে হবে আসলেই এমনটি ঘটেছে, এটি বাস্তব। আরেকটি স্বপ্ন হলো নন লুসিড ড্রিম। এ স্বপ্নগুলো অবাস্তব। ঘুম ভাঙার পর বেশির ভাগ সময়েই আমরা স্বপ্নের কথা মনে করতে পারি না। লুসিড ড্রিমের ক্ষেত্রে আমরা তা মনে রাখতে পারি।’
প্রথম পরীক্ষার সাফল্যের পর, রেমস্পেসের সিইও মাইকেল রাদুগা (৪০) দাবি করেন, গত ৮ অক্টোবর আরও দু’জনের সঙ্গে একই ধরনের যোগাযোগ সম্ভব হয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আগে স্বপ্নে যোগাযোগ ছিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, আগামী দিনে এটা এতটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে যে, আমাদের জীবনে এটি ছাড়া কল্পনাই করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরইএম ঘুম এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, লুসিড ড্রিম আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পর বড় শিল্প হতে যাচ্ছে।’
যদিও রেমস্পেস এখনও জানায়নি তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে, তবে তারা সম্প্রতি ফেসবুকে জানিয়েছে, ‘লুসিড ড্রিমে যোগাযোগ’ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত হয়েছে এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে পর্যালোচনার জন্য জমা দেওয়া হয়েছে– প্রকাশ হতে সময় লাগবে দুই থেকে ছয় মাস। তবে এখনও এই প্রযুক্তির কোনো বাহ্যিক বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা হয়নি এবং অন্য কেউ এ পরীক্ষা পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি।
রাদুগা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম আমেরিকান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে বলেছেন, তাঁর প্রত্যাশা– এ ধরনের প্রযুক্তি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মোবাইল ফোনের মতো সাধারণ হয়ে যাবে। ‘মানুষ নিজেদের জীবন এসব ছাড়া কল্পনা করতে পারবে না, কারণ এটি তাদের জীবনকে আরও উজ্জ্বল, আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে। এটি মানুষের জীবনমান এমনভাবে বাড়িয়ে দেবে যে, তারা এটি ছাড়া নিজেদের কল্পনাই করতে পারবে না। আমাদের শুধু এগুলো উন্নত করতে হবে– এটি শুধু সময়ের ব্যাপার।’
২০০৭ সালে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় রেমস্পেস এবং ছয় মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়, এখন লুসিড ড্রিমিংয়ে অভিজ্ঞ বা আগ্রহী নতুন অংশগ্রহণকারীদের খুঁজছে।
স্বপ্ন-যোগাযোগের ভবিষ্যৎ
ঘুমের মধ্যে মানুষের যোগাযোগ একসময়ে নিছক কল্পবিজ্ঞান মনে হতো। এখন বিজ্ঞান এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কল্পনা করুন– হাতের ফোনে মেসেজ না পাঠিয়ে, সরাসরি কারও স্বপ্নে ঢুকে তাঁর সঙ্গে ঘুমের মধ্যে সময় কাটানো, কথা বলা যাচ্ছে।
এই ভাবনা যেন স্বপ্নের মতো। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি মানুষের চেতনা একটি বিকল্প পরিবেশে স্থানান্তরের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। একবার তা সফল হলে, সম্ভাবনার কোনো শেষ থাকবে না– মানবসভ্যতার বিবর্তন নতুন ধাপে প্রবেশ করবে।
লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে নানারকম প্রয়োগ সম্ভব– শরীরগত সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে দক্ষতা অর্জন পর্যন্ত। আগের এক গবেষণায় রেমস্পেস দেখিয়েছে, মুখের পেশিতে সূক্ষ্ম সাড়া থেকে স্বপ্নে উচ্চারিত শব্দ শনাক্ত করা সম্ভব। এখান থেকেই ‘রেমিও’ নামে এক স্বপ্ন-ভাষার জন্ম, যা সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
লুসিড ড্রিমে যে র্যানডম শব্দ শোনানো হয় অংশগ্রহণকারীদের, সেখানে ‘রেমিও’ স্বপ্ন-ভাষা ব্যবহার করা হয়। রেমস্পেস জানায়, এই সাফল্য এসেছে পাঁচ বছরের গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের পর। গবেষকরা প্রথম পরীক্ষার পর থেকে প্রতিটি পর্যায়ে প্রযুক্তি আরও উন্নত করেছেন। এবার তাদের লক্ষ্য আরও বড়– লুসিড ড্রিমে রিয়েল-টাইম যোগাযোগ। যদিও এটি অনেক জটিল, গবেষকদের আশা, আগামী কয়েক মাসেই তারা সফল হবেন।
শেষ কথা
যেখানে স্বপ্নে যোগাযোগ এতদিন ছিল সায়েন্স ফিকশন সিনেমা বা উপন্যাসের বিষয়; এই পরীক্ষা সেটিকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। যদি অন্যান্য বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠান একে যাচাই করে, তবে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ধরনই বদলে দিতে পারে– যেখানে ঘুমের মাঝেও আমরা অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারব। এখনই অতি উত্তেজিত না হয়ে সতর্ক আশাবাদী হওয়াই ভালো– প্রযুক্তিটির সাফল্য এখনও গবেষণাগারে পর্যালোচনার অপেক্ষায়; তাতেও একে পুরোপুরি বাস্তব করতে দশককাল লেগে যেতে পারে। v