মুক্তি মিলল অপহৃত ২৬ রবারবাগানের শ্রমিকের
Published: 18th, February 2025 GMT
বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী থেকে অপহরণ হওয়া রবারবাগানের ২৬ জন শ্রমিক মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁদের ছেড়ে দেন অপহরণকারীরা। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জাকের হোসেন মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, পরিবার থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য এসব শ্রমিককে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। মুক্তি পাওয়া ২৬ শ্রমিকের মধ্যে ১৫ জনকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
গত রোববার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মুরুংঝিরি এলাকার রবারবাগান থেকে এসব শ্রমিককে অপহরণ করে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। অপহরণের পর শ্রমিকদের প্রত্যেকের মুক্তির জন্য ৫০ হাজার টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন অপহরণকারীরা।
মুরুংঝিরি এলাকার একটি রবারবাগানের মালিক মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেন, রাতে অপহরণকারীরা ওই শ্রমিকদের ছেড়ে দিলে তাঁরা কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড় বাজারে চলে আসেন। এরপর তাঁদের মধ্য থেকে ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি আরও বলেন, অপহরণের পর থেকে যৌথ বাহিনী শ্রমিকদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। এ ছাড়া অপহৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মুক্তিপণ দাবি করা অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দুটি কারণেই অপহরণকারীরা শ্রমিকদের ছেড়ে দিতে পারে।
মুক্তিপণের বিষয়ে জানতে চাইলে ফাঁসিয়াখালীর সাবেক চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, ‘নিশ্চয় টাকা লেনদেন হয়েছে। তবে যৌথ বাহিনীর অভিযানের ভয় ছিল সন্ত্রাসীদের।’
নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবির ১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস কে এম কফিল উদ্দিন বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে সন্ত্রাসীরা অপহৃতদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। মুক্তি পাওয়া শ্রমিকদের কাছ থেকে অপহরণের বিষয়ে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান এখনো চলমান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপহরণক র র
এছাড়াও পড়ুন:
‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশের স্মরণে শাহবাগে সমাবেশ, ৩ দফা দাবি
‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশ’–এর এক বছর পূর্তিতে প্রগতিশীল নারী সংগঠন, স্বতন্ত্র অধিকারকর্মী এবং নারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আজ সোমবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশের প্রতিপাদ্য ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম চলবেই।
গত বছরের ২৭ জুলাই কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নারীরা পল্টন মোড়ে ‘হামার বেটাক মারলু ক্যানে’ শীর্ষক একটি সমাবেশ করেছিলেন।
সমাবেশে নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলের অবসান ঘটলেও এখনো ফ্যাসিবাদী কাঠামোর অবসান হয়নি। বরং দিন দিন নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে। যেখানে পাহাড়–সমতলের একের পর এক নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও মব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে নিপীড়ককে আশ্রয় ও দায়মুক্তি দিচ্ছে রাষ্ট্র।
তথ্য আপা রাজস্বকরণ আন্দোলনের প্রতিনিধি রোমানা ইসলাম বলেন, তথ্য আপারা দুই মাস ধরে প্রেসক্লাবে তাঁদের চাকরি রাজস্বকরণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন, বসে আছেন। অথচ তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। তাঁদের ৭ বছর কর্মজীবনে বেতন থেকে কেটে নেওয়া ২০ কোটি টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।
হিল উইমেনস ফেডারেশনের সদস্য রুপসী চাকমা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে, তাই ভেবেছিল বাংলাদেশের নারী সমাজ। কিন্তু চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস নিরাপদে ঘুরে বেড়ালেও কল্পনা চাকমার যে মামলাটি আওয়ামী সরকার খারিজ করেছে, তা একইভাবে বলবৎ আছে এবং মামলা পুনরায় শুরুর জন্য শুনানির তারিখ বারবার পেছাচ্ছে।
বম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লালরিথাং বম অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকার বম জাতির ওপর ‘কালেক্টিভ পানিশমেন্ট’–এর নামে যত্রতত্র থেকে নিরীহ বমদের আটক শুরু করেছিল। আজও কারাগারে বমরা আটকে আছে। তিনজন বম ব্যক্তিকে কারাগারে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আজ সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, দুই মাস ধরে আন্দোলনরত তথ্য আপাদের চাকরি রাজস্বভুক্ত করতে হবে; নিম্ন আদালতে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের আদেশ বাতিল করে পুনঃ তদন্ত ও চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচারের আওতায় আনা এবং পাহাড় ও সমতলে নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং মব সন্ত্রাসের বিচার করতে হবে এবং কারাগারে আটক সব বমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন শহীদ শেখ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলু মাখামিন শিল্পী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অর্ণি আনজুম প্রমুখ।
পাশাপাশি সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন অ্যাকটিভিস্ট ও কবি ফেরদৌস আরা রুমী, আইনজীবী সাদিয়া আরমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য জাকিয়া শিশির, অ্যাকটিভিস্ট প্রাপ্তি তাপসী, চিকিৎসক সুরাইয়া ইয়াসমিনসহ আরও অনেকে।
সমাবেশে সূচনা ও সমাপনী সংগীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।