জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি যেভাবে নেওয়া হচ্ছে, তাতে নতুনত্বের কিছু নেই। শেষ তিন সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত হওয়ার পেছনে যারা ‘বড় অনুঘটক’ হিসেবে কাজ করেছে, সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর মাঠ প্রশাসনের ব্যাপারে এখনও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নেই কোনো পরিকল্পনা। এসব বিষয়ে তারা বরাবরের মতো সরকারের দিকেই তাকিয়ে আছে।

ডিসেম্বর কিংবা আগামী জুন– এ দুই সময়সীমা সামনে রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। এ লক্ষ্যে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান পুরোনো ধারা মেনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের মতো বিষয়ে বেশি জোর দিচ্ছে। 

ইসির নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ৯০ দিনের প্রস্তুতিতে যে কোনো নির্বাচন আয়োজন ইসির পক্ষে সম্ভব। যে কারণে জনপ্রতিনিধিদের কোনো পদ শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান রয়েছে। এমনকি সংবিধানে সীমানা নির্ধারণ এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুতির নির্দেশনা থাকলেও ইসির হাতে সর্বশেষ যে তালিকা থাকবে, তা দিয়েই নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা আছে। তবে প্রশ্ন হলো নির্বাচনের মান নিয়ে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করা। এখন এক দলের বদলে আরেক দল নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সুযোগ পেলে তাকে পরিবর্তন বলা যায় না।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের পুনরাবৃত্তি কারও জন্য মঙ্গলজনক হবে না। তারা আশা করেন, সব পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। গণআন্দোলনের রক্ত বৃথা যাবে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ সমকালকে বলেন, অতীতের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তির সুযোগ নেই। মাঠ প্রশাসন নিয়ে ইসির পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আগের তিন নির্বাচনে যারা মাঠের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের ইতোমধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন মনে করলে ইসি ভবিষ্যতে আরও পরিবর্তন আনবে। মাঠ প্রশাসনকে ইসির নিয়ন্ত্রণে রাখতে রদবদলই একমাত্র উপায় কিনা– এমন প্রশ্নে এই কমিশনার বলেন, কমিশন নিরপেক্ষ থাকলে মাঠ পর্যায়ে খুব বেশি ঝামেলার সুযোগ থাকবে না। 

নির্বাচনের তপশিল নিয়ে কোনো ধারণা দিতে পারছেন না ইসির নির্বাচন শাখার কর্মকর্তরা। তারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন ইসির কাছে আইন ও সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তাই এই মুহূর্তে সঠিক কোনো ধারণা দেওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচন নিয়ে ইসির অবস্থান পুরোপুরি অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের অনুরূপ। সংস্কার ছাড়া আগামী ডিসেম্বরে ভোট হতে পারে। আবার অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হতে পারে আগামী জুনের মধ্যে– এমন কথা গতকাল রোববারও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন কক্সবাজারে গিয়ে বলেছেন। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার সহেযাগিতা চেয়ে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দুটি ডেটলাইন দিয়েছে। নির্বাচন ডিসেম্বরে, বড় ধরনের সংস্কার হলে আগামী জুনের মধ্যে হবে। 

দলীয় সরকারের অধীনে শেষ তিন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রধান অভিযোগ ছিল ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে। যে কারণে তারা দুটি সংসদ নির্বাচন বর্জন এবং একটিতে অংশ নিয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। আওয়ামী লীগের পতনের পর তারা এখন আর এই দাবি করছে না। জামায়াত ইসলামীসহ অন্য কয়েকটি দল সবার জন্য সমান সুযোগ আছে কিনা– সেটা যাচাইয়ের জন্য হলেও স্থানীয় সরকারের কিছু নির্বাচন সংসদের আগে চাইছে।

আগের তিন কমিশনের সদস্যদের মতো গতকালও নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ সমকালকে বলেছেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আপেক্ষিক বিষয়। এটা একেক দলের জন্য একেক ধরনের অনুভূতি। ইসি নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকলে এটা কোনো সমস্যা নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 

সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে– এই প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হওয়া বিতর্ক এখনও চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে এরই মধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসি। এ সময়ের মধ্যে ভোট করতে ইসিকে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ ও নির্বাচনী আইনও সংশোধন করতে হবে। 

নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব চূড়ান্ত না হওয়ায় সীমানা নির্ধারণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন কিংবা নির্বাচনী আইন ও বিধান পরিবর্তনের কাজ শুরু করতে পারছে না ইসি। যে কারণে ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন করতেও এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের আইন সামনে রেখেই তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে রাখছেন। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজে এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, আগের আইন ধরে প্রস্তুতি নেওয়ার পর যদি সংস্কারের মাধ্যমে আইন ও বিধান নতুন করে ঢেলে সাজাতে হয়, তাহলে অনেক কিছুই নতুনভাবে করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে তাদের বড় চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।
এদিকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার বিষয়ও ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, ডিসেম্বর সামনে রাখলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে হবে, সেভাবেই এগোচ্ছে ইসি। 

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্যতম সদস্য ড.

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক, আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার না করে নির্বাচনের পথে হাঁটলে একই অন্ধকার আবার আসবে। বিদায়ী স্বৈরাচারী সরকার তো আকাশ থেকে আমাদের ওপর নাজিল হয়নি। পুরোনো সমস্যা বজায় রেখে নির্বাচনের পথে হাঁটলে ভবিষ্যতে আবারও স্বৈরাচার সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাঁর মতে, ১/১১ সরকারের আমলে যেসব সংস্কারের বিষয় ঐকমত্য হয়েছিল, সেগুলো ধরে রাখতে পারলে ৫ আগস্টের করুণ পরণতি দেখতে হতো না। তখন সংস্কারের কথা যারা বলতেন তাদের বিদ্রুপ করা হতো। তখনকার সুপারিশ অনুযায়ী স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা সম্ভব হলে সরকার নিজেই লাভবান হতো। 

ভোটার তালিকা বড় চ্যালেঞ্জ
নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ২০ জানুয়ারি থেকে ভোটার হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে ইসি। গত ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নতুন করে ৪৯ লাখ ৭০ হাজার ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে নিবন্ধন কেন্দ্রে এই নতুন ভোটারের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ এবং ছবি তোলার কাজ চলছে। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা এর আগে যাদের জন্ম, ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারাই ভোটার হতে পারছেন। এবার এমন প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ নাগরিক ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন, যারা ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি ভোটারযোগ্য হবেন।
নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন ভোটারের বিষয়টিকে মাথায় রেখে বিধিতে একটা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। না হলে ভোটের তারিখ আগামী ২ জানুয়ারির পরে করতে হবে। তার মতে, ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট হলে তরুণ ভোটারের একটা বড় অংশ ভোট দিতে পারবে না, যাকে বড় সংকট হিসেবে দেখছে ইসি। 

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে যদি যৌক্তিক সময় পাওয়া যায় তখন সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সংশোধনের বিষয়গুলোতে হাত দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ইসি নতুন সাড়ে ১৮ লাখ ভোটারের বিষয়টি মাথায় রাখবে, তারা যেন ভোট দিতে পারে। 
ইসির তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১৫ লাখেরও বেশি মৃত ভোটার বাদ দেওয়া হয়েছে তালিকা থেকে। নিয়ম অনুযায়ী, তালিকা থেকে মৃত ভোটার বাদ দিতে হলে সনদের প্রয়োজন হয়। তবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তৃণমূলের অনেক পরিবারেই মৃত ব্যক্তির তথ্য দিলেও সনদ দিতে পারছেন না। 

সীমানা জটিলতা
নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দাবি-আপত্তির ওপর ভিত্তি করে সংসদীয় আসনের সীমানায় বদল এনেছিল অতীতের কমিশনগুলো। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ১০টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়। নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, সংসদের সীমানায় সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আনা হয় ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে। সে সময় এটিএম শামছুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন শতাধিক আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনেছিল। আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনও ঘোষণা হয়নি। তবে এরই মধ্যে ৪১টি সংসদীয় আসনের সীমানা বদলের আবেদন জমা পড়েছে ইসিতে। 

সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতে কোনো কোনো নির্বাচন কমিশন সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিয়মগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ না করায় সংসদীয় আসনের সীমানাসংক্রান্ত জটিলতা রয়েই গেছে। যে কারণে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারে যে কমিশন গঠন করেছিল, সেই কমিশন সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নতুন আইনের প্রস্তাব করেছে। যদিও এখনও সেই সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত না হওয়ায় সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করতে পারছে না কমিশন। এ মাসে সীমানাসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে করে ইসি।
কমিশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আইনে সংস্কার না হলেও ভোটার সংখ্যা, জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে কোন কোন আসনে কী কী পরিবর্তন করা প্রয়োজন, সেগুলোর প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে রাখছে ইসি। তিনি জানান, এরই মধ্যে পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে জনসংখ্যার তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এর পর উপজেলা ও ইউনিয়নভিত্তিক যে ভোটার সংখ্যা রয়েছে সেটির তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে।

নতুন দল নিবন্ধন কবে?
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন অনুযায়ী প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দল নিবন্ধনে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে বেশ কিছু দল নিবন্ধনের আবেদন করলেও ২০২৩ সালের অক্টোবরে নতুন দুটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয় ইসি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আদালতের নির্দেশে নতুন করে আরও পাঁচটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৯টি। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে গণবিজ্ঞপ্তি জারির দলগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত ছয় মাস প্রয়োজন হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ নিয়ে এখনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

আইন সংস্কার ও নির্বাচনের তপশিল
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন অন্তত ১৬ ক্ষেত্রে ১৫০টিরও বেশি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে সরকারের কাছে। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও এসব প্রস্তাব নিয়ে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো আলোচনা শুরু হয়নি।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হলে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইন সংস্কার, ভোটার তালিকা প্রস্তুত, নতুন দলের নিবন্ধন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, পর্যবেক্ষক নীতিমালা প্রণয়ন, ভোটকেন্দ্র, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগসহ বেশ কিছু কাজ চূড়ান্ত করতে হবে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ দিন হাতে রেখে তপশিল ঘোষণা হয়। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ভোট করতে হলে তপশিল ঘোষণা করতে হবে অক্টোবরের মাঝামাঝি। সংস্কারের পর আইনে কী ধরনের পরিবর্তন হবে, সেটি নিয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই নির্বাচন কমিশনের। যে কারণে নির্বাচনের কোনো কাজই চূড়ান্ত করতে পারছে না ইসি।

এদিকে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, দ্রুত তপশিল ঘোষণার জন্য ইসির ওপর কোনো চাপ নেই। ইসি দ্রুত কাজ করছে। রোববার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ডিসেম্বর টার্গেট করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য জুলাই-আগস্ট থেকেই নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি থাকবে কমিশনের। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ দিন হাতে রেখে জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়। 
এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত সংস্কার কমিশনের প্রতিটি আইন সংস্কারের বিষয়ে আগে ঐকমত্য হতে হবে। একটা যৌক্তিক সময়ের ভেতরেই তপশিল ঘোষণা করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল তাদের মতো করে কথা বলছে। নির্বাচন কমিশন বাস্তবতা মেনে কাজ করছে।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র ড স ম বর র ম ব যবস থ সরক র ন সরক র র ঐকমত য ন র অন বল ছ ন র জন য ন র পর ক দল ন অন য য় আইন স দলগ ল ধরন র বলছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ

১৮৮৬ সালের ১ মেÑএকটি দিন, একটি দাবি, আর হাজারো শ্রমিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসে রক্তাক্ত দাগ কেটে দিয়েছিল যে মুহূর্ত, তা আজ বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তখনকার দাবিটি ছিল স্রেফ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের দাবি শুধু সময়
নয়Ñমর্যাদা, সুরক্ষা ও ন্যায্যতার প্রশ্নও।

এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে”Ñএ যেন সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বার্তা কেবল প্রাসঙ্গিক নয়, বরং তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য এক যৌথ দিকনির্দেশনা।

বাংলাদেশের শ্রমচিত্র ও বাস্তবতা

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষ নিয়োজিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে শ্রমনির্ভর খাত থেকে। কিন্তু যাঁরা এই অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরা কি পেয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা?

দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বহু শ্রমিক পান না ন্যূনতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত মৌলিক সুবিধা। নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও জটিলÑযত্রতত্র হয়রানি, মাতৃত্বকালীন সুবিধার অভাব, কিংবা নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে না তোলার ফলে এই খাতেও স্থিতিশীলতা আসছে না।

মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব নয়, দরকার সহমর্মিতা

এক সময় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক মানেই ছিল দ্বন্দ্ব, ধর্মঘট ও হুমকি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছেÑসহযোগিতাই টেকসই উৎপাদনের চাবিকাঠি। মালিকপক্ষ যখন শ্রমিককে কেবল “ব্যয়” হিসেবে না দেখে “সম্পদ” হিসেবে  বিবেচনা করেন, তখন প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। একইভাবে শ্রমিকও যদি বুঝেন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মানে তার কর্মস্থলের স্থায়িত্বÑতাহলে দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের
ভিত্তি গড়ে ওঠে।

এই বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজন তিনটি স্তম্ভ: 

নীতিগত স্বচ্ছতা Ñ ন্যায্য মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দায়িত্বশীল মালিকপক্ষ Ñ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ সচেতন শ্রমিকশ্রেণি Ñ অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মানসিকতা

নীতি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধিত ২০১৮ সংস্করণ অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবায়নের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে  অনানুষ্ঠানিক খাতে (যেমন কৃষি, গৃহপরিচারিকা, গিগ-ওয়ার্কার) শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনও প্রায় উপেক্ষিত।

এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা বীমা, এবং পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার হওয়া জরুরি। সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করলেও তা অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

এই প্রেক্ষাপটে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ দেশ গড়ার বার্তাটি যেন শুধুই স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এটি হোক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক বিনিয়োগ ও মানবিক বিবেচনার এক বাস্তব প্ল্যাটফর্ম।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও নতুন শ্রম বাস্তবতা

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও গিগ-ইকোনমি অনেক চাকরি বিলুপ্ত করছে, আবার নতুন দক্ষতা চাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, তাহলে  শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পুনঃস্কিলিং এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এখানে মালিক ও রাষ্ট্র উভয়ের উচিত হবে, শ্রমিককে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ করা, কারণ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কোনো শিল্পই টিকে থাকে না।

মে দিবস: উৎসব নয়, দায়বদ্ধতার প্রতীক

মে দিবস কেবল লাল পতাকা হাতে শোভাযাত্রার দিন নয়, এটি আমাদের মানবিক চেতনার প্রতিফলন। যে শ্রমিক ঘাম ঝরিয়ে ভবন গড়ে, কৃষি জমি চষে, রপ্তানি পণ্য তৈরি করেÑতার জন্য আমাদের উচিত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।

এবছর, আসুন আমরা সবাই রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকÑএকটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও  শীদারিত্বভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাই। শ্রমিকের হাতে গড়া এই বাংলাদেশ হোক তার জন্যই গর্বের জায়গা। 


লেখক পরিচিতি:

মীযানুর রহমান
সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
মোবাইলঃ ০১৭৫৪১০৯০৭২
যোগাযোগ: : [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • র‍্যাংকিংয়ে মিরাজ-জাকেরদের অগ্রগতি
  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস