রূপগঞ্জে কাজী মনিরের সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, সমালোচনার ঝড়
Published: 10th, February 2025 GMT
রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তোলপাড় চলছে। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান মনির। গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বাকেল উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন উপজেলার কাজী আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই সমাবেশে আয়োজন করেছিল। সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের পর থেকে রূপগঞ্জসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।
সমাবেশে রূপগঞ্জ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব রহমান নিজের বক্তব্যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছেন, যা নিয়ে হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা। পরে সভা মঞ্চ থেকে মাহাবুবকে দলের নেতাকর্মীরা অপমান করে নামিয়ে দেন। বিএনপির স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীর দাবি, আওয়ামী লীগের সময় সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন মাহাবুব রহমান। ৫ আগষ্টের পর বিএনপিতে ফিরেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবু মোহাম্মদ মাসুমের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান মনির। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
রূপগঞ্জ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব রহমান ‘জয় বাংলা জয় .
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা মাহাবুব রহমান বলেন, আমি ভুল করে ‘জয় বাংলা বলে স্লোগান দিয়েছি। তবে জয় বাংলা স্লোগান আমাদের দুশমন, এটা আমাদের খানদানের দুশমন। আবেগের মধ্যেই জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলেছিলাম। বিএনপির এ নেতার দাবি, তার বক্তব্যের শেষের দিকে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলা ভুল হয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন বলেন, মাহাবুব রহমান আমাদের একজন প্রবীন নেতা। উনি কিভাবে জয় বাংলা বলে স্লোগান দিয়েছেন তা বুঝতে পারছি না। তাছাড়া শুনেছি, তিনি ৫ আগষ্টের আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামানের সাথে রাজনীতি করছেন। এটি তিনি হয়তো ইচ্ছাকৃত করেননি।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার কিছু দোষর কিছু নেতার ছত্রছায়ায় তাদের দল পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। মাহাবুব রহমান আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছিলেন। বিএনপির সমাবেশে তার এমন বক্তব্য মেনে নেওয়া যায় না।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ গোলাম ফারুক খোকন বলেন, কোনো বিএনপির নেতাকর্মী নিষিদ্ধ স্লোগান দিতে পারবে না। সংগঠন বহির্ভূত কোনো কর্মকানেড্ কেউ জড়ালে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
এদিকে স্থানীয়দের একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামীলীগের গাজী গোলাম দস্তগীর গাজীর বহু কর্মী-সমর্থক পুলিশী ঝামেলা এড়াতে বিএনপিতে ভিড়েছে। দল ভারী করতে রূপগঞ্জের শীর্ষ নেতারা তাদের কাছে নিয়েছে। তারই বহি:প্রকাশ ‘বিএনপির সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ জ ল ম হ ব ব রহম ন ব এনপ র ন ব এনপ র স ন ত কর ম র পগঞ জ উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।