মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক এমপি জাকির হোসেন সরকারের ভাগ্নের বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা।

মিঠাপুকুর প্রেসক্লাবের হল রুমে বিকেল চারটায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভুক্তভোগী তিনটি পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী প্রফুল্ল সাহা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সাবেক এমপি জাকির হোসেন সরকারের ভাগ্নে আক্তারুজ্জামান সোহাগ প্রভাব বিস্তার করে আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছেন। জাকির হোসেন সরকার উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে এমপি হওয়ার পর সোহাগ সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছেন। আমার পৈত্রিক সম্পত্তির ৯ শতাংশ বসতভিটা জোরপূর্বক দখল করে প্রাচীর নির্মাণ ও আমাদের তিনটি পরিবারকে উচ্ছেদ করেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সোহাগ তার গুন্ডাবাহিনী দিয়ে দুই মাস থেকে আমাদের জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেন। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন বারবার সতর্ক করলেও আক্তারুজ্জামান সোহাগ আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাজ চলমান রেখেছেন।

এ সময় প্রফুল্ল সাহার পরিবার সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমাদের দয়া করে একটু মানবিকতা দেখান। যারা সংখ্যালঘু ভেবে আমাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাই।

অভিযোগের বিষয়ে আক্তারুজ্জামান সোহাগ বলেন, তারা ৫৬ শতক জমির ওপর অভিযোগ করেছে। এরমধ্যে ৮ শতক জমি আমার বাবা ১৯৯৮ সালে কিনেছিলেন। তারা ২০১৬ সালে আদালতে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু আমার কাগজপত্র সঠিক রয়েছে। আমি কারও জমি দখল করিনি। রাজনৈতিক কারণে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আদালত আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। কাজ বন্ধ করতে বলেননি। আমার অন্য অভিযোগও সঠিক নয়।

মিঠাপুকুর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ কোনো সংস্কার কমিশনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন। তাদের প্রশ্ন, ঐকমত্য কমিশনে কোনো রাজনৈতিক দলকেও প্রশ্ন করতে দেখা গেল না যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি না থাকলে বা তাদের বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য গঠন হয়।

‘অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ৮% জনগোষ্ঠীর অবস্থা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের লিখিত বক্তব্যে। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) তরুণ রায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের আগে হোক বা পরে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখনো ৮ শতাংশ শুধু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জায়গা। তাদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে না কোনো রাজনৈতিক দলকে। সে ক্ষেত্রে এমন অবস্থা চলমান থাকলে ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে ভবিষ্যতে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র বয়কটের সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আক্রান্ত হতে থাকেন। তাৎক্ষণিকভাবে গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলন থেকে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ ৮ দফা দাবি তোলা হয়। সেসব দাবি বাস্তবায়নে তখন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু গত ১ বছরে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আশানুরূপ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেছে, বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আগামী দিনের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ৮ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে। ৮ দফা যে দেশের ৮ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের মনের কথা জানান দিতে ২২ আগস্ট ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক সুস্মিতা কর বলেন, সরকারের ঐকমত্য কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নেই। দেশের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তো ঐকমত্য গঠন হতে পারে না। গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট আছে। সংখ্যালঘুদের সব সংগঠন আট দফা দাবিতে একাত্ম। যদি নির্বাচন–পূর্ববর্তী সময়ে সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এসব দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে না দেখা যায়, তাহলে হয়তো সংখ্যালঘুরা ভোট বয়কট লড়তে পারে।

এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক সুব্রত বল্লভ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আদিবাসী সংগঠক সুমন ত্রিপুরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ