ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অর্থনীতি গভীর খাদে পড়ে যাচ্ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে সেই পতন ঠেকানো গেছে। কিছু ক্ষেত্রে উন্নতিও আছে। তবে অর্থনীতিতে পুরো স্বস্তি এখনো ফেরেনি। বিনিয়োগ পরিবেশ ও কর্মসংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়, এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতি।
ছয় মাসেও নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো যায়নি। বেড়েছে প্রধান খাদ্যশস্য চালের দাম। ফলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ রয়ে গেছে। এর মধ্যে আবার শতাধিক পণ্যে শুল্ক-কর বাড়ানোয় এ চাপ কিছুটা বেড়েছে।
সরকারের আয় ও ব্যয়েও সংকটজনক অবস্থা। বাজেটের চাহিদা অনুসারে সরকার আয় করতে পারছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আয়ে ঘাটতি বেড়েছে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়ে লাগাম টানতে হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন–ভাতা, দেশি–বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধসহ বিভিন্ন খাতে খরচ বেড়েই চলছে। তাই সংশোধিত বাজেটে বড় কাটছাঁটের পথেই হাঁটতে হচ্ছে সরকারকে।
অর্থনীতি খারাপ হতে শুরু করেছিল মূলত ২০১৯ সাল থেকে। মাঝখানে দেখা দেয় কোভিড–১৯ মহামারি। এরপর ২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক অর্থনীতি বিপদে পড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। তবে দেশে সংকট বেশি প্রকট হয়েছে আগের সরকারের একের পর এক ভুল ও খামখেয়ালি নীতির কারণে। অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই তখন নিম্নমুখী ছিল। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই অর্থনীতিতে সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে এর সুফল এখনো পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশায়ও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছয় মাসে অর্থনীতির উত্তরণ ঘটবে, এমন আশা করা যায় না। অর্থনীতি উত্তরণের পথে হাঁটছে কি না, সেটা দেখার বিষয়। দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে ভারসাম্যহীনতা ছিল, সেখান থেকে উত্তরণের পথে গেছে। গত ছয় মাসের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখা যাচ্ছে। রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়প্রবাহ বেড়েছে। রিজার্ভের পতন ঠেকেছে। ব্যাংক খাতে উত্তরণের পথে হাঁটার প্রস্তুতির কাজ চলছে।
জাহিদ হোসেনের মতে, তিনটি খাত উত্তরণের পথে হাঁটছে না—এক.
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের (রিজার্ভ) পতন ঠেকাতে পারা। আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি (বিপিএম) অনুসারে এই রিজার্ভ ছয় মাস ধরে দুই হাজার কোটি ডলারের আশপাশেই আছে। ডলারের দামও মোটামুটি স্থিতিশীল। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি হিসাবের পাশাপাশি আর্থিক হিসাবের ভারসাম্যও ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। আর্থিক খাতেও একধরনের স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।
আগের সরকার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আমদানি কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল। এখন আর আমদানি ব্যয় কমিয়ে রিজার্ভ ধরে রাখা হচ্ছে না। গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ঋণপত্র নিষ্পত্তি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আড়াই শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছয় মাসে অর্থনীতির উত্তরণ ঘটবে, এমন আশা করা যায় না। অর্থনীতি উত্তরণের পথে হাঁটছে কি না, সেটা দেখার বিষয়।অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনকমেনি মূল্যস্ফীতির চাপ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে টানা ১০ মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে। এর মধ্য গত জুলাই মাসে এই হার উঠেছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে গত সাত মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বর ও জানুয়ারি মাস ছাড়া প্রতি মাসেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে ছিল। ২০২৪ সালে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলু, পেঁয়াজসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর কমিয়ে দেয়, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর উভয়েই বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমতে কিছুটা সময় লাগবে। ফলে অপেক্ষা করা ছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য আপাতত তেমন কোনো আশার বাণী নেই।
রাজস্ব–ঘাটতি বিপুলআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের পরও রাজস্ব আদায় বাড়াতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আয়ে এনবিআরের ঘাটতি ৫৭ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এমনকি আগের অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের চেয়ে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নও এখন গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপির মাত্র ৫০ হাজার ২ কোটি টাকা খরচ করা সম্ভব হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা কম।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলু, পেঁয়াজসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর কমিয়ে দেয়, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।বিনিয়োগ স্থবিরবিগত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ। মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি কমেছে ১৪ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও খুব বেশি বাড়েনি। এসব বিনিয়োগ স্থবিরতার ইঙ্গিত দেয়।
বিগত সরকারের আমলের প্রভাবশালী ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সব মহলের সমর্থন থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে ওইসব ব্যবসায়ীর কারখানা বন্ধ হয়েছে, কাজ হারিয়েছেন শ্রমিকেরা।
অর্থনীতির সংস্কারে সরকার একাধিক কমিটি করেছে। ইতিমধ্যে অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র তৈরি করা হয়েছে। অর্থনীতির কৌশল পুনর্নির্ধারণে টাস্কফোর্স প্রতিবেদন দিয়েছে। রাজস্ব খাত সংস্কারে পরামর্শক কমিটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দিয়েছে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ কম।
জানতে চাইলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের এখনো যোগাযোগের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির সমস্যাগুলোর পুরোপুরি সমাধান হচ্ছে না। ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছিল, সেখান থেকে অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো ঘাটতি আছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির দিকে সরকারকে আরও নজর দিতে হবে।
তপন চৌধুরী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করা দরকার। সে জন্য তাদের সামনে সম্ভাবনাময় ও একটি উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশ দিতে হবে। বর্তমানে এ ধরনের পরিবেশের ঘাটতি রয়েছে।
শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের এখনো যোগাযোগের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির সমস্যাগুলোর পুরোপুরি সমাধান হচ্ছে না।স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরীউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত সরক র র পতন ঠ ক র র এক ছয় ম স পর ব শ বছর র প রথম ব যবস আমদ ন আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।
‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
শিল্পে নতুন সংযোগে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।
সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে
পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।
গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা
পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।