বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়েছে। একসঙ্গে আটকে গেছে ঋণের ফাঁদেও। বিগত সরকারের সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে প্রচার ছিল, তা ফাঁপা বুলি ছাড়া আর কিছু নয়। কোনো ক্ষেত্রেই পরিসংখ্যানের যথার্থতা প্রমাণ করা যায়নি। উচ্চ বেকারত্বই তার বড় প্রমাণ।
ঢাকায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল রোববার ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরানো: সংস্কার এজেন্ডা’ শিরোনামে এক অধিবেশনে এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদরা। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অধিবেশনটির সঞ্চালনা করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.
সমাপনী দিনে গতকাল চারটি কর্মঅধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনের সম্মেলনে সব মিলে ছিল মোট ২৪টি কর্মঅধিবেশন। দেশ-বিদেশের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, উন্নয়নকর্মী এবং শিক্ষার্থীরা গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন এতে। গত শুক্রবার সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।
অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরানো-সংক্রান্ত এ কর্মঅধিবেশনে প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে গেছে। বিনিয়োগ থমকে আছে। রপ্তানির অবস্থাও যে খুব ভালো, সে কথা বলা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ঋণ পরিশোধে বেশি ব্যয় হচ্ছে। রাজস্ব আয়ের তুলনায় স্থানীয় ঋণও বাড়ছে।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এসব সুপারিশের আলোকে সংস্কার পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ঐকমত্য তৈরি হবে কিনা–সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত সময়ে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে যে প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে, সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বাস্তবে তার প্রতিফলন ছিল না। প্রবৃদ্ধি হলে কর্মসংস্থান বাড়ত। কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়েনি। কিছু ক্ষেত্রে বরং কমেছে।
আলোচনায় গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানও বলেন, দেশ মধ্যমে আয়ের দেশের পাশাপাশি ঋণের ফাঁদেও আটকে পড়েছে। বড় বড় প্রকল্পের রেয়াতকাল শেষ হচ্ছে। এখন সুদাসল পরিশোধের সময় এসেছে।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার ব্যবসায়ীদের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা বাস্তবসম্মত হতে পারে না। নেপাল ও ভুটানের মতো দেশও এলডিসি থেকে বেরিয়ে এসেছে। ভর্তুকি থেকে উৎপাদন সক্ষমতার দিকে যেতে হবে।
অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গঠিত টাস্কফোর্সের সভাপতি বিআইডিএস সাবেক মহাপরিচালক ড. কেএএস মুর্শিদ বলেন, কৃষিকে বাঁচাতে হবে। স্বল্পমূল্যে কৃষি প্রযুক্তি কৃষকের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। নতুন জাত উদ্ভাবনে নজর দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, স্বাস্থ্য খাত বরাবরের মতোই অবহেলিত। স্বাস্থ্যে বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ। এ হার করোনাকালেও বাড়েনি। দেশে মাথাপিছু চিকিৎসা ব্যয় ৪২ ডলারেও কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুসারে এটি ৮৮ ডলার হওয়ার কথা। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ
দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে শ্রম-সংক্রান্ত কমিশনের প্রধান ড. সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, শ্রম আইন এবং নীতিমালা থেকে কেন সুবিধা পান না অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। ন্যায্য মজুরি কিংবা অন্যান্য মৌলিক অধিকার খর্ব হলেও আইনের আশ্রয় পান না এসব খাতের শ্রমিকরা। আবার প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জীবন ধারণের মতো ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এ বাস্তবতায় শ্রম আইনের আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।
‘শ্রমবাজার অগ্রাধিকার নির্ধারণ’ বিষয়ক এই কর্মঅধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর তোমু পোটিয়াইনেন, অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ানাতুল ইসলাম, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাগরে ইলিশ মিলছে কম, চড়া দাম আড়তে
নিষেধাজ্ঞা শেষে দীর্ঘ বিরতির পর আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য আড়ত কেবি বাজার। সাগরে প্রায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের ভৈরবতীরের এ মাছ বাজার।
সাগরে মাছ আহরণ শেষে শুক্রবার ভোরে কেবি বাজার ঘাটে দুটি ট্রলার ভেড়ে। তবে মাছের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ব্যবসায়ীরা জানান, ৫৮ দিনের অবরোধ শেষে সাগর থেকে এই প্রথম দুটি ট্রলার এসেছে। তবে এসব ট্রলারে মাছের পরিমান খুবই কম। ফলে দাম অনেক বেশি।
জেলে রুহুল জানান, তাদের ট্রলার সাগরে যাওয়ার পরে মাত্র কয়েকবার জাল ফেলতে পেরেছেন। এতে অল্প কিছু ইলিশসহ নানা ধরনের মাছ পেয়েছেন। পরে ট্রলারে সমস্যা হওয়ায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
শুক্রবার বাজারে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আধা কেজি থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি এবং এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া রূপচাঁদা আকার ভেদে প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা, কঙ্কন, তুলারডাটি, ঢেলা চ্যালা, ভেটকি, লইট্টা, ছুরি, জাবা, বিড়াল জাবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ একশ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাগর থেকে বেশি করে ট্রলারের আগমন ও মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে দাম কমবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
মোরেলগঞ্জ থেকে মাছ কিনতে আসা তৈয়ব মুন্সি বলেন, সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলাকালে তিনি বাজারে আসেননি। অনেক দিন পরে আজই বাজারে এসেছেন, তবে দাম অনেক বেশি। তারপরও কিছু মাছ কিনেছেন। বেশি দামে মাছ কিনে এলাকায় বিক্রি করে লোকসানের শঙ্কা জানান তিনি।
কেবি বাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর শুক্রবার প্রথমবারে সাগর থেকে ট্রলার এসেছে। জেলেরা তেমন মাছ পায়নি। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পাইকার আসছে। যার কারণে দাম কিছুটা বেশি। সাগরে বেশি পরিমাণ মাছ ধরা পড়লে দাম কিছুটা কমবে বলে জানান তিনি।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত সাগরে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ছিল।