লোটাস কামাল পরিবারের সম্পদ ১৬৫ কোটি, ব্যাংকে লেনদেন ৮৪৯ কোটির
Published: 13th, February 2025 GMT
আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবু হেনা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল), তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের নামে ১৬৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। তাদের ১০৭টি ব্যাংক হিসাবে ৮৪৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ব্যাংকে সন্দেহজনক অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে লোটাস কামাল, তার স্ত্রীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে আলাদাভাবে মামলাগুলো দায়ের করেন। দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো.
এজাহারে সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের বিরুদ্ধে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসাধু উপায়ে বৈধ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ২৭ কোটি ৫২ লাখ ৫৪ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার নিজের ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে ৩২টি ব্যাংক হিসাবে ২৩৪ কোটি ৮৬ লাখ ৬৫ টাকা জমা ও ২১১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা উত্তোলনসহ ৪৪৬ কোটি ৪২ লাখ ৫৩ হাজার টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
এজাহারে বলা হয়, লোটাস কামালের স্ত্রী কাশমিরি কামাল ৪৪ কোটি ১১ লাখ ৬২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও নিজের নামে ২০টি ব্যাংক হিসাবে ১৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা জমা ও ৭ কোটি ৮৪ লাখ ৯৭ টাকা উত্তোলনসহ ২৬,৬৪,০১,১৩৩/- টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। তার স্বামী মোস্তফা কামাল এমপি ও মন্ত্রী থাকাকালে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে এ সব সম্পদ অর্জন করেছেন। এ মামলায় তার স্বামী মোস্তফা কামালকেও আসামি করা হয়েছে।
ছেলে কাশফি কামালের বিরুদ্ধে ৩১ কোটি ৭৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। ৩৮টি ব্যাংক হিসাবে ৯০ কোটি ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা জমা ও ৮৬ কোটি ৮৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন তিনি। লেনদেন করেছেন ১৭৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকার, যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক।
এজাহারে আরও বলা হয়, লোটাস কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল ৬২ কোটি ১৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে ১৭টি ব্যাংক হিসাবে ১০২ কোটি ১৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা জমা ও ৯৭ কোটি ৭ লাখ টাকা উত্তোলনসহ ১৯৯ কোটি ২ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। লোটাস কামাল এমপি ও মন্ত্রী থাকাকালে তিনি প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে এ সব সম্পদ অর্জন করেছেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও (৩) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলাগুলো করা হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও দেড় শ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার উপপরিচালক মো. আজিজুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান নূরের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকা। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।
২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একে একে মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।