আজ ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন ড. ইউনূস, উঠছে যেসব প্রস্তাব
Published: 16th, February 2025 GMT
তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন-২০২৫ শুরু হচ্ছে আজ রোববার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দু রশীদ জানান, রেওয়াজ থাকলেও এবারও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সাক্ষাৎ হচ্ছে না।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সময় মেলাতে না পারায় এ বছর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কোনো অধিবেশন থাকছে না।
এবারের ডিসি সম্মেলনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখা হবে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রিপরিষদসচিব।
তিনি বলেন, “জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার পর সরকারের দর্শনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার পর আগের সরকারের দর্শনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্নজনের নামে সড়ক, সেতুর মতো অবকাঠামোগতসহ কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে বিগত সম্মেলনগুলোর তুলনায় এ বছর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার কম হয়েছে। তবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে গত বছরের সম্মেলনের বাস্তবায়ন অগ্রগতির হার ৪৬ শতাংশ থেকে আরো বাড়বে। এ বছর এক কোটি ৭০ লাখ টাকা বাজেট আছে। কিছু কম হবে বলে আশা করি।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “তিন দিনের ডিসি সম্মেলন চলবে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। গত বছরের মতো এবারও সম্মেলনের মূল ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। সম্মেলনে চারটি বিশেষ ও ৩০টি কার্য অধিবেশন থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি মুক্ত আলোচনা এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের একটি সভা। এই চারটি বাদ দিয়ে বাকি ৩০টি হবে কর্ম-অধিবেশন। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাটি হবে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।”
তিনি আরও জানান, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে নির্দেশনা গ্রহণের যে একটি অনুষ্ঠান আছে, সেটি হবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে। আর প্রধান উপদেষ্টার অফিসের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি এবং তার (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে আরেকটি কর্ম অধিবেশনসহ দুটি হবে প্রধান উপদেষ্টার অফিসে। অংশগ্রহণকারী মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা ৫৬টি। বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত এক হাজার ২৪৫টি প্রস্তাবের ৩৫৪টি কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে আলোচনা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডিসিদের পাঠানো এক হাজার ২৪৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩৫৪টি প্রস্তাব কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর গত বছর ডিসি সম্মেলনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি মোট ৩৮১টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ১৭৭টি সিদ্ধান্ত। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ২০৪টি সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৪৬ ভাগ।
প্রস্তাবের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, “এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যা আয় হয়, তা কিভাবে ব্যয় হয় জানা যায় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। তার হিসাব রাখার প্রস্তাব করেছেন একজন ডিসি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে বডি ক্যামেরা রাখা, মারণাস্ত্র ও ছররা গুলি না রাখার প্রস্তাব আছে। সার্কিট হাউসে গুরুত্বপূর্ণ অতিথি থাকলে কেপিআই হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব আছে। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে অনিয়ম দূর করতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একজনকে রাখার প্রস্তাব থাকছে সম্মেলনে।”
এবারের ডিসি সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য কিছু প্রস্তাব- এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেছেন হবিগঞ্জ জেলার ডিসি। আর জেলায় স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তি ও জাতীয়করণে জেলা প্রশাসকের মতামত গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন বরিশালের ডিসি। এক শিক্ষাবর্ষে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খাতভিত্তিক ফি আদায় এবং আদায়কৃত ফি ব্যয় সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব এসেছে পাবনার ডিসির কাছ থেকে। ময়মনসিংহের ডিসি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদবি পরিবর্তন করে ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা’ করার প্রস্তাব দিয়েছেন ঝিনাইদহ, সিলেট, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গাইবান্ধার ডিসি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে আনসার নিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছেন শরীয়তপুর ও হবিগঞ্জের ডিসি। সন্দ্বীপ উপজেলায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত দুটি সি-অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহের প্রস্তাব এসেছে চট্টগ্রামের ডিসির কাছ থেকে।
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন এই জেলার ডিসি। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণসহ সিসিইউ, আইসিইউ এবং ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে পর্যাপ্ত সংখ্যক পদ সৃজন ও পদায়নের প্রস্তাব করেছেন বরিশালের ডিসি। পরিবার কল্যাণ সহকারীদের কর্ম এলাকা পুনঃনির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন সিলেটের ডিসি।
গাইবান্ধা, জামালপুর ও কুড়িগ্রামের ডিসি চর উন্নয়ন বোর্ড গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। কৃষকের জন্য বজ্রপাত নিরোধক ছাউনি স্থাপনের জন্য পৃথক কর্মসূচি নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন নওগাঁ ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক। আর হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাওরের মাঠগুলোতে বজ্র নিরোধক দণ্ড সম্বলিত সম্মিলিত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন এই জেলার ডিসি।
কক্সবাজার জেলায় লবণ শিল্পের বিকাশে ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন এই জেলার ডিসি। ভোলা জেলায় একটি ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব এসেছে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে। চায়ের নিলাম মূল্য ও ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্যতা আনার প্রস্তাব করেছেন মৌলভীবাজারের ডিসি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে উৎপাদন থেকে খুচরা বিক্রয় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মূল্য তালিকা একটি কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে প্রকাশের প্রস্তাব করেছেন খাগড়াছড়ির ডিসি।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা/ইজিবাইক সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও সেন্ট্রাল চার্জিং স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা ও বরগুনার ডিসি। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কটিকে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণসহ যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন সুনামগঞ্জ ডিসি।
ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে পানিসারা রেলস্টেশনে ঢাকাগামী রেল স্টপেজের ব্যবস্থা এবং প্রতিটি রেলে একটা বগি শুধুমাত্র ফুল পরিবহনের জন্য ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব করেছেন সেই যশোরের ডিসি।
যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছেন জামালপুরের ডিসি। মনপুরা উপজেলাকে জাতীয় গ্রিডের সাথে যুক্তকরণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ উপজেলাকে বিদ্যুতায়িত করার প্রস্তাব দিয়েছেন ভোলার ডিসি।
প্রত্যেক জেলায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন গাইবান্ধা ও জামালপুরের ডিসি। মৌলভীবাজার জেলার বাদ পড়া ৭২টি চা-বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের প্রস্তাব দিয়েছেন এই জেলার ডিসি। রবি মৌসুমে অনাবাদি জমিগুলো চাষের আওতায় আনার জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করা যেতে পারে বলে মনে করেন হবিগঞ্জের ডিসি।
কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক নাগরিকদের জন্য জেলা পর্যায়ে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন মাগুরার ডিসি। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রতিটি পৌরসভায় ইটিপি স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, মেহেরপুর, মাদারীপুর ও টাঙ্গাইলের ডিসি।
ঢাকা জেলার নদ-নদীগুলো অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য কর্মপরিকল্পনা নেওয়া ও বাস্তবায়নের প্রস্তাব বরেছেন ঢাকার ডিসি। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও স্লুইসগেট সংস্কারের মাধ্যমে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি করে ফসলের আবাদ সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেছেন ঝালকাঠির ডিসি। পর্যায়ক্রমে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা সরকারিকরণের প্রস্তাব এসেছে সাতক্ষীরার ডিসির কাছ থেকে। ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও লোকবল নিশ্চিত করার প্রয়োজন বলে মনে করেন গাইবান্ধার ডিসি।
নিবন্ধন পরিদপ্তরকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভূক্তকরণের প্রস্তাব করেছেন নাটোর, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া ও নেত্রকোনার ডিসি। ভূমিহীনদের অনুকূলে বন্দোবস্তকৃত খাস জমি বিনামূল্যে নামজারি করার বিধান সম্বলিত পরিপত্র জারি এবং ই-মিউটেশনে বিনামূল্যে নামজারি করার সুযোগ সন্নিবেশকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন ঝিনাইদহের ডিসি। মেহেরপুর ও নওগাঁর ডিসি একই খতিয়ানের একের অধিক মালিকদের আংশিক ভূমি উন্নয়ন কর নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। দলিলমূল্যের ওপর নামজারি ফি নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ডিসি।
সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে জেলেদের ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বরগুনার ডিসি।
সব ধরনের লাইসেন্সের জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন লালমনিরহাট জেলার ডিসি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের প্রস্তাব করেছেন খাগড়াছড়ির ডিসি। সব জেলায় দুদকের কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া এবং জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের সুপারিশ করেছেন সাতক্ষীরা, নরসিংদী ও বান্দরবানের ডিসি।
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে প্রিলিমিনারি (এমসিকিউ টাইপ) ও মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন জামালপুরের ডিসি। মাগুরার ডিসি মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ এর বিধিমালা তৈরির প্রস্তাব করেছেন। তামাকের বিকল্প ফসল চাষিদের জন্য প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন বান্দরবানের ডিসি।
সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদের জন্য আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেছেন সুনামগঞ্জের ডিসি। জেলা পরিষদের অনুকূলে অর্থবছরের শুরুতেই এডিপি তহবিলে বরাদ্দ এবং প্রকল্প নেওয়া ও বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেছেন বরিশালের ডিসি।
ঝালকাঠির ডিসি উপজেলা পর্যায়ে ক্রীড়া অফিসার পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছেন। কক্সবাজারের ডিসি খাগড়াছড়ির জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবন ও মিলনায়তন নির্মাণের প্রস্তাব করেছেন।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার সিলেট বিভাগে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন। সিলেটের ডিসি জনবল সংকট নিরসনে বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ডের অধীনে সব সরকারি দপ্তরের ১৩-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন। বান্দরবানের ডিসি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বদলি ও পদায়ন বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে ন্যস্তকরণের প্রস্তাব করেছেন।
ঢাকা/হাসান/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন মগঞ জ ব ন দরব ন কর ছ ন স ব সরক র প রণয়ন তকরণ র ছ ন বর বর শ ল পর ক ষ পর য য় র জন য বছর র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ
তাপপ্রবাহ, ওজোন গ্যাসের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর দুই মেরু এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। তবে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের গলিত বরফ ভিন্ন ধরনের লুকানো বাস্তুতন্ত্র প্রকাশ করছে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে শৈবালের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে দেখা গেছে। পুরু বরফের নিচে এই প্রক্রিয়া অসম্ভব বলে মনে করা হলেও এখন আর্কটিকের খাদ্যশৃঙ্খল ও বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন শোষণের জন্য এই প্রক্রিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন বাস্তুতন্ত্র জলবায়ুগত সুবিধা দেবে নাকি নতুন অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবে, তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
আর্কটিক মহাসাগরকে দীর্ঘকাল ধরে হিমায়িত ও প্রাণহীন একটি সীমান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন এই অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ গলতে শুরু করেছে, তখন পানির নিচ থেকে আশ্চর্যজনক নতুন নতুন সব তথ্য জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দেখছেন, গলিত বরফ আসলে শৈবালের বৃদ্ধি বাড়িয়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে পারে। এই শৈবালই মহাসাগরের খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে। সেখানকার নতুন পরিবেশ আমাদের গ্রহের সংবেদনশীল জলবায়ু ভারসাম্যের জন্য সহায়ক হবে নাকি ক্ষতিকারক হবে, তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউট ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল আর্কটিক মহাসাগর সম্পর্কে আমাদের পূর্বের ধারণাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া পুরু আর্কটিক বরফের নিচে ঘটতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে জীবনের সহায়ক রূপে রূপান্তর করে। এই রূপান্তরের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার জন্য সেখানকার পরিস্থিতিকে খুব চরম বলে মনে করা হতো। নতুন গবেষণা ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। মধ্য আর্কটিক বরফের নিচে দেখা গেছে, নাইট্রোজেন ফিক্সেশন বা বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া কেবল ঘটছে তা নয়, বরং এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিস্তৃত হতে পারে। অন্যান্য সব সমুদ্রে সাধারণত সায়ানোব্যাকটেরিয়া দেখা গেলেও, আর্কটিকে নন-সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত একটি ভিন্ন দলের উপস্থিতি দেখা যায়। ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্রবীভূত জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে ও নাইট্রোজেন যৌগ মুক্ত করে যা শৈবালকে পুষ্টি জোগায়।
আর্কটিক এলাকাকে একসময় প্রাকৃতিক কার্যকলাপের জন্য খুব অনুর্বর বলে মনে করা হতো। গবেষণায় দেখা গেছে, গলে যাওয়া সমুদ্রের বরফের কিনারা বরাবর নাইট্রোজেনের বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সূর্যের আলো, পানি ও পুষ্টির উপাদান মিশে গেছে, যা ব্যাকটেরিয়া ও শৈবাল উভয়ের জন্যই আদর্শ পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আর্কটিকের নাইট্রোজেনচক্র নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লিসা ডব্লিউ ভন ফ্রাইসেন বলেন, আর্কটিক মহাসাগরে সহজলভ্য নাইট্রোজেনের পরিমাণ অনুমান করা হয়নি এখনো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে শৈবাল উৎপাদনের সম্ভাবনা কেমন হবে তা এখনো জানা যায়নি। শৈবাল আর্কটিক খাদ্যশৃঙ্খলের জন্য অপরিহার্য। তারা আণুবীক্ষণিক ক্রাস্টেসিয়ানদের খাবার হিসেবে কাজ করে, যা পরবর্তী সময়ে ছোট মাছ এবং সিল ও তিমির মতো বড় শিকারি প্রাণীরা খায়। আরও শৈবাল এই শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে আর্কটিক সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সাধারণভাবে শৈবাল কেবল সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্য জোগায় না। তারা সালোকসংশ্লেষণের সময় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইডও শোষণ করে। যখন শৈবাল মরে যায়, তখন এই কার্বনের কিছু অংশ সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। বিজ্ঞানীরা প্রায়শই শৈবালকে প্রাকৃতিক কার্বন সিংক বা মহাসাগরের নিজস্ব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসেবে বর্ণনা করেন। নতুন তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া যদি শৈবালের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে, তবে আর্কটিক মহাসাগর আরও বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করতে পারবে। বিষয়টি একদিক থেকে জলবায়ুর জন্য সুসংবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। শৈবালের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বৈশ্বিক কার্বন মাত্রাকে সামান্য হলেও প্রশমিত করতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিষয়টি এত সরল নয়। সামুদ্রিক সিস্টেম অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন এই ইতিবাচক প্রভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে।
বিজ্ঞানী ল্যাসে রিম্যান বলেন, ফলাফল জলবায়ুর জন্য উপকারী হবে কি না, তা আমরা এখনো জানি না। তবে এটি স্পষ্ট যে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে আর্কটিক মহাসাগরের কী হবে, তা অনুমান করার সময় আমাদের নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আর্কটিক পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় চার গুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এই দ্রুত পরিবর্তন কেবল বরফের ওপর নির্ভরশীল প্রজাতিদেরই নয়, বরং মহাসাগর কীভাবে কার্বন সঞ্চয় ও নির্গত করে, তারও পরিবর্তন ঘটায়। নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার ভূমিকা বোঝা গেলে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের জলবায়ু ধরন সম্পর্কে আরও নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া