গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি বস্ত্রকলের মালিকদের
Published: 24th, February 2025 GMT
নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর নেতারা। তাঁরা সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কর্তৃক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া বন্ধ করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করুন। এ ছাড়া গ্যাসের প্রতি ইউনিটের দাম ২০ টাকার নিচে নামিয়ে আনার দাবি জানান তাঁরা।
গ্যাসের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি সব স্থলবন্দর বা কাস্টম হাউস দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করে কেবল সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি ও বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন বিটিএমএর নেতারা।
আজ সোমবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলো বলেন বিটিএমএর (বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন) নেতারা। দেশীয় বস্ত্র খাতের সংকটাবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএর সহসভাপতি মো.
বিটিএমএর সভাপতি বলেন, দেশের বস্ত্রখাত সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার–সংকট, ব্যাংক সুদের হার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, এলডিসি থেকে উত্তরণের শর্তাবলি পূরণের অজুহাতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা অস্বাভাবিক হ্রাস ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে চলতি মূলধনের সংকট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর ব্যবহার করে ডাম্পিং মূল্যে সুতা ও কাপড় স্থানীয় বাজারে প্রবেশের ফলে চ্যালেঞ্জে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
শওকত আজিজ রাসেল বলেন, গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে জ্বালানিসংকটের জন্য বস্ত্রকলগুলো স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। কয়েক মাস যাবৎ তীব্র গ্যাস–সংকটের কারণে বস্ত্রকলগুলো উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারছে না। এতে উৎপাদন খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তাতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এ খাতের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারও বিদেশিদের হাতে চলে যাচ্ছে। অথচ দেশীয় বস্ত্রকলগুলো ১৭ কোটি মানুষের বস্ত্রের চাহিদা পূরণ করে। এতে ১২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়।
ভারত থেকে সে দেশের স্থানীয় বাজারের চেয়েও কম দামে সুতা ও কাপড় বাংলাদেশে প্রবেশের কারণে বস্ত্র খাত সংকটের মুখে রয়েছে বলে জানান বিটিএমএর সভাপতি। তিনি বলেন, স্থলবন্দর ও কাস্টম হাউসে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুতার কাউন্ট পরিমাপক যন্ত্র না থাকায় আমদানি-রপ্তানি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। এতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিপুল সুতা আসছে; সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। ফলে দেশীয় সুতার কলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থলবন্দর ব্যবহার করে সুতা আমদানি বন্ধের পদক্ষেপ না নেওয়া হলে দেশীয় বস্ত্র খাতের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
বর্তমানে দেশের বস্ত্রকলগুলোয় ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার সুতা মজুত আছে উল্লেখ করে শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ ও ভারতীয় সুতার ওপর অ্যান্টি–ডাম্পিং শুল্ক আরোপের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি। আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সুতা আমদানি রোধে আমাদের স্থলবন্দরের সক্ষমতা না বাড়ানো পর্যন্ত সেখান দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করা হোক।’ ভারতীয় বস্ত্রকলগুলোর ডাম্পিং তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে বিটিএমএর পরিচালক রাজীব হায়দার বলেন, মাটির নিচে গ্যাসের মজুত থাকা অবস্থায় এলএনজি আমদানি কার স্বার্থে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৭৫ টাকা করা হলে কারখানা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪