সাতক্ষীরায় গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় চালকের সহকারী নিহত, আহত ১৬ যাত্রী
Published: 20th, February 2025 GMT
সাতক্ষীরায় গাছের সঙ্গে ধাক্কায় যাত্রীবাহী বাস দুমড়েমুচড়ে যাওয়ায় চালকের এক সহকারী নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৬ জন যাত্রী। আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে সাতক্ষীরা শহরের সার্কিট হাউস মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর সাতক্ষীরা-যশোর মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
নিহত ব্যক্তির নাম শাহাদাত হোসেন (২২)। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের ছেলে। এই দুর্ঘটনায় আহত বাসযাত্রীদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তপন কুমার ঘোষ নামের বাসটির এক যাত্রী বলেন, সাতক্ষীরাগামী দিগন্ত পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে তিনি গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। চালকের ঘুম চলে আসায় নাভারণ এলাকা ছাড়ার পর বারবার তিনি ব্রেক কষছিলেন। আজ ভোর সাড়ে চারটার দিকে সার্কিট হাউস মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি আশা সমিতির পাশের একটি গাছের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়। এতে ওই গাছটির কিছু অংশ বাসের ভেতর ঢুকে বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ওই সময় বাসটিতে ৪০ থেকে ৪৫ জন যাত্রী ছিলেন।
দুর্ঘটনার পরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় বাসটির যাত্রীদের উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যরা। পরে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নেওয়া হয়। এ সময় সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি সরিয়ে নিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিকে গাছ কেটে যাত্রীদের বের করার সময় নায়েব আলী নামের সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনসের এক কনস্টেবল আহত হন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশরাফুল হক জানান, ওই দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চায়না খাতুন ও আলমগীর নামের দুই ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামিনুল হক জানান, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করেছে। পরে চালকের সহকারী শাহাদাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকায় নেওয়ার পথে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।