ছন্দে থাকা বোলার এবাদত হোসেন দুর্ভাগ্যক্রমে চোটে পড়েছিলেন ২০২৩ সালে। ইংল্যান্ডে অস্ত্রোপচার করা, ১৫ মাস চোট পরিচর্যা, লড়াই করার মানসিকতায় ফেরার সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। জাতীয় লিগ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন। খেলেছেন এনসিএল টি২০ টুর্নামেন্টে, বিপিএলে পাঁচ ম্যাচ খেলেই জাতীয় দলে ফেরার অপেক্ষায় আছেন এবাদত। দেড় বছরের সংগ্রাম, নিজেকে ছন্দে ফিরে পাওয়া ও জাতীয় দলে ফেরার অপেক্ষা নিয়ে সেকান্দার আলীর কাছে মন খুলে কথা বলেছেন এবাদত হোসেন।
সমকাল : বিপিএলের লিগ পর্বে ৯ ম্যাচ বসে ছিলেন। ওই সময়ের অনুভূতি কেমন ছিল?
এবাদত : একজন খেলোয়াড় ম্যাচ খেলার জন্য সব সময় উন্মুখ থাকে। আমারও আকাঙ্ক্ষা ছিল। বিপিএলে খেলার জন্য সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। সব সময় চেয়েছি সুযোগ পেলেই নিজেকে মেলে ধরতে। এমনভাবে খেলতে চাইনি, যেন টিম ম্যানেজমেন্ট বলে– ‘তোমাকে সুযোগ দিলাম, অথচ প্রতিদান দিতে পারলে না।’ বরং আমি চেয়েছি এমনভাবে খেলব, যেন ম্যানেজমেন্ট আফসোস করে আরও আগে কেন সুযোগ দিলাম না। নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত রেখেছি। সুযোগ পাওয়ার পর আমাকে কিন্তু আর বসে থাকতে হয়নি।
সমকাল : মিরপুরে খুলনার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলার সময় মনের ভেতরে কী কাজ করেছে?
এবাদত : বিপিএলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি। ১৭ মাস পর হাইভোল্টেজ টি২০ লিগে ম্যাচে খেলতে নামার পর একটু নার্ভাস ছিলাম। এক-দুটি বল যাওয়ার পর জড়তা কেটে গেছে। যেটা করতে চেয়েছি, সেটা হচ্ছিল। মুশফিক ভাই বলছিলেন, তুই যেভাবে বলছিস সেটাই করতে থাক। উইকেট পাওয়ার পর চাঙ্গা হয়ে উঠি। আগের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। প্রথম ম্যাচে ৪৫ রান দিয়ে একটি উইকেট পেয়েছি। ওই ম্যাচের পর ম্যানেজমেন্ট আমার ওপর আস্থা রেখেছে; প্লে-অফের কোয়ালিফায়ার ও ফাইনাল ম্যাচ খেলেছি।
সমকাল : জিমি নিশামের মতো অলরাউন্ডার থাকার পরও ফাইনালে খেলার সুযোগ পাওয়া কতটা সম্মানের?
এবাদত : আমি ও আলি পেস বোলার হিসেবে খেলছিলাম। মুশফিক ভাই বল হাতে দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোরা দুইজন ছন্দে আছিস। বোলিং ভালো হচ্ছে। ছন্দটা ধরে রাখ।’ মুশফিক ভাই বা তামিম ভাইয়ের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ওই রকম কথা শোনার পর ভালো না করে থাকা যায় না। আমরা ভালো করাতেই শেষ চার ওভারে আমি, মায়ার্স ও আলি ৩১ রান দিয়েছি। স্লগে রান চেক দেওয়া সম্ভব না হলে চিটাগংয়ের রান দুইশ ছাড়িয়ে যেত। ওটা হতে না দেওয়ায় মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা ছিল।
সমকাল : চোট পরিচর্যা করার সময় মনোযোগ ধরে রাখা কতটা কঠিন ছিল?
এবাদত : অনেক কঠিন ছিল। কিছু করারও ছিল না। পেশাদার খেলাধুলায় আবেগের কোনো মূল্য নেই। আমি জানতাম, আমাকে পুরোপুরি ফিট হয়ে ম্যাচে ফিরতে হবে। জাতীয় লিগ দিয়ে শুরু করি। এনসিএল টি২০তে পাঁচ ম্যাচ খেলে ১০ উইকেট নিই। ওই টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্স করায় বিপিএলে দল পেয়েছি। প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়েছে কঠোর অধ্যবসায় দিয়ে। ধৈর্য, একাগ্রতা না থাকলে যে কোনো ইনজুরি থেকে ফেরা কঠিন।
সমকাল : ইনজুরির কারণে দুটি বিশ্বকাপ ও একটি এশিয়া কাপে ছিলেন না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও মিস করবেন। এই টুর্নামেন্টগুলোতে দল আপনাকে কতটা মিস করেছে?
এবাদত : অনেক মিস করেছে। কারণ আমি পুরোনো বলের বোলার। বিশ্বকাপে পুরোনো বলে বল করার মতো কেউ ছিল না। এ কারণে কোচ, অধিনায়ক বারবার আমার কথা বলেছেন। একটি দলে সব ধরনের বোলার থাকলে অধিনায়ক পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলার পরিবর্তন করতে পারেন। আমার চেষ্টা থাকে ব্রেক থ্রু দেওয়া। সেট জুটি ভেঙে দেওয়া। বিপিএলেও তাই করেছি।
সমকাল : বিপিএলে যখন ম্যাচ পাচ্ছিলেন না, আপনাকে প্রতিদিন জিমে দেখা যেত। নেটে বোলিং করতেন নিয়মিত। এগুলো কি রুটিন কাজ ছিল?
এবাদত : হ্যাঁ, রুটিন কাজ ছিল। ফিজিও নাথান যে রুটিন দিয়েছিলেন, সেটি অনুসরণ করেছিলাম। পেশির শক্তি বাড়াচ্ছিলাম। পুরো ছন্দে বোলিং করতে পেরেছি পুনর্বাসন ভালো হওয়াতে। সামনে আরও ভালো হবে। এক-দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারলে আরও নিখুঁত হবে বোলিং।
সমকাল : প্রধান কোচের সঙ্গে কথা হয়েছে? তারা আপনার বোলিং দেখে কী বলেছেন?
এবাদত : আমাদের অধিনায়ক শান্ত ভাই খুব প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, টেস্ট খেলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ আছে। ইনশাআল্লাহ সেখানে খেলব। কোচও বলেছেন, ভালো হচ্ছে। ট্রেনার নাথান বলেছেন, ১৪২ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করতে পারছে মানে ফিট। যে কোনো সংস্করণে খেলতে পারবে।
সমকাল : চোট পরিচর্যার লম্বা সময়ে সবার কাছ থেকে কেমন সাপোর্ট পেয়েছেন?
এবাদত : বিসিবি আমাকে সর্বাত্মক সাপোর্ট দিয়েছে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ, মেডিকেল বিভাগ সব সময় পাশে ছিল। জাতীয় দলের সঙ্গে ভারতে নিয়ে গেছে নেটে অনুশীলন করার জন্য। এই যে জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া, তা মেন্টাল গেম। একজন খেলোয়াড়ের জন্য যেটা বিরাট সাপোর্ট। কারণ আমি ভাবতে পেরেছি, আমাকে দল নিজেদের একজন মনে করছে। আমাকে তারা দলে চায়। এর বাইরে যেটা আছে, আমার ছোট ভাই খুব যত্ন নিয়েছে। প্রতিদিন নিয়ম করে পা ম্যাসাজ করে দিত। ওকে ধন্যবাদ।
সমকাল : টেস্ট দিয়ে শুরু করে তিন সংস্করণের নিয়মিত বোলার হয়ে উঠেছিলেন। পুরোনো জায়গা ফিরে পেতে কতটা সময় লাগতে পারে?
এবাদত : খুব বেশি সময় লাগার কথা না। ওয়ার্ক লোড ম্যানেজ করে, কঠোর পরিশ্রম করতে পারলে দ্রুত পুরোনো জায়গায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হতে পারে।
সমকাল : কোন সংস্করণ বেশি উপভোগ করেন?
এবাদত : টেস্ট। কারণ, যে টেস্টে ভালো করবে, সে বাকি দুই সংস্করণ অটো খেলতে পারবে। টেস্টের বোলিং নিখুঁত হতে হয়। বাজে বল পেলে ব্যাটার মেরে দেবে। এ কারণে বোলারদের টেস্ট খেলা উচিত। আমি তিন সংস্করণের বোলার হতে পেরেছি টেস্টে ভালো করার কারণে।
সমকাল : সামনে তো লাল বলের খেলা নেই, কীভাবে টেস্টের প্রস্তুতি নেবেন?
এবাদত : সামনে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলব। লিগের খেলা খেলতে খেলতেই লাল বলে প্র্যাকটিস করব। প্রসেস অনুসরণ করতে পারলে কোনো সমস্যা হবে না।
সমকাল : শেষ প্রশ্ন, বিপিএলে ফিরেই চ্যাম্পিয়ন হলেন, কেমন লাগছে?
এবাদত : এটা দারুণ একটা ব্যাপার। আমাদের দলটি সেরা ছিল। জাতীয় দলের ক্রিকেটারে ঠাসা। সেখানে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া কঠিন। আমি জায়গা করে নিতে পেরেছি এবং ফাইনাল খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটা দারুণ একটা ব্যাপার। ২০১৭ সালে রংপুরের হয়ে জিতেছি, এবার বরিশালের হয়ে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব প এল জ ত য় দল স স করণ বল ছ ন র জন য ট পর চ ব প এল সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
মাকিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে চুক্তি বাতিলকারী দেশগুলোর জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর তার সেই বার্তাটি হচ্ছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দাঙ্গাবাজ দেশ, যাকে বিশ্বাস করা যায় না।
শুল্ক স্থগিতাদেশের সময় চীন ছাড়া সবদেশকে বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য ট্রাম্প যে ৯০ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন, সেই সময়ের মধ্যে চীনা কর্মকর্তারা বিদেশী সরকারগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, একবার এই চুক্তিগুলো কার্যকর হয়ে গেলে, তিনি চান মার্কিন মিত্ররা ‘একটি দল হিসেবে চীনের সাথে যোগাযোগ করুক’, যাতে মার্কিন পক্ষ আলোচনায় আরো বেশি সুবিধা পায়।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত মার্কিন মিত্ররা নিরাপত্তার জন্য ওয়াশিংটনের উপর নির্ভর করে এবং অর্থনৈতিকভাবে ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের উৎসাহ রয়েছে। অবশ্য চীন আরো সমান তালে শুল্ক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের পর থেকে বেইজিং মার্কিন রপ্তানি থেকে তার অর্থনীতিকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশটিতে নিবেদিতপ্রাণ এবং সক্রিয় সৈন্য সংখ্যার বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক বাহিনী রয়েছে।
শি ট্রাম্পের সাথে ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তার সরকার ‘পাল্টাপাল্টি’ শুল্ক বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়ে বলছে যে, অন্য পক্ষ, অর্থাৎ চীনকে উত্তেজনা কমানোর প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে, চীন নিজেকে নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উপস্থাপন করছে এবং অন্যান্য দেশকে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর আমেরিকান স্টাডিজের পরিচালক উ জিনবো বলেন, “এটি কেবল চীন-মার্কিন সম্পর্কে নয়। এটি আসলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে।”
গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিবিদদের সাথে দেখা করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া উ জানান, অন্যান্য সরকারেরও বুঝতে হবে বেইজিংয়ের প্রচেষ্টা তাদের উপকার করেছে।
তিনি বলেন, “যদি চীন আমেরিকার বিরুদ্ধে না দাঁড়াত, তাহলে আমেরিকা কীভাবে তাদের ৯০ দিনের বিরতি দিত। চীনের উপর শুল্ক আরোপের ফলে ট্রাম্প অন্যান্য দেশের উপর শুল্ক আরোপ বন্ধ করার জন্য আবরণ পেয়েছেন। তাদের এটা উপলব্ধি করা উচিত।”
চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই সোমবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস ব্লকের দেশগুলোকে ট্রাম্পের দাবি প্রতিহত করার জন্য বেইজিংয়ের সাথে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “আপনি যদি নীরব থাকেন, আপস করেন এবং পিছু হটতে চান, তাহলে এটি কেবল বুলিকে আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।”
তার এই বক্তব্যের কয়েক ঘন্টা পরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইংরেজি সাবটাইটেলসহ একটি ভিডিওতে ওয়াশিংটনকে ‘সাম্রাজ্যবাদী’ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, গত শতাব্দীতে জাপানি রপ্তানি সীমিত করার মার্কিন পদক্ষেপ তোশিবার মতো কোম্পানিগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ওয়াং ই বলেছেন, “একজন ধর্ষকের কাছে মাথা নত করা ঠিক তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বিষ পান করার মতো, এটি কেবল সংকটকে আরো গভীর করে তোলে। চীন পিছু হটবে না যাতে দুর্বলদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়।”
ঢাকা/শাহেদ