সুদান ও ফিলিস্তিন যেভাবে জনদৃষ্টি কাড়ছে
Published: 11th, February 2025 GMT
রোববার রাতে সুপারবোল বা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ফুটবল লিগের ফাইনাল খেলার মাঝপথে এক অভিনয়শিল্পী সুদান ও ফিলিস্তিনের পতাকা তোলেন। অতি নিয়ন্ত্রিত একটি অনুষ্ঠানে তাঁর এ কাজ ছিল খুবই তাৎক্ষণিক। শিগগিরই নিরাপত্তাকর্মীরা ঘটনার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং পতাকা তোলার দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়নি। এই মুহূর্তটি চোখের পলকে শেষ হলেও তা গভীর তাৎপর্য বহন করে।
এটি মূলধারার পরিসরে তাদের বার্তা প্রকাশের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ভেঙে সুদানি ও ফিলিস্তিনি জনগণ এবং তাদের মিত্রদের আওয়াজ তোলার সংকল্প উন্মোচন করে। পদ্ধতিগত দমনপীড়নের মুখোমুখি হলে তারা কীভাবে তাদের কণ্ঠস্বর শোনাতে সিস্টেমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, এটি তার আরেকটি উদাহরণ হতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সুদানি ও ফিলিস্তিনি জনগণ কথা বলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। তারা প্রতিবাদ করেছে, সংগঠিত করেছে এবং তাদের সংগ্রামের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জীবনের ঝুঁকিও নিয়েছে। বিশ্ব তাদের আহবানে সাড়া দেয়নি, বরং উপেক্ষা করেছে।
এবারই প্রথম তাদের কষ্টকে চাপা রাখতে সুপারবোল এমন উদ্যোগ নিয়েছে, বিষয়টি তা নয়। গত বছর যখন লাখ লাখ মার্কিনি খেলাটি দেখছিল, তখন ইসরায়েল একটি গণহত্যা চালিয়েছিল। রাফাতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৬৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছিল। অথচ এই রাফাকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, যেখানে তখন ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল। এটি কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। ইসরায়েল জানত, আমেরিকান মিডিয়া এ ব্যাপারে মনোযোগ দিতে খুব দ্বিধায় থাকবে এবং যত্ন নিতে গড়িমসি করবে।
কর্মী হিসেবে আমরা অনেকেই জানতাম, এই বিভ্রম মোকাবিলায় আমাদের পথ খুঁজে বের করতে হবে। প্রযুক্তি সেবা নো কালেকটিভ-এর সহযোগিতায় আমি একটি ভিন্ন ধরনের সুপারবোল বিজ্ঞাপন চালু করি। সেটির উদ্দেশ্য ছিল কোনো চিপ বা গাড়ি বিক্রি নয়, বরং আমাদের সরকার গাজায় সজ্ঞানে যে অপরাধগুলো ঘটতে দিচ্ছে, সেগুলো মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার করা বিজ্ঞাপনে একটি সহজ কিন্তু জরুরি বার্তা ছিল– যুক্তরাষ্ট্রকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে আছি, অথচ আমাদের ট্যাক্স দিয়ে শিশুহত্যা চলছে। আমরা দলের জন্য উল্লাস করছি, কিন্তু আমাদের সরকার অস্ত্র সরবরাহ করছে, যা ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়িকে গণকবরে পরিণত করে।
জনসাধারণকে খাওয়ানো, বিনোদন দেওয়া; এতে তারা নিপীড়নের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে না, এমনকি এটি লক্ষ্যও করবে না, যাকে রোমানবাসী ‘রুটি ও সার্কাস’ বলে চিহ্নিত করে। সুপারবোল হলো আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশ্রেষ্ঠ সার্কাস। আমাদের দেশের তহবিল ব্যবহার করে নৃশংসতা ঘটছে, অথচ আমাদের মনোযোগ এ ঘটনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। রোববার রাতের প্রতিবাদের মুহূর্তটি এ বার্তা দেয়– সবাইকে বিভ্রান্ত করা যায় না।
২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারির প্রতিবাদ সমাবেশের কথাও বলা যায়, যখন ৪ লাখের বেশি মানুষ ওয়াশিংটন ডিসিতে সমবেত হয়েছিল ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের গণহত্যায় মার্কিন প্রশাসনকে জড়িত না থাকার আহ্বান জানাতে। এটি ছিল গণসংহতির প্রশ্নে নজিরবিহীন কাজ। এটি এমন একটি প্রতিবাদ, যা দেশের রাজধানীতে অনেক ঐতিহাসিক বিক্ষোভকে ছাপিয়ে গেছে, তবে মিডিয়া খুব কমই এটি প্রচার করেছে। যদি ৪ লাখ মানুষ অন্য কোনো কারণে জড়ো হতো, তাহলে এটি সন্ধ্যায় মূলধারার খবরে পরিণত হতো; সোশ্যাল মিডিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করত এবং পরদিন সকালে শিরোনাম হয়ে যেত। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে মিডিয়া ছিল নীরব। ঘটনা নজর কাড়েনি, এমনও কিন্তু নয়। বরং এটি ছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের কণ্ঠ দমন করার একটি পরিকল্পিত চেষ্টা। তাই সুদান ও ফিলিস্তিনের জন্য সুপারবোলে যা ঘটেছিল, তা কেবল অবাধ্যতার কাজ ছিল না। এটি ছিল নীরব থাকা লোকদের দীর্ঘ ঐতিহ্যের অবসান ঘটানোর চেষ্টা। সব সরকারি চ্যানেল তাদের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়েছে। এরই মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, মূলধারা যতই সুদান ও ফিলিস্তিনের দুর্দশা মুছে ফেলার চেষ্টা করুক, সত্য উন্মোচিত হবেই।
এ বাস্তবতা রাস্তাও পরিষ্কার হয়ে ওঠে, যখন কয়েক হাজার মানুষ গ্রেপ্তার, কালো তালিকাভুক্তি ও সহিংস দমনপীড়ন সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সুদানি ও ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের মধ্যকার ফারাক ভেঙে পড়ে, যেখানে আন্দোলনকারীরা বিশ্বের দৃষ্টি ফেরাতে নিজেদের জীবনেরও ঝুঁকি নেয়। এটি ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে স্বাধীন সাংবাদিক ও তৃণমূলের আন্দোলনগুলো বাস্তব ঘটনা বলার ক্ষেত্রে করপোরেট মিডিয়াকে পেছনে ফেলছে। রোববার রাতে এটি বিশ্বের সর্বাধিক উপভোগ করা একটি অনুষ্ঠানের মধ্যেই উদোম হয়ে পড়েছে।
ওমর সুলেমান: সাউদার্নমেথডিস্ট ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজেরঅধ্যাপক; আলজাজিরা থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র ন ত কর ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫