জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও নওগাঁর পাঁচটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। রোববার নওগাঁ জেলা জামায়াতের আমির খন্দকার মুহাম্মদ আবদুর রাকিব প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খন্দকার আবদুর রাকিব জানান, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে দলের কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ কেন্দ্র থেকে নওগাঁর ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াতের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। নওগাঁ-৩ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। হয়তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দু-এক দিনের মধ্যে সেখানে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।

নওগাঁর ১১টি উপজেলা নিয়ে ৬টি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মাহবুবুল হককে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি সাপাহারে। তিনি উপজেলার আল হেরা ইসলামি একাডেমি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা দুটি নিয়ে গঠিত নওগাঁ-২ আসনে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এনামুল হককে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। তাঁর বাড়ি ধামইরহাটের ছাতুন কুড়িগ্রামে।

মান্দা উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৪ আসনে জেলা জামায়াতের আমির খন্দকার মুহাম্মদ আবদুর রাকিবকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি উপজেলার পশ্চিম নুরুল্ল্যাবাদ গ্রামে। নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হয়েছে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আ স ম সায়েমকে। রানীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে আত্রাই উপজেলা জামায়াতের আমির মোহাম্মদ খবিরুল ইসলামকে। বদলগাছী ও মহাদেবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৩ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ