পণ্যবাহী ট্রেনের অভাবে কনটেইনার জমে যাচ্ছে
Published: 22nd, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে ধারণক্ষমতার প্রায় সোয়া দুই গুণ বেশি কনটেইনার জমে গেছে। বর্তমানে এখান থেকে ঢাকার কমলাপুরে নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ১ হাজার ৮১১টি কনটেইনার। অথচ বন্দর ইয়ার্ডের মোট কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৮২৫ একক, অর্থাৎ ধারণক্ষমতার চেয়ে ৯৮৬টি অতিরিক্ত কনটেইনারের স্তূপ জমেছে বন্দরে। এর ওপর বহির্নোঙরে খালাসের অপেক্ষায় আছে আরও ৪০০–৫০০ কনটেইনার। এর মানে সামনের দিনে চাপ আরও বাড়বে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, পণ্যবাহী ট্রেনের অভাবে এসব কনটেইনার ঢাকার পাঠানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে রেলওয়ে বিভাগ জানায়, পর্যাপ্ত ইঞ্জিন না থাকায় তারা চাহিদা অনুযায়ী পণ্যবাহী ট্রেন চালাতে পারছে না। এক বছর ধরে এ সমস্যা প্রকট হয়েছে। আগামী দু-তিন বছরেও ইঞ্জিনের সংকট দূর হবে না।
আমদানিকারকেরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুরগামী কনটেইনারবাহী ট্রেন চলে দুটি, যদিও দরকার চার–পাঁচটির। ট্রেনের অভাবে বন্দর থেকে কমলাপুর কনটেইনার নিতে ১৫–১৬ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
পবিত্র রমজান মাসের আগে বন্দরে কনটেইনারের স্তূপ জমে যাওয়ায় এবং কনটেইনার পরিবহনে বিলম্ব ঘটায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় আছেন আমদানিকারকেরা। বাজারেও এর প্রভাব পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমদানিকারকেরা বলেন, পণ্য পরিবহনে দেরি হলে বন্দরের মাশুল চার্জ বাড়বে। শেষ পর্যন্ত এ অতিরিক্ত মাশুল গিয়ে পড়বে ভোক্তার ওপর।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হওয়া কনটেইনারের ৩ শতাংশ রেলপথে, ১ শতাংশের কম নৌপথে ও বাকি ৯৬ শতাংশই সড়কপথে আনা-নেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেলপথে আমদানি-রপ্তানি ও খালি অবস্থায় আনা-নেওয়া হয়েছে ৮৮ হাজার একক কনটেইনার। কনটেইনারে ইস্পাত পণ্যসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন হয়।
১৫-১৬ দিন অপেক্ষার পরও বন্দর থেকে কনটেইনার কমলাপুরে পাঠানো যাচ্ছে না। এতে আমদানিকারকেরা চাপে আছেন।খায়রুল আলম, সহসভাপতি, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফা)রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্যবাহী ট্রেন চালাতে প্রতিদিন গড়ে ১৩টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। এসব ইঞ্জিন পেলে প্রতিদিন ছয় থেকে আটটি ট্রেন চালানো সম্ভব। বাস্তবে ইঞ্জিন পাওয়া যাচ্ছে পাঁচ–ছয়টি। এসব ইঞ্জিন দিয়ে কনটেইনার ও তেলবাহী ট্রেন চালাতে হয়। কনটেইনার বহন করে মাত্র দুটি ট্রেন।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওপিএস) মো.
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিনে কনটেইনার পরিবহনের জন্য মাত্র ২৮টি ট্রেন পেয়েছে বন্দর। এসব ট্রেনে ১ হাজার ১৬৭ একক কনটেইনার পাঠানো হয়েছে। এর আগে জানুয়ারি মাসে ৫৬টি ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পরিবহন করা হয় ২ হাজার ৬৯৮ একক কনটেইনার।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ২ হাজার ৯৭টি কনটেইনার পরিবহন করা হয়। পরের অর্থবছরে কনটেইনার পরিবহন কমে হয় ৯২ হাজার ৮২৮টি। পণ্যের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ২৬ হাজার ৩৩২ মেট্রিক টন। দুই বছরের ব্যবধানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ট্রেনে পরিবহন করা পণ্যের পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে, অর্থাৎ মাত্র ৭ লাখ ৯০ হাজার ৫৩৬ মেট্রিক টনে নেমে আসে। আর পরিবহন করা কনটেইনারের সংখ্যা কমে হয় ৮০ হাজার ৭১৯টি।
রেলের পূর্বাঞ্চলের পণ্য পরিবহন খাতের আয়ের সিংহভাগ আসে কনটেইনার পরিবহনের মাধ্যমে। গত অর্থবছরে পণ্য পরিবহন থেকে রেলের পূর্বাঞ্চলের আয় হয়েছিল ১৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু কনটেইনার পরিবহন থেকে আয় হয় ১১৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ১৫৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
পণ্য পরিবহন সংকট প্রকট হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তরে রেলওয়ে ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে কনটেইনারের চাপ কমাতে প্রতিদিন তিনটি করে কনটেইনারবাহী ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা এখনো কার্যকর হয়নি।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি ট্রেনে ৬২ একক কনটেইনার পরিবহন করা যায়। দিনে গড়ে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে ১২৪ একক কনটেইনার। যদি তিনটি ট্রেন চালু করা গেলে জমে থাকা কনটেইনার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে অন্তত ১০ দিন লাগবে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরে কনটেইনার–জট পরিস্থিতি খুব খারাপ। ১৫-১৬ দিন অপেক্ষার পরও বন্দর থেকে কনটেইনার কমলাপুরে পাঠানো যাচ্ছে না। এতে আমদানিকারকেরা চাপে আছেন। কেননা, সামনে পবিত্র রমজান মাস। এসব কনটেইনারে রোজার পণ্য রয়েছে। এগুলো যদি সময়মতো সরবরাহ করা না যায়, তাহলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কমল প র র লওয় র অন য য়
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল