টিসিবির পণ্যের চাহিদা বেড়েছে, তবে কমেছে বরাদ্দ
Published: 14th, February 2025 GMT
রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচাবাজারের সামনের সড়ক। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সেখানে যায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) একটি পণ্যবোঝাই ট্রাক। আগে থেকেই সেখানে চার শতাধিক লোক লাইনে দাঁড়ানো। সবাই এসেছেন ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে। অথচ ওই ট্রাকে ছিল মাত্র ২০০ জনের পণ্য।
ক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় মুহূর্তেই সেখানে শুরু হয় হট্টগোল। এ অবস্থায় পণ্য বিক্রি শুরু হলে লাইনে দাঁড়ানো বিক্ষুব্ধ কিছু লোক ট্রাকচালক ও এক সহকারীকে মারধর করেন। পরে সেখানে থেকে চলে যায় ট্রাকটি।
টিসিবির পণ্য বিক্রির ট্রাক ঘিরে এমন হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা নতুন কোনো ঘটনা নয়। গত সোমবার থেকে পুনরায় পণ্য বিক্রি শুরুর পর চার দিনে অন্তত আটটি স্থানে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া পণ্য কিনতে আসা মানুষ একে অপরের সঙ্গে জড়িয়েছেন মারামারি–ধাক্কাধাক্কিতে।
টিসিবির একাধিক ডিলার (সরবরাহকারী) ও কর্মকর্তা জানান, গতকাল রাজধানীর ৫০টি স্থানে পণ্য বিক্রি করেছে টিসিবি। এর মধ্যে মিরপুর ৬, কালশী, যাত্রাবাড়ী ও রামপুরায় মারধরের শিকার হয়েছেন ট্রাকের কর্মীরা। এর মধ্যে কালশীতে এক ট্রাকচালককে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনাও ঘটেছে।
টিসিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিটি ট্রাকে বরাদ্দ করা পণ্যের চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। এ কারণে বিশৃঙ্খলা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। অনেক স্থানে ডিলার ও তাঁর সহকারীরা মারধরের শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন।
মারামারি–ধাক্কাধাক্কি নিয়মিত ঘটনা
টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার তেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারেন। প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর ৭৮ টাকায় বিক্রি করা হয়। বিদ্যমান বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় ৪০০ টাকা কমে এসব পণ্য কিনতে পারেন ক্রেতারা। তাই টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে প্রতিদিন দীর্ঘ লাইন পড়ে।
গত তিন দিনে ঢাকার আটটি স্থানে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। সরেজমিনে দেখা যায়, নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষেরা টিসিবির ট্রাকের খোঁজে প্রতিদিন ভোর থেকে বিভিন্ন স্থানে জড়ো হন। আবার অনেকে ভাগ হয়ে ট্রাক খোঁজেন; কেউ ট্রাকের দেখা পেলে অন্যদের ফোন করে জানান।
টিসিবির ট্রাক আসার আগপর্যন্ত মোটামুটি সুশৃঙ্খলভাবেই লাইনে দাঁড়ান ভোক্তারা। ট্রাক এলেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা ও ধাক্কাধাক্কি। ধাক্কাধাক্কির কারণে গত কয়েক দিনে কয়েকটি স্থানে বেশ কয়েকজন ক্রেতা আহতও হয়েছেন। আবার পণ্য নিতে এসে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অজ্ঞান হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গত তিন দিনে এ রকম পাঁচটি ঘটনার কথা জানা গেছে।
আওতা বেড়েছে, বরাদ্দ কমেছে
এদিকে সারা দেশে টিসিবির এক কোটি পরিবার কার্ডের মধ্যে ৪৩ লাখ কার্ড সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে। এর পরিবর্তে ধাপে ধাপে স্মার্ট পরিবার কার্ড বিতরণ করছে সংস্থাটি। পরিবার কার্ডের সংখ্যা কমানোয় ট্রাকে পণ্য বিক্রির আওতা বাড়ানোর চিন্তা করছে টিসিবি।
সংস্থাটি বর্তমানে ঢাকা শহরের ৫০টি ও চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে পণ্য বিক্রি করছে। এখন আটটি বিভাগীয় শহর ও কয়েকটি জনবহুল জেলা সদরে এই কার্যক্রম বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে টিসিবি। সরকারের অনুমোদন পেলে আগামী সপ্তাহ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে সংস্থাটির শীর্ষস্থানীয় একাধিক কর্মকর্তা জানান।
পণ্য বিক্রির আওতা বাড়ালেও ট্রাকপ্রতি পণ্যের বরাদ্দ কমিয়েছে টিসিবি। এত দিন টিসিবির একটি ট্রাকে ২৫০ জনের পণ্য বিক্রি করা হতো। তবে তিন দিন ধরে প্রতিটি ট্রাকে ২০০ জনের জন্য পণ্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আগে ঢাকায় ৫০ ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারতেন সাড়ে ১২ হাজার মানুষ। এখন সেটি কমে ১০ হাজারে নেমেছে। অর্থাৎ শুধু ঢাকাতেই আড়াই হাজার মানুষের বরাদ্দ কমিয়েছে টিসিবি। একইভাবে চট্টগ্রামেও বরাদ্দ কমেছে এক হাজার মানুষের।
বরাদ্দ কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দেশের আরও কয়েকটি বিভাগীয় শহরে টিসিবির এই কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ কারণে ট্রাকপ্রতি বরাদ্দ কিছুটা কমানো হয়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, এমনিতেই টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে না পেরে প্রতিদিন অনেক মানুষ খালি হাতে ফিরছেন। বরাদ্দ কমে যাওয়ায় এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। গত বুধবার বিকেল সোয়া তিনটায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে টিসিবির ট্রাকের পণ্য বিক্রি শেষ হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত অন্তত ৫৫ জন মানুষ পণ্য কিনতে না পেরে খালি হাতে ফিরে যান। তাঁদের একজন লাইলি বেগম। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে না পেরে একপর্যায়ে বয়স্ক এই নারী কান্না শুরু করেন। এ সময় প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সকাল সাতটায় খালি পেটে লাইনে দাঁড়িয়েছি। তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও পণ্য পাইনি। উল্টো ধাক্কাধাক্কিতে পায়ের স্যান্ডেল ছিঁড়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট স ব র এক বর দ দ ক ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা হবে: আপ বাংলাদেশ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত না হলে তা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। এ সময় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচন চায় ছাত্রশিবির
জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর
দাবিগুলো হলো— আসন্ন জকসু নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত করতে হবে; নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে; সব সংগঠনকে সমান সুযোগ দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে; অরাজনৈতিক, নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জবির প্রধান সংগঠক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা যখন জকসুর দাবিতে অনশন করছিলাম, তখন প্রশাসন ২৭ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের অনশন ভাঙিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একটি মহল নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছে।”
তিনি বলেন, “ডিসেম্বর মাসে ভর্তি পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় ওই মাসে নির্বাচন অসম্ভব। তাই ২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচনের উপযুক্ত সময়।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা জানতে চাই, নির্বাচন পেছানোর মধ্য দিয়ে জকসু নির্বাচন ভণ্ডুল করার কোনো প্রক্রিয়া চলছে কিনা। পুরান ঢাকাকে অস্থিতিশীল করে একটি মহল নির্বাচন পণ্ড করতে চায়। শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রথম ভোট হবে জকসু নির্বাচন—তা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী