প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ ফটো সাংবাদিক এম সাদেকের দাফন সম্পন্ন
Published: 18th, February 2025 GMT
দুই দফা জানাজা শেষে গতকাল সোমবার রাতে প্রথম আলোর কুমিল্লা কার্যালয়ে কর্মরত জ্যেষ্ঠ ফটো সাংবাদিক এম সাদেকের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাদ মাগরিব কুমিল্লা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এম সাদেকের প্রথম ও বাদ এশা নগরের অশোকতলা জামে মসজিদের সামনে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাত ৯টার দিকে অশোকতলা এলাকার সামাজিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
দুটি জানাজাতেই এম সাদেকের সহকর্মী, এলাকাবাসী, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সর্বস্তরের মানুষের তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন।
সোমবার দুপুর ১টা ৫৭ মিনিটে কুমিল্লা নগরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে মারা যান এম সাদেক। এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় কুমিল্লা শহরতলির গোমতী নদীর পাড়ে চানপুর এলাকায় এম সাদেক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। নগরীর অশোকতলা এলাকার বাসিন্দা এম সাদেক মৃত্যুকালে এক ছেলে, স্ত্রী, পুত্রবধূ, নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী-শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
সহকর্মী এম সাদেকের মৃত্যুর খবরে ঢাকার প্রধান কার্যালয় থেকে ছুটে আসেন প্রথম আলোর আঞ্চলিক সংবাদবিষয়ক সম্পাদক তুহিন সাইফুলের, হাউস ফটো করা-অর্ডিনেটর জিয়া উল ইসলাম, ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রধান মুরাদ খালেদা সরকার এবং প্রশাসনিক বিভাগের সহ-ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল নাম।
দ্বিতীয় জানাজা পূর্ব বক্তব্যে তুহিন সাইফুলের বলেন, এম সাদেক প্রথম আলোর দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত ফটো সাংবাদিক। তিনি সব সময় পেশাদারত্ব বজায় রেখে কাজ করে গেছেন। কাজের ক্ষেত্রে তিনি কখনো আপস করেননি। তার এমন মৃত্যু প্রথম আলো পরিবারের জন্য বেদনার। তিনি মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজের মাধ্যমে। এম সাদেক একজন ভালো মানুষ ছিলেন।
এম সাদেকের নিজ এলাকা অশোকতলা জামে মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জানাজার পূর্বে বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা সাজ্জাদুর কবির, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক ফারুক, প্রথম আলোর কুমিল্লা প্রতিনিধি আবদুর রহমান, স্থানীয় সাবেক সিটি কাউন্সিলর আবদুর রহমান, স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাদা সাকিব প্রমুখ।
প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজার পূর্বে বক্তব্যে বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদন হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন বলেন, কুমিল্লা হারিয়েছে একজন ভালো মানুষকে। আমি হারিয়েছি আমার খুব কাছের একজন শুভাকাঙ্ক্ষীকে। তিনি খুবই সাদা মনের একজন মানুষ ছিলেন।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারী (আবু) বলেন, তিনি অত্যন্ত সাহসী ফটো সাংবাদিক ছিলেন।
প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে বাবার জানাজায় অংশ নিয়ে নিজের কান্না থামাতে পারছিলেন না এম সাদেকের একমাত্র ছেলে কাউসার আলম। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাবা আমার অহংকার ছিলো। আমার বাবা আমার গর্ব ছিলো। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। ’
বক্তব্যে সহকর্মীর কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এম সাদেকের সহকর্মীরা। প্রথম আলো কুমিল্লার সাবেক নিজস্ব প্রতিবেদক নাসির উদ্দিন বলেন, কাজের মাধ্যমে সাদেক ধীরে ধীরে নিজেকে সর্বোচ্চ জায়গায় নিয়ে গেছেন।
এম সাদেকের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জানাজার পূর্বে আরও বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা (টিপু), কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক আমীরুজ্জামান আমীর, সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন (কায়সার), সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান, মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কামারুজ্জামান সোহেল, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম, কুমিল্লা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ সোয়েব সোহেল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাসির উদ্দিন, সাপ্তাহিক অভিবাদন সম্পাদক আবুল হাসনাত বাবুল, দৈনিক শিরোনাম সম্পাদক নিতিশ সাহা, দৈনিক আমার শহরের সম্পাদক গাজিউল হক, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক (ফারুক), সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এম স দ ক র ন এম স দ ক র রহম ন ব এনপ র সহকর ম
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে