বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনামলে বিরোধী দলকে দমনের জন্য খুন, গুম, গায়েবি মামলাসহ মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ক্রসফায়ারের নামে সাজানো ওই হত্যাকাণ্ড ছিল এর মধ্যে সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম রাষ্ট্রীয় মিথ্যাচার।

আজ শুক্রবার বিকেলে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় অনুষ্ঠিত এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। আগৈলঝাড়ায় ২০১৫ সালের ‘ছাত্রদল নেতা টিপু ও কবিরকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যার স্মরণে ও বিচারের দাবি’তে আগৈলঝাড়া বিএইচপি একাডেমি ময়দানে এই জনসভার আয়োজন করে উপজেলা বিএনপি।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে গত ১৫ বছরের এসব নারকীয় হত্যাকাণ্ড এবং জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সব হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করা হয়েছে উল্লেখ করে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জহির উদ্দিন বলেন, দেশবাসী অবিলম্বে সব খুন, গুম ও লুণ্ঠনের বিচার চায়। বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে জনগণের ক্ষোভকে পুঁজি করবে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা।

অবাধ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে জনসভায় জহির উদ্দিন আরও বলেন, বিএনপি অবশ্যই সংস্কারের পক্ষে; কিন্তু সে সংস্কার হতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। কারণ, দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা একটি সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচনের। সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতিও অন্তর্বর্তী সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।

জহির উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৫ বছর দেশে ভোট হয়নি, হয়েছে প্রহসন। দিনের ভোট হয়েছে রাতে; কিন্তু আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এমন রাষ্ট্র তৈরি করব, যে রাষ্ট্রে আর কোনো দিন নিশিরাতের ভোট হবে না।’ তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে যথেচ্ছ ব্যবহার করে বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে, গুম-নির্যাতন চালিয়েছে। ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আগৈলঝাড়ার ছাত্রদল নেতা টিপু ও কবিরকে এর ধারাবাহিকতায় ক্রসফায়ারের নামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।

জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা যেদিন দেশে কার্যকর গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারব, সেদিন এসব শহীদের আত্মত্যাগ সফল হবে। এ জন্য চাই অবাধ নির্বাচন, আর তা নিশ্চিত করতে হবে জরুরি সংস্কার সম্পন্ন করে। বাকি সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেবে নির্বাচিত সংসদ। ফ্যাসিবাদকে কোনো নৈরাজ্যবাদ দমন করতে পারে না। কেবল জনগণের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই তা সম্ভব।’

উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হাফিজ শিকদারের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মোল্লা বশির আহমেদের সঞ্চালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান শহীদুল্লাহ, সদস্যসচিব মিজানুর রহমান, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সৈয়দ সরোয়ার আলম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র জনসভ য়

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।

আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রতিনিধিত্ব করার ‘প্রতীকহীন’ সুযোগ 
  • ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন
  • আশুলিয়ায় বিএনপির জনসভা ও এনসিপির পদযাত্রা আজ, নিরাপত্তা জোরদার
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষ, আদেশ ৬ আগস্ট
  • রাবি ছাত্রদলের সভাপতি রাহী, সম্পাদক জহুরুল
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার