পানির ন্যায্য হিস্যা দেওয়ার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইলে ভারতকে তিস্তার পানি দিতে হবে। সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করতে হবে। আমাদের সঙ্গে দাদাগিরি আচরণ বন্ধ করতে হবে। আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেন। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই– তাহলেই বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে। 

গতকাল সোমবার বিকেলে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে তিনি তিস্তা রেলসেতুর লালমনিরহাট প্রান্তে উপস্থিত থেকে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। লালমনিরহাট ছাড়াও রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীর নদীপারের ১১ পয়েন্টে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে এ ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার এ কর্মসূচির শেষ দিন।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারত একদিকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের যে শত্রু, তাঁকে দিল্লিতে রাজার হালে বসিয়ে রাখছে। আর সেখান থেকে তিনি হুকুম জারি করেন। আজকের এই সংগ্রাম আামাদের বাঁচা-মরার লড়াই। 
এ সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যদি নিরপেক্ষতার কথা বলেন, তাহলে ভারতের কাছে থেকে ন্যায্য পানির হিস্যা চান। আমরা সবসময় তিস্তার পানির কথা বলেছি। 

পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান বলেছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এলো, সবাই ভাবল ভারতের বন্ধু যখন ক্ষমতায় এসেছে, পানি এবার পাওয়া যাবে। কিন্তু ঘটেছে তার উল্টো। ১৫ বছরে তারা দেশকে বেচে দিয়েছে; কিন্তু এক ফোঁটা পানিও আনতে পারেনি। শুধু তিস্তা নয়, অভিন্ন ৫৪টি নদীর সবগুলোর উজানে ভারত বাঁধ দিয়েছে। তারা তিস্তায় বাঁধ দিয়ে আমাদের পানি নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আর আমাদের দেশের মানুষ এখানে ফসল ফলাতে পারে না, জেলেরা মাছ ধরতে পারে না। প্রতিটি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে তারা। 
এর আগে কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও আন্দোলনের সমন্বয়কারী সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুসহ অন্য নেতৃবৃন্দ। 

গতকাল বিকেলে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়সহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মহিপুর তিস্তা সেতুর নিচে সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে আমরা গঙ্গার পানির হিস্যার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়েছিলাম। ভাসানী যখন লংমার্চ করেন, তখন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গঙ্গার হিস্যা নিয়ে বিচার দাবি করেন। যার ফলশ্রুতিতে ভারতকে বাধ্য করে ৪৫ হাজার কিউসেক পানির হিস্যা আদায় করা হয়। আজ তেমনি বিএনপি এবং অন্য দল আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে তিস্তাপারে পানির হিস্যার জন্য হাজির হয়েছে। 

একই সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ভারত একবার আমাদের পানি শুকিয়ে মারে, আরেকবার আমাদের পানিতে ডুবিয়ে মারে– এটাই তাদের নীতি। শেখ হাসিনার সরকার ভারতের প্রতি নতজানু থেকে নিজেদের গদি রক্ষা করতে চেয়েছে। ভারতের শাসকদের আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, যদি আপনারা সুসম্পর্ক রাখতে চান, তাহলে ন্যায্যতার ভিত্তিতে আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। আর এই ন্যায্যতা হচ্ছে, তিস্তা নদীর পানির সুষম বণ্টন। 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তিস্তার এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচিত সরকার দরকার। তা না হলে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করা সম্ভাব হবে না। তাই নির্বাচিত সরকার গঠনে সবাইকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। অবস্থান কর্মসূচির গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। 
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা.

মইনুল হাসান সাদিকের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিকের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ডা. জিয়াউল ইসলাম জিয়া, মোজাহারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী টিটুন, উপজেলা জামায়াতের আমির শহিদুল ইসলাম মঞ্জু, সেক্রেটারি আতাউর রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া নীলফামারীর তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের হেলিপ্যাড মাঠে অবস্থান নেন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাতে ব্যানার-ফেস্টুনসহ মিছিল নিয়ে আসেন তারা। এখানে জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলমসহ স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল দুপুরে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিস্তা নিয়ে আয়োজিত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, তিস্তা নিয়ে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। আমরা বিদেশিদের কাছে বন্ধুত্ব চাই, প্রভুত্ব চাই না। এ কথাটা প্রমাণ করার জন্যই তিস্তাপারে আজকের এই আয়োজন। 
এ সময় কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রমহমান মোস্তফা, সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বেবু, হাসিবুর রহমান হাসিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
অন্যদিকে উলিপুরে অবস্থান কর্মসূচিতে হাজারো নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থীসহ নদীপারের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ারে মুখরিত হয় থেতরাই পাকারমাথা এলাকা। বিকেলে তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির উপজেলা সমন্বয়ক হায়দার আলীর সভাপতিতে বক্তব্য দেন ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী, আব্দুল বারী, ওবায়দুর রহমান বুলবুল, আবু হানিফ প্রমুখ।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স সমন বয়ক বন ধ ত ব আম দ র প ন ব এনপ ল ইসল ম র রহম ন কম ট র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।

শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।

২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।

আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।

সূত্র: এনবিসি নিউজ

আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ