নেতজারিম করিডর ছেড়ে গেল ইসরায়েলি বাহিনী
Published: 9th, February 2025 GMT
যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি মেনে ফিলিস্তিনের গাজার নেতজারিম করিডর ছেড়ে গেছেন ইসরায়েলি সেনারা। গতকাল রোববার সকালে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ এই করিডর ছেড়ে যান। আগ্রাসন চালানোর সময় উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে ভাগ করে মাঝবরাবর ইসরায়েল থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ও দুই কিলোমিটার প্রশস্ত এ করিডর তৈরি করেছিল ইসরায়েল।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অভিযান আরও বিস্তৃত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস পঞ্চম ধাপের বন্দিবিনিময় সম্পন্ন করে গত শনিবার। এরপর শর্ত অনুযায়ী গতকাল সকালে নেতজারিম করিডর থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় ইসরায়েল। তাঁরা বর্তমানে গাজা ও ইসরায়েল সীমান্তের বাফার জোনে অবস্থান নিয়েছেন।
সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ওপর থেকে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, নেতজারিম করিডর ও এর আশপাশের বিস্তৃত এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ থেকে কোনো কিছুই রেহাই পায়নি। এমনকি সেখানকার কৃষিজমিগুলোও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়ার পর গাজার উত্তর ও দক্ষিণাংশের মধ্যে বেসামরিক লোকজনকে চলাচল করতে দেখা গেছে। এখন সাধারণ মানুষ স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উত্তর গাজায় যানবাহন চলাচল ও ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ বাড়বে।
গাজাকে স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে নেতজারিম করিডর তৈরি করেছিল ইসরায়েল। ওই এলাকায় অনেক সামরিক স্থাপনাও নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় হামাস বলেছে, এটি যুদ্ধের আরেকটি লক্ষ্য অর্জনে ইসরায়েলের ব্যর্থতারই প্রমাণ।
পশ্চিম তীরে অভিযান বিস্তৃতএদিকে গতকাল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, পশ্চিম তীরের জেনিনের পর এবার নুর শামস এলাকায়ও সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এর আগে ২১ জানুয়ারি জেনিনে ‘আয়রন ওয়াল’ নামে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, নুর শামস শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে দুজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের একজন হলেন ২৩ বছর বয়সী সোনদোস জামাল মুহাম্মদ শালাবি। এ সময় তাঁর গর্ভের আট মাসের সন্তানও নিহত হয়। গুরুতর আহত হন শালাবির স্বামী। নিহত অপরজন হলেন ২১ বছর বয়সী রাহাফ ফুয়াদ।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান সৌদিররয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটি। গতকাল এক বিবৃতিতে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় জাতিগত নিধনসহ ফিলিস্তিনি ভাইদের ওপর ইসরায়েলি দখলদারদের চালানো অপরাধ থেকে নজর সরাতে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।
ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলো ইসরায়েলি নেতার (নেতানিয়াহু) বক্তব্যের নিন্দা জানানোয় এবং বিষয়টির বিরোধিতা ও পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করায় বিবৃতিতে সাধুবাদ জানিয়েছে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে ইসরায়েলি নেতাদের দেওয়া বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছে মিসর। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, কাতার ও কুয়েতও সৌদি আরবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে নেতানিয়াহুর দেওয়া বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ বলে মন্তব্য করেছে।
এদিকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ঘিরে ‘সর্বশেষ মারাত্মক ঘটনাপ্রবাহ’ নিয়ে আলোচনা করতে ২৭ ফেব্রুয়ারি আরব দেশগুলোর জরুরি সম্মেলন ডেকেছে মিসর। গতকাল মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে।
গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশ দুটি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ‘জরুরি আরব সম্মেলন’ আহ্বান করল মিসর।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এ হুমকি দেন তিনি।
এ ঘটনায় গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আনোয়ার হোসেন।
ফেসবুক পোস্টে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবি লাল দাগ দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেন মোত্তাসিন। ক্যাপশনে তিনি আনোয়ার হোসেনের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘....সত্য লিখুন, না হলে আপনিও ছাড় পাবেন না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’
মোত্তাসিন বিশ্বাসের পোস্টের পর মন্তব্যের ঘরে আনোয়ার হোসেনকে একাধিক আইডি থেকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে আজ বুধবার বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে মোত্তাসিনের আইডি থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি তাঁর ওয়ালে আবার দেখা যায়। এ হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ’।
ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মোত্তাসিন বিশ্বাস আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক পোস্টে হলুদ কথাটা লেখা ঠিক হয়নি। এটি গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সাটু অডিটরিয়ামে জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েই এমন পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন মোত্তাসিন।
তাৎক্ষণিকভাবে লিখে ফেলেছিলেন, পরে মুছে দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের করা কোন সংবাদটির বিষয়ে পোস্ট করেছেন, জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাকে বাধা দেওয়ার সংবাদটির কথা জানান।
মোত্তাসিন বিশ্বাস আরও বলেন, প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন চব্বিশের আন্দোলনে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সংবাদটি এভাবে কেন লিখেছেন, তা জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁদের এড়িয়ে গেছেন। সে জন্যই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন।
আনোয়ার হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেছেন, স্ট্যাটাসে তাঁর দুটি ছবি ক্রস চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই পোস্টে মোত্তাসিনের অনুসারীসহ আরও অনেকে খারাপ মন্তব্য করে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জিডি করার কথা জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। এটি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুর রাহিম বলেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর রাতে তাঁরা এটি নিয়ে সভা করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পোস্টটি ডিলিট করা হবে।
আরও পড়ুনপুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা২৭ এপ্রিল ২০২৫সাংবাদিক সমাজের নিন্দা-প্রতিবাদআনোয়ার হোসেনকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জরুরি সভা করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারের সভায়। অবহিত করার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সংবাদ বর্জন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিজেএ) সভাপতি রফিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিটিজেএর নেতা ও সদস্যরা।
সভার পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশে একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিজনক ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেসব অধিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক্স্বাধীনতার অধিকার। একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ, যা আমাদের উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করেছে।’ অবিলম্বে মোত্তাসিন বিশ্বাস তাঁর দেওয়া পোস্টটি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ না করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।