ক্রসফায়ারের নামে সাজানো হত্যাকাণ্ড ছিল নিষ্ঠুরতম রাষ্ট্রীয় মিথ্যাচার: জহির উদ্দিন স্বপন
Published: 21st, February 2025 GMT
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনামলে বিরোধী দলকে দমনের জন্য খুন, গুম, গায়েবি মামলাসহ মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ক্রসফায়ারের নামে সাজানো ওই হত্যাকাণ্ড ছিল এর মধ্যে সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম রাষ্ট্রীয় মিথ্যাচার।
আজ শুক্রবার বিকেলে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় অনুষ্ঠিত এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। আগৈলঝাড়ায় ২০১৫ সালের ‘ছাত্রদল নেতা টিপু ও কবিরকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যার স্মরণে ও বিচারের দাবি’তে আগৈলঝাড়া বিএইচপি একাডেমি ময়দানে এই জনসভার আয়োজন করে উপজেলা বিএনপি।
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে গত ১৫ বছরের এসব নারকীয় হত্যাকাণ্ড এবং জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সব হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করা হয়েছে উল্লেখ করে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জহির উদ্দিন বলেন, দেশবাসী অবিলম্বে সব খুন, গুম ও লুণ্ঠনের বিচার চায়। বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে জনগণের ক্ষোভকে পুঁজি করবে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা।
অবাধ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে জনসভায় জহির উদ্দিন আরও বলেন, বিএনপি অবশ্যই সংস্কারের পক্ষে; কিন্তু সে সংস্কার হতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। কারণ, দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা একটি সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচনের। সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতিও অন্তর্বর্তী সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।
জহির উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৫ বছর দেশে ভোট হয়নি, হয়েছে প্রহসন। দিনের ভোট হয়েছে রাতে; কিন্তু আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এমন রাষ্ট্র তৈরি করব, যে রাষ্ট্রে আর কোনো দিন নিশিরাতের ভোট হবে না।’ তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে যথেচ্ছ ব্যবহার করে বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে, গুম-নির্যাতন চালিয়েছে। ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আগৈলঝাড়ার ছাত্রদল নেতা টিপু ও কবিরকে এর ধারাবাহিকতায় ক্রসফায়ারের নামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।
জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা যেদিন দেশে কার্যকর গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারব, সেদিন এসব শহীদের আত্মত্যাগ সফল হবে। এ জন্য চাই অবাধ নির্বাচন, আর তা নিশ্চিত করতে হবে জরুরি সংস্কার সম্পন্ন করে। বাকি সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেবে নির্বাচিত সংসদ। ফ্যাসিবাদকে কোনো নৈরাজ্যবাদ দমন করতে পারে না। কেবল জনগণের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই তা সম্ভব।’
উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হাফিজ শিকদারের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মোল্লা বশির আহমেদের সঞ্চালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান শহীদুল্লাহ, সদস্যসচিব মিজানুর রহমান, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সৈয়দ সরোয়ার আলম প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের কত পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে, কোথায় সেগুলোর অবস্থান
ইরানের রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন শহরে আজ শুক্রবার ভোররাতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পারমাণবিক কর্মসূচির মূল কেন্দ্র লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ হামলার আগে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন সময় ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি দ্রুত সম্প্রসারণ করছে—ক্রমবর্ধমান এই আশঙ্কার কারণেই মূলত এসব বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
২০১৫ সালে ছয় প্রভাবশালী দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে ইরানকে পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত রাখার শর্ত দেওয়া হয়। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর থেকে ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করেছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইরানে মোট সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ছিল প্রায় ৯ হাজার ২৪৭ দশমিক ৬ কেজি বা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৪৫ গুণ বেশি।
মোট মজুতকৃত ইউরেনিয়ামের মধ্যে ৪০৮ দশমিক ৬ কেজি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে ইরান, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে প্রযোজ্য সমৃদ্ধকরণের চেয়ে সামান্য কম। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে হয়।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্রে একটি হামলা হয়। এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান।ভিয়েনাভিত্তিক সংস্থা আইএইএ-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাত্ত্বিকভাবে ইরানের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম রয়েছে, আরও কিছু পরিশোধন করলে তা দিয়ে দেশটি প্রায় ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।
তবে ইরান বরাবরই এ কথা অস্বীকার করে আসছে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো অভিপ্রায় নেই বলে জানিয়েছে দেশটি।
নিচে ইরানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনার তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক দল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে:
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র০১. নাতাঞ্জ
তেহরান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নাতাঞ্জ ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এটি গভীরভাবে সুরক্ষিত (বাংকারযুক্ত) একটি স্থাপনা। কেন্দ্রটির অস্তিত্ব প্রথম সামনে আসে ২০০২ সালে।
নাতাঞ্জের দুটি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে প্রায় ৭০টি সেন্ট্রিফিউজের সারি আছে। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রের কার্যক্রম ভূগর্ভে পরিচালিত হয়। সেন্ট্রিফিউজ হলো এমন যন্ত্র, যা ব্যবহার করে ধাপে ধাপে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয়।
২০২১ সালের এপ্রিলে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্রে একটি হামলা হয়। এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান।
আজ শুক্রবার ভোররাতে এই কেন্দ্রে হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। কেন্দ্রটির পাশাপাশি সেখানে অবস্থানরত পরমাণুবিজ্ঞানীদেরও নিশানা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
আইএইএ–এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি নিশ্চিত করেছেন, যেসব স্থান লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি নাতাঞ্জ।
মধ্য ইরানের পবিত্র শহর কোমের কাছে একটি পাহাড়ের নিচে গোপনে নির্মিত পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্র ফোর্ডো ২০০৯ সালে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এটি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে তৈরি করা হয়।ফোর্ডো
মধ্য ইরানের পবিত্র শহর কোমের কাছে একটি পাহাড়ের নিচে গোপনে নির্মিত পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্র ফোর্ডো ২০০৯ সালে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এটি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে তৈরি করা হয়।
প্রাথমিকভাবে এটিকে ‘জরুরি’ স্থাপনা হিসেবে বর্ণনা করা হলেও পরে ইরান জানায়, এটি একটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। সম্ভাব্য বিমান হামলা থেকে রক্ষার জন্য মাটির নিচে এটি নির্মাণ করা হয়। এই কেন্দ্রে প্রায় তিন হাজার সেন্ট্রিফিউজ বসানো সম্ভব।
২০২৩ সালে এই কেন্দ্রে ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কণা পাওয়া যায়। ইরানের দাবি, পরিশোধন প্রক্রিয়ায় অনিচ্ছাকৃত তারতম্যের কারণে এমনটি হয়েছে।
আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু কী, কারা জড়িত, নিহত কারা ৮ ঘণ্টা আগেইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র