ফাল্গুনের শুরুর দিকে আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহীতে ৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। চাষিরা বলছেন, এই বৃষ্টিতে আমের মুকুলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।

বাঘার আমচাষী শফিকুল ইসলাম সানা বলেছেন, বাঘায় বেশ ভালো বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টি আমের মুকুলের সর্বনাশ করেছে। তিনি বলেন, বাঘা উপজেলার অধিকাংশ গাছের মুকুল এসেছে। সেই মুকুলের ফুল ফুটে এখন পরাগায়ন চলছিলো। এমন অবস্থায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় অধিকাংশ মুকুল পচে নষ্ট হয়ে যাবে। 

পুঠিয়া উপজেলার আমচাষী সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, পুঠিয়া উপজেলার মুকুলগুলো কেবল বের হয়েছে। এখনো মুকুলের ফুল ফোটেনি। তাই বৃষ্টিতে মুকুলের ক্ষতি হবে না। তবে বৃষ্টির আগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় বেশ কিছু মুকুল ঝরে গেছে। এছাড়া যেসব গাছের মুকুল এখনো ফুটে বের হয়নি- সেগুলোতে এখন আর মুকুল বের হবে না। বৃষ্টির পানি পেয়ে এসব গাছে এখন নতুন পাতা বের হবে। 

তিনি আরও বলেন, সামনের দিনগুলোতে কুয়াশা না থাকলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে যাবে। তবে কুয়াশায় সূর্যর দেখা না পাওয়া গেলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার আমচাষী সোহাগ আলী বলেন, ঝড়ে সব কচি মুকুল ঝরে গেছে।

রাজশাহী ফল গবেষণাগারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্টিক টন। তবে গতবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, এবারো সেটাই লক্ষ্যমাত্রা।

তিনি বলেন, যেসব মুকুলের ফুল ফুটে আছে- এই বৃষ্টিতে সেগুলোর ক্ষতি হবে। যেগুলোর ফুল এখনো ফুটেনি সেগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না। তবে সামনে ঘন কুয়াশা বা নিম্মচাপ হলে আরও বেশি ক্ষতি হবে।’

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহীতে ৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিলো ৭ থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল।

তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে শুধু রাত আর সকালে কুয়াশা থাকবে। দিনে রোদ থাকবে। নিম্নচাপের কোনো সম্ভাবনা নেই। আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ