আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবু হেনা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল), তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের নামে ১৬৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। তাদের ১০৭টি ব্যাংক হিসাবে ৮৪৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ব্যাংকে সন্দেহজনক অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে লোটাস কামাল, তার স্ত্রীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। 

আজ বৃহস্পতিবার দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে আলাদাভাবে মামলাগুলো দায়ের করেন। দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো.

আক্তার হোসেন এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের মামলার বিষয় জানান।  

এজাহারে সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের বিরুদ্ধে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসাধু উপায়ে বৈধ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ২৭ কোটি ৫২ লাখ ৫৪ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার নিজের ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে ৩২টি ব্যাংক হিসাবে ২৩৪ কোটি ৮৬ লাখ ৬৫ টাকা জমা ও ২১১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা উত্তোলনসহ ৪৪৬ কোটি ৪২ লাখ ৫৩ হাজার টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। 

এজাহারে বলা হয়, লোটাস কামালের স্ত্রী কাশমিরি কামাল ৪৪ কোটি ১১ লাখ ৬২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও নিজের নামে ২০টি ব্যাংক হিসাবে ১৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা জমা ও ৭ কোটি ৮৪ লাখ ৯৭ টাকা উত্তোলনসহ ২৬,৬৪,০১,১৩৩/- টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। তার স্বামী মোস্তফা কামাল এমপি ও মন্ত্রী থাকাকালে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে এ সব সম্পদ অর্জন করেছেন। এ মামলায় তার স্বামী মোস্তফা কামালকেও আসামি করা হয়েছে। 

ছেলে কাশফি কামালের বিরুদ্ধে ৩১ কোটি ৭৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। ৩৮টি ব্যাংক হিসাবে ৯০ কোটি ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা জমা ও ৮৬ কোটি ৮৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন তিনি। লেনদেন করেছেন ১৭৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকার, যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক। 

এজাহারে আরও বলা হয়, লোটাস কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল ৬২ কোটি ১৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে ১৭টি ব্যাংক হিসাবে ১০২ কোটি ১৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা জমা ও ৯৭ কোটি ৭ লাখ টাকা উত্তোলনসহ ১৯৯ কোটি ২ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। লোটাস কামাল এমপি ও মন্ত্রী থাকাকালে তিনি প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে এ সব সম্পদ অর্জন করেছেন। 

আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও (৩) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলাগুলো করা হয়।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আসাদুজ্জামান নূরের চারটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দের আদেশ

সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর নামে থাকা ১৬টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, আসাদুজ্জামান নূরের অর্জিত সম্পদ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তদন্তকালে তাঁর নামে পাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ যেন তিনি হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন, সে জন্য তা জব্দ ও অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।

দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুলাই মামলা করেছে দুদক। তাঁর নামে ৪টি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি রয়েছে। আরও রয়েছে তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া তাঁর নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকায়। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।

২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরও পড়ুনআট মাসে ১৯২ একর জমি, ২৮ ভবন ও ৩৮ ফ্ল্যাট জব্দ ১৭ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে কারচুপির অভিযোগকারী ছাত্রীকেই সন্দেহ কমিশনের
  • আসাদুজ্জামান নূরের চারটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠা জমি জব্দের আদেশ
  • জেমকন গ্রুপের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর বিরু‌দ্ধে মামলা কর‌বে দুদক
  • জেমকন গ্রুপের দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করবে দুদক