সীতাকুণ্ডে বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে এসে হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করালেন দুই মেধাবী শিক্ষার্থীকে। দিনে হেলিকপ্টারে ঢাকায় গিয়ে রাতে বাড়ি ফিরেছে বিমানে চড়ে। এতে উচ্ছ্বসিত তারা। 
বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব শিল্পপতি আসলাম চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট খয়রাতি মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান শেষে দুই শিক্ষার্থীকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে ঢাকায় নিয়ে যান। এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন তিনি। বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আসলাম চৌধুরী।
হেলিকপ্টার ভ্রমণে সুযোগ পাওয়া সায়েম ও সাইমন বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণি শিক্ষার্থী। তারা বলে, ‘বিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ রকম হেলিকপ্টারে ভ্রমণের সুযোগ কারও কখনও হয়নি। এ স্মৃতি সারাজীবন মনে থাকবে। এই ধরনের উৎসাহ পেলে লেখাপড়ার প্রতি শিক্ষার্থীরা আরও বেশি মনোযোগী হবে।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মোরছালীন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের বার্ষিক অনুষ্ঠানে লায়ন আসলাম চৌধুরী প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে শেষে ঢাকা ফিরে যাওয়ার সময় মেধাবী দুই শিক্ষর্থীকে উপহার হিসেবে হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করাতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। বিকেল ৪টার সময় মেধাবী দুই শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ফিরে যান। বনানীর একটি মার্কেটে নিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের উপহার হিসেবে পোশাক কিনে দেন তিনি। পরে রাত ৯টায় বেসরকারি একটি বিমানে করে তাদের চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেন।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসলাম চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র করে জাতিকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করেছিল পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার সরকার। সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে; কারণ আমাদের গ্রামগঞ্জের পরিবেশ আস্তে আস্তে ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে কিছু অসাধু অনলাইন জুয়াড়ির মাধ্যমে। মধ্যবিত্তসহ সমাজের যুবক, তরুণ সমাজ আসক্ত হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি তারা সমাজে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। তাই সন্তান স্কুল, কলেজে নিয়মিত যাচ্ছে কিনা, তা নজরদারির মাধ্যমে বাচ্চাদের প্রতি সচেতন হতে হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আসল ম চ ধ র অন ষ ঠ ন ভ রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ