আ’লীগ নেতার প্রার্থিতায় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ, নির্বাচন স্থগিত
Published: 13th, February 2025 GMT
মৌলভীবাজার আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষুব্ধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের তোপের মুখে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলে আগের রাতে নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেয় জেলা আইনজীবী নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।
জেলা আইনজীবী সমিতি গঠিত নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট বকসী জুবায়ের আহমেদ অনিবার্য কারণবশত নির্বাচন স্থগিতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, মৌলভীবাজার আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনের লক্ষ্যে জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি মামুনুর রশীদকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে চার সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন গত ৭ জানুয়ারি তপশিল ঘোষণা করে। গত মাসের ২৩ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র গ্রহণ শেষে আজ ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। এ নির্বাচনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১৫ পদে ২১ আইনজীবী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে সভাপতি পদে প্রার্থী হন কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক এস এম আজাদুর রহমান। এ খবর জানার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও জেলা জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন।
বুধবার সন্ধ্যার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সভাপতি পদে আজাদুর রহমানকে নির্বাচন করতে না দেওয়ার দাবি জানান জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির জেলা প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল হোসাইন, শাহাব উদ্দিন বাবলু, শফিকুল ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাকারিয়া ইমন, মঞ্জুর আহমেদ, জাবেদ আহমেদ প্রমুখ। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিক জরুরি সভার আহ্বান করে নির্বাচন স্থগিত করে। পরে বুধবার রাত ৮টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অনিবার্য কারণবশত নির্বাচন স্থগিতের কথা জানানো হয়।
জাতীয় নাগরিক কমিটি জেলা প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল হোসাইন জানান, জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জেলার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টি নির্বাচনের আগের দিন জানতে পারেন তারা। এর পর কঠোর প্রতিবাদ জানালে আইনজীবী সমিতি গঠিত নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির অবসান হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ আইনজ ব আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে: হাইকোর্ট
শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি রেজাউল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।
একই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষা আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ১৭ জুলাই এক স্মারকে জানায়। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কেরানীগঞ্জ পাবলিক ল্যাবরেটরি স্কুলের পরিচালক মো. ফারুক হোসেন, শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধিসহ ৪২ জন চলতি বছর রিটটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে ওই স্মারকের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য স্থগিত করেন। শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতিসংক্রান্ত ১৭ জুলাইয়ের ওই স্মারক (ম্যামো) কেন আইনগত কর্তৃত্ব–বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির।
পরে আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত ১৭ জুলাইয়ে স্মারক অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালা অনুসারে সব বেসরকারি অর্থাৎ বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক, রেজিস্ট্রার্ড কিন্ডারগার্টেন, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রেজিস্টার্ড/অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত/স্থাপনা ও প্রাথমিক অনুমতিপ্রাপ্ত চালু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ জন্য ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের ফলে শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই নয়, এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ১৯৮১ সালে প্রবর্তন করা হয় বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এটি চলে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নতুন নীতিমালার আলোকে পিএসসি পরীক্ষা হয়। এতে যারা ভালো করত, তাদের বৃত্তি দেওয়া হতো। তবে করোনার সময় ২০২০ ও ২০২১ সালে তা বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে আবার বৃত্তি পরীক্ষা শুরু হয়, তবে তা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার নীতিমালার (সংশোধিত–২০১৬) আলোকে। বিভিন্ন কারণে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এটি বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৫ সালে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। বেসরকারি শিক্ষার্থীরাও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে—এমন নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা যাতে পরীক্ষা দিতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।