ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ৪ বছরেও হয়নি সংযোগ সড়ক
Published: 19th, February 2025 GMT
উল্লাপাড়ার ফুলজোড় নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয় চার বছর আগে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় দীর্ঘদিনে সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ) নির্মাণ হয়নি। ফলে কাজে আসছে না আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেতুর দুই পাশের অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ।
স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বড়হর ইউনিয়নের সড়াতৈল গ্রামের মাঝে ফুলজোড় শাখা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। আড়াই কোটি টাকার সেতুটির কাজ পায় মেসার্স বিএইচ বি অ্যান্ড এলাই জেবি এন্টারপ্রাইজ। ২০২০ সালে শুরু হওয়া কাজটি শেষ হয় ২০২১ সালে। সেতুর দুই পাশে প্রায় ১০০ মিটার করে সংযোগ সড়ক নির্মানে সাতজনের কাছ থেকে ৩৭ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পরে ভূমি মালিকদের কয়েক দফা নোটিশ দেওয়া হয়। আজ পর্যন্ত তাদের জমির দাম বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ক্ষতিপূরণ না পেয়ে তারা সড়ক নির্মাণে বাধা দিয়েছেন। মূলত এ কারণেই সেতু নির্মাণের পর চার বছরেও দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যায়নি। ঠিকাদারের লোকজন স্থানীয়দের যাতায়াতের জন্য সেতুর দুই পাশে কিছু মাটি ফেলে দিয়েছিলেন। গত কয়েক বছরে বর্ষায় সেইসব মাটি অনেকটাই ধুয়েমুছে গেছে।
ভূমি মালিক আশরাফুল ইসলাম জানান, তাঁর ৬ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমির দাম বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এলজিইডি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক সভা হয়েছে। তারা টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে দায় সারছেন। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। দেব দিচ্ছি করে তিন বছরেরও বেশি সময় পার করে দিয়েছে।
একই এলাকার শাহনাজ বেগমের আট শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তিনিও জমির দাম পাননি। সংগত কারণে তারা সংযোগ সড়ক নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন। শাহনাজ বেগম অবিলম্বে তাদের পাওনা টাকা পরিশোধের দাবি জানান।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী মো.
সিরাজগঞ্জের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার নুসরাত জাহান জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা না বলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ স য গ সড়ক সড়ক ন র ম
এছাড়াও পড়ুন:
বছরে ৬ লাখ অপরিণত শিশুর জন্ম
দেশে বছরে গড়ে জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৬ লাখ অপরিণত (প্রিম্যাচিওর) শিশু। জন্মের সময় গর্ভকাল পূর্ণ না হওয়ায় এসব নবজাতকের ঝুঁকি থাকে নানা জটিলতায় পড়ার, এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে বেশি। তাই নবজাতকদের মৃত্যু হ্রাসে অপরিণত নবজাতক জন্ম প্রতিরোধে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার শহীদ ডা. মিল্টন হলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওন্যাটোলজি বিভাগ ও সেভ দ্যা চিলড্রেন আয়োজিত সভায় এই তথ্য জানানো হয়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইসমত জাহান। তিনি বলেন, মা ও অপরিণত নবজাতকদের জীবন রক্ষাকারী প্রকল্প সেভিং উইমেন এন্ড প্রিমেচিউর বেবিজ বা সোয়াপের মাধ্যমে দেশের পাচঁটি হাসপাতাল মা ও নবজাতক সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৬৫ হাজার গর্ভবতী মা ও ৮৭ হাজার নবজাতককে সেবা পেয়েছে। দেড় হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো ভায়ু বাবল সিপ্যাপ, ফ্যামিলি সেন্টার কেয়ার, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার, নিওনেটালি লাইভ ইত্যাদিকে সফলভাবে প্রয়োগ করে নবজাতকদের জীবন রক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে।
বিএমইউর নিওনাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে বছরে ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। সেই হিসেবে বছরে অপরিণত ৬ লাখ শিশু জন্মায়। নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে বর্তমানে নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জন থেকে ১২ জনে কমিয়ে আনা। যদিও এই প্রকল্পের কার্যক্রমসহ সামগ্রিক প্রচেষ্টায় নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জনে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
বিএমইউর ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো অপরিণত নবজাতকের জন্ম দান। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। গত ১০ বছর ধরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। এটি প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নেই। কেনো কমানো যাচ্ছে না এবিষয়েও কোনো গবেষণা হয় না। তবে সচেতনতা, প্রসূতি সেবা এবং মাতৃস্বাস্থ্য কার্যক্রম জোরদার করলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। অপরিণত শিশুর জন্মের পেছনে রয়েছে মাতৃস্বাস্থ্যের অবনতি, অপুষ্টি, সময়মতো প্রসবপরিচর্যার অভাব, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও প্রসবকালীন জটিলতা। এ ছাড়া ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণও অন্যতম কারণ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, সোয়াপের মাধ্যমে নবজাতকদের পরিবার কেন্দ্রিক চিকিৎসা (ফ্যামিলি সেন্টারড কেয়ার-এফসিসি) মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় বিরাট অবদান রাখছে। এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বৃহৎ আকারে কাজে লাগাতে পারলে সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর গবেষণা ও উন্নয়ন অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান।