মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ঝুঁকি কমানো সম্ভব
Published: 23rd, February 2025 GMT
বিদ্যমান আইনগুলোর দুর্বল বাস্তবায়নের কারণে নিম্নমানের হেলমেটে বাজার ছেয়ে গেছে। ফলে লাখো মোটরসাইকেলচালকের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মানসম্পন্ন হেলমেটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহারের মাধ্যমে মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীদের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এ জন্য মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহারে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক, ব্র্যাক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ‘স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট অ্যাডভোকেসি ইভেন্টে’ বক্তারা এ কথা বলেছেন। রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে এই অনুষ্ঠানে সরকারের উপদেষ্টা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, উন্নয়ন অংশীদার এবং বেসরকারি খাতের কর্মকর্তারা অংশ নেন। তাঁরা মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহারে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং তা ব্যবহারে জনসাধারণকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। পরে ব্র্যাকের মিডিয়া রিলেশনস অ্যান্ড পার্টনারশিপস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিপুলসংখ্যক মৃত্যু দেশের উদ্বেগজনক সড়ক নিরাপত্তাব্যবস্থাকে আরও নাজুক করেছে তুলেছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান মতে, ২০২৪ সালে দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৭০৬ জন মারা গেছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ৩১ দশমিক ১৩ শতাংশ।
অন্যদিকে বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, গত বছর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২ হাজার ৬০৯ জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশের বেশি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রথমেই যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে মোটরসাইকেলচালকদের প্রশিক্ষণ, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা, চিহ্ন স্থাপন, পথচারীদের নিরাপত্তায় জোরদার, গতি পর্যবেক্ষণ এবং চালকদের মধ্যে কেউ মাদকসেবী কি না, তা চিহ্নিত করতে ‘ডোপ টেস্টিং’ বাস্তবায়ন করা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম, বিআরটিএর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিন এবং বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন, ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হুসেইন, ভলকান লাইফস্টাইল লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম সাফাত ইশতিয়াক, বিশ্বব্যাংকের প্রোগ্রাম অফিসার দিলশাদ দোসানী প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন য় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।