ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে যুবলীগের সাবেক এক নেতাকে আটকের পর তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ছাড়িয়ে নেন। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর বনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি আঠারবাড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে তিনি বহিষ্কৃত হন। রায়বাজারের একটি দোকান থেকে তাঁকে হেফাজতে নেয় আঠারবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।
মিজানুর রহমানের সমর্থকদের দাবি, বহিষ্কৃত হওয়ার পর আর কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন তিনি। তারপরও পুলিশ তাঁকে আটক করে।

স্থানীয় দুজন বাসিন্দা বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ মিজানুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যায়। ওই সময় তাঁর কয়েক শ অনুসারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনে গিয়ে তাঁকে আটকের কারণ জানতে চান। ওই সময় তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলতে থাকেন তাঁরা।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আঠারবাড়ি রায়বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ গোলাম কিবরীয়ার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি। এ দিকে ঘটনার খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানা-পুলিশ ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুর রহমান বলেন, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ঘেরাও করা হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা নেই। তিনি ব্রিকফিল্ড ব্যবসায়ী হওয়ায় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নেওয়ার পর তাঁর অনুসারীরা ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সেখানে যান। পরে কথাবার্তা বলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

মামলা ও অভিযোগ ছাড়া কেন আটক করা হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, সোহাগী এলাকায় একটি ঘটনা হয়েছিল। সে ঘটনার সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তথ্য নেওয়া হচ্ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ তদন ত ক ন দ র র রহম ন অন স র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

৫ কোটি টাকার সেতুতে যানবাহন চলবে কবে

ঈশ্বরগঞ্জ-আঠারবাড়ী আঞ্চলিক সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার। ১১৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালে এর সংস্কার কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ অংশের কাজ সম্পন্ন হলেও অধিগ্রহণ জটিলতায় পৌর এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার এবং সোহাগী ইউনিয়নের কিছু অংশে কাজ আটকে আছে। ২০২২ সালে ইউনিয়নের বগাপুতা খালের ওপর সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১ দশমিক ৮২৮ মিটার একটি সেতু নির্মাণ করা হয়।

এর পর পার হয়েছে আড়াই বছর। কিন্তু সেতুতে যানবাহন চলাচলই শুরু হয়নি। কারণ সংযোগ সড়কই যে নেই। তাহের ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। অবকাঠামোর কাজ শেষ হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সংযোগ সড়ক নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বগাপুতা খালের ওপর সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষ।

সংযোগ সড়কের কাজ কবে সম্পন্ন হবে, সেটিও নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। স্থানীয় বাসিন্দা মো. সোহাগ বলেন, চোখের সামনে সেতু নির্মাণ হয়ে আছে, অথচ কোনো কাজেই আসছে না। তাঁর অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা নিরসন হয়নি। মানুষের ভোগান্তি লাগবে দ্রুত জমির মালিকদের মূল্য বুঝিয়ে দিয়ে এটি সচল করতে হবে। পুরোনো সেতুর ওপর দিয়ে বড় যানবাহন পার হওয়ার সময় অন্যগুলোকে অপেক্ষা করতে হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, আঠারবাড়ী-ঈশ্বরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের একপাশে খালের ওপর রয়েছে নতুন সেতুটি। দুই পাশে সড়ক নেই। পাশের পুরোনো নড়বড়ে সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন ধরনের হালকা ও ভারী যানবাহন। এ সময় ট্রাকচালক ওয়াদুদ মিয়া বলেন, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন শহর থেকে নানান ধরনের পণ্য আঠারবাড়ী (রায়ের বাজার) সরবরাহে এটিই একমাত্র পথ। পুরো সড়ক ঠিকমতো এলেও পুরোনো সেতুর ওপর উঠতেই কাঁপাকাঁপি শুরু হয়। মনে হয়, ‘এই বুঝি ভেঙে ট্রাকসহ নিচে পড়ে গেলাম’। নতুন সেতু চালু হলে নির্বিঘ্নে চলাচল করা যেত।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সেতুর দুই পাশে ১০ থেকে ১২ জনের জমি রয়েছে। আড়াই বছর আগেই সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও অধিগ্রহণের টাকা ছাড়া জমি ছাড়তে চাইছেন না মালিকরা। ফলে সংযোগ সড়কের অভাবে অচল অবস্থায় পড়ে আছে সেতুটি। অটোরিকশার যাত্রী ইফরাত তানজীম তাবাসসুমকে বিরক্ত নিয়ে বিড় বিড় কিছু বলতে শোনা যায়। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘মরার একটা সেতু শুধু শুধু বানিয়ে ফেলে রাখছে। মানুষের উপকারে আসবে তো দূরের কথা, আরও ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
বগাপুতা গ্রামের বাসিন্দা ও জমির একাধিক মালিকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। আবদুল গফুর, আবদুস ছাত্তার, লতিফ মিয়া, আবদুর রশিদ, মজিবুর রহমান ও আজিজুল হকের ভাষ্য, কর্তৃপক্ষ তাদের জমির সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তারা সংযোগ সড়ক হতে দেবেন না।

সেতুটির দুই পাশের ২৫০ থেকে ৩০০ মিটার ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সংযোগ সড়ক হচ্ছে না বলে জানান সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুস ছালাম। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জমির মালিকদের সাত ধারা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রাক্কলন তৈরির কার্যক্রম চলছে। এটি পাসের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। প্রাক্কলন পাস হয়ে এলে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। এ জন্য কতদিন সময় লাগবে, তা বলা যাচ্ছে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫ কোটি টাকার সেতুতে যানবাহন চলবে কবে