সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট সিঙ্গাপুরের, বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান কে কত নম্বরে
Published: 8th, February 2025 GMT
২০২৫ সালে বিশ্বের শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। শক্তিশালী পাসপোর্টের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৯৩তম। এবার বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে আছে লিবিয়া ও ফিলিস্তিন। এবারের সূচকে শীর্ষে আছে সিঙ্গাপুর। সবার শেষে আফগানিস্তান।
গত বছর এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯৭তম। তার আগের বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯৮তম।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত সূচকে এসব তথ্য জানা গেছে। গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে সূচকটি প্রকাশ করা হয়েছে।
ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, কোনো দেশের পাসপোর্ট দিয়ে আগাম ভিসা ছাড়া কিংবা ভিসামুক্ত সুবিধা নিয়ে কতটি দেশে যাওয়া যায়, তার ওপর ভিত্তি করে শক্তিশালী পাসপোর্টের এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বিশ্বের ১৯৯টি দেশের পাসপোর্ট ও ২২৭টি ভ্রমণ গন্তব্য।
সূচকে প্রকাশ করা তথ্য বলছে, এখন বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা আগাম ভিসা ছাড়া কিংবা ভিসামুক্ত সুবিধা নিয়ে বিশ্বের ৩৯টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। যদিও বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা গত বছরের শুরুর দিকেও আগাম ভিসা ছাড়া বিশ্বের ৪২টি দেশে ভ্রমণ করতে পারতেন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৪০।
সেরা দশে কারাএ বছরের সূচকে শীর্ষে অবস্থানে আছে সিঙ্গাপুর। দেশটির পাসপোর্টধারীরা আগাম ভিসা ছাড়া ১৯৩টি দেশ ভ্রমণ করতে পারেন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ১৯০টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন দেশ দুটির পাসপোর্টধারীরা।
সূচকে তৃতীয় অবস্থানে আছে সাতটি দেশ। দেশগুলো হলো ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি ও স্পেন। দেশগুলোর পাসপোর্টধারীরা ১৮৯টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন।
এবারের সূচকে চতুর্থ অবস্থানে আছে সাতটি দেশ। অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল ও সুইডেন—এই সাতটি দেশের পাসপোর্টধারীরা ১৮৮টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন।
গ্রিস, নিউজিল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড—এই তিনটি দেশ আছে পঞ্চম অবস্থানে। এসব দেশের পাসপোর্টধারীরা ১৮৭টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। সূচকে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারীরা আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন ১৮৬টি দেশে।
সপ্তম অবস্থানে থাকা কানাডা, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, মাল্টা ও পোল্যান্ডের পাসপোর্টধারীরা ১৮৫টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। সূচকে অষ্টম অবস্থানে আছে দুটি দেশ—এস্তোনিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশ দুটির পাসপোর্টধারীরা আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন ১৮৪টি দেশে।
সূচকে নবম অবস্থানে আছে পাঁচটি দেশ। দেশগুলো হলো ক্রোয়েশিয়া, লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। এই পাঁচ দেশের পাসপোর্টধারীরা ১৮৩টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। দশম অবস্থানে থাকা আইসল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার পাসপোর্টধারীরা আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন ১৮২টি দেশে।
যুদ্ধরত ইউক্রেন ও রাশিয়া আছে যথাক্রমে ২৮তম ও ৪৫তম অবস্থানে। ইউক্রেনের পাসপোর্টধারীরা ১৪৭টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। রাশিয়ার পাসপোর্টধারীরা আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন ১১৪টি দেশে। ৫৯তম অবস্থানে থাকা চীনের পাসপোর্টধারীরা ৮৩টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন।
আরও পড়ুনশক্তিশালী পাসপোর্টের সূচকে সেরা কোন দেশ, বাংলাদেশ কত নম্বরে১১ জানুয়ারি ২০২৪দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থানবাংলাদেশের প্রতিবেশী, অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট মালদ্বীপের। সূচকে দেশটির অবস্থান ৫২তম। মালদ্বীপের পাসপোর্টধারীরা আগাম ভিসা ছাড়া ৯৩টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন।
এরপরেই ভারতের অবস্থান (৮০তম)। ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা ৫৬টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। ৮৩তম অবস্থানে থাকা ভূটানের পাসপোর্টধারীরা ৫১টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। মিয়ানমার আছে ৮৮তম অবস্থানে। দেশটির পাসপোর্টধারীরা আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন ৪৫টি দেশে।
আরও পড়ুন২০২৪ সালে বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট সিঙ্গাপুরের, বাংলাদেশ কততম২৫ জুলাই ২০২৪সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচকে শ্রীলঙ্কা আছে ৯১তম অবস্থানে। দেশটির পাসপোর্টধারীরা ৪২টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন।
বাংলাদেশের ঠিক পরে ৯৪তম অবস্থানে থাকা নেপালের পাসপোর্টধারীরা আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন ৩৮টি দেশে। পাকিস্তান রয়েছে ৯৬তম অবস্থানে। দেশটির পাসপোর্টধারীরা ৩২টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন।
সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচকে সবচেয়ে নিচে (৯৯তম) আফগানিস্তানের অবস্থান। দেশটির পাসপোর্টধারীরা ২৫টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন।
আরও পড়ুনকীভাবে করবেন ই-পাসপোর্ট০১ জুন ২০২৩.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ রমণ করত র অবস থ ন সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।