Samakal:
2025-11-04@03:52:12 GMT

পুতিন টেস্ট খেলছেন, আমরা টি২০

Published: 24th, February 2025 GMT

পুতিন টেস্ট খেলছেন, আমরা টি২০

আমার একজন বন্ধু আছেন। তিনি আমেরিকান লেখক। যুদ্ধ বিষয়ে লেখেন। গত কয়েক দশক ধরে তিনি দক্ষিণ সুদান, রুয়ান্ডা, কঙ্গো, আফগানিস্তান, ইরাক, গাজা ও অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল সফর করেছেন। ইউক্রেনের ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, একটি বিষয় পরিষ্কার– এই যুদ্ধে কারা আক্রমণকারী এবং কারা ঘটনার শিকার। বসনিয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরোধ এখনও চলছে। তাঁর মতে, এই প্রতিরোধ দুটি সত্যিকারের ন্যায়সংগত যুদ্ধের একটি। পুতিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ন্যায্য যুদ্ধের তিন বছর পর আমরা এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হচ্ছি। অন্যায্য শান্তিচুক্তি হবে। ইউক্রেন জমি হারাবে এবং তার জন্য ক্ষতিপূরণ পাবে না। যুদ্ধাপরাধের শাস্তি হবে না এবং ইউক্রেনীয়দের ভবিষ্যৎ রাশিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার গ্যারান্টিও পাওয়া যাবে না। 

এটি নতুন বিষয় নয়। ২০০৮ সালের রাশিয়ান-জর্জিয়ান যুদ্ধের কথা চিন্তা করুন। রাশিয়া প্রতিবেশী জর্জিয়া আক্রমণ করেছিল, তবুও তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি রাশিয়াকে সন্তুষ্ট করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন এবং জর্জিয়াকে একটি অপমানজনক শাস্তিতে বাধ্য করেছিলেন। সে সময় ফ্রান্স ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্বে ছিল।
জর্জিয়ার বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের আরেকটি পরিণতি রয়েছে, যা কম পরিচিত। রাশিয়ার বিজয়ের পর ভ্লাদিমির পুতিন পরবর্তীকালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। জর্জিয়ায় রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতি পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া ছিল দুর্বল। এমন অবস্থানে পুতিন বিশ্বাস করেছে– এটি ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে। জর্জিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ যেমন ২০০৩ সালের পশ্চিমাপন্থি বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া ছিল, ইউক্রেনকে ২০০৪ সালের কমলা বিপ্লবের জন্য ‘শাস্তি’ পেতে হয়েছিল, যা ইউক্রেনকে রাশিয়ার কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। পুতিনের পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছিল এবং ২০০৯ সালে দুই শীর্ষস্থানীয় ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের এক পত্রিকার নিবন্ধে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু সেই সময় এটি এতই দুর্দান্ত ছিল, খুব কম লোকই কাজটির কৃতিত্ব দিয়েছে।

২০১০ সালে যখন রাশিয়াপন্থি ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতায় আসেন, তখন পুতিনের ভাগ্যে যা-ই হোক না কেন ইউক্রেনকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালে ইয়ানুকোভিচ আশ্চর্যজনকভাবে ইউরোপীয় একত্রীকরণের দিকে ইউক্রেনের যাত্রা সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু যখন সেই বছর ইইউর সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি স্বাক্ষরের কথা আসে, তখন তৎক্ষণাৎ মুখ পাল্টিয়ে প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দেন। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর হঠাৎ তাঁর মনের পরিবর্তন ঘটে। দেশটি পশ্চিমমুখী আন্দোলন অব্যাহত রাখলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার হুমকি দিয়ে পুতিন ইয়ানুকোভিচকে বাধ্য করেছিলেন বলে জল্পনা ছিল। ইইউ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে ইয়ানুকোভিচের একতরফা অস্বীকৃতি ২০১৩ সালের নভেম্বরে কিয়েভে শুরু হওয়া বিক্ষোভের একটি নতুন তরঙ্গের সূত্রপাত করে। তা শেষ পর্যন্ত ইউরোমাইদান বিপ্লব হিসেবে পরিচিত হয়।

ইউক্রেনের গৃহযুদ্ধের পরিবর্তে পুতিন দনবাসে একটি কম তীব্রতর যুদ্ধ বাধিয়েছিলেন, যেখানে তিনি জিততে পারেননি। তবুও তিনি জানতেন কীভাবে অপেক্ষা করতে হয়। পুতিনকে যারা ভালো করে চেনেন তারা বলছেন, তিনি যে দর্শনে জীবনযাপন করেন তা জুডো বা জাপানি কুস্তির মতোই, যে খেলা তিনি তাঁর যৌবন থেকে অনুশীলন করছেন। কুস্তিতে আপনি আপনার প্রতিপক্ষের কাছাকাছি থাকেন এবং যতক্ষণ না তারা হাল ছেড়ে দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ঠেকিয়ে রাখতে হয়। ২০১৪ সালে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও পুতিন থেমে যাননি। ২০২২ সালের পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের মধ্য দিয়ে সেটি নিশ্চিত হয়। সম্ভবত মানুষের স্বভাব হলো, হুমকি বাস্তবে পরিণত হলেই তারা সংঘবদ্ধ হয়। 

ইয়ারোস্লাভ রিতসাক: ইতিহাসবিদ ও লিভের ইউক্রেনিয়ান
ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে
সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র কর ছ ল ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনি বন্দীকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস, ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রসিকিউটর গ্রেপ্তার

ইসরায়েলি পুলিশ দেশটির সেনাবাহিনীর সাবেক একজন প্রসিকিউটরকে গ্রেপ্তার করেছে। একজন ফিলিস্তিনি বন্দীর ওপর ইসরায়েলি সেনাদের নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মেজর জেনারেল পদমর্যাদার ওই সাবেক প্রসিকিউটরের নাম ইয়াফাত তোমের-ইয়েরুশালমি। গতকাল সোমবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী।

জানা যায়, অনলাইনে ওই ভিডিওটি ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছিল। তখন তিনি তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর নিখোঁজ ছিলেন।

ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, সৈন্যরা এক বন্দীকে আলাদা স্থানে নিয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের সঙ্গে একটি কুকুর রয়েছে। তাঁরা দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিজেদের কার্যকলাপ এমনভাবে আড়াল করে রেখেছেন, যাতে কেউ দেখতে না পারে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভিডিও ফাঁসের ঘটনাকে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘জনসংযোগের ওপর সবচেয়ে তীব্র আক্রমণ’ বলে মন্তব্য করেছেন।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনি বন্দীর ওপর নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস ঘিরে ইসরায়েলের শীর্ষ আইনি কর্মকর্তার পদত্যাগ০১ নভেম্বর ২০২৫

অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা থেকে আল-জাজিরার নউর ওদেহ বলেন, ওই নারী প্রসিকিউটরের আটকের ঘটনা ইসরায়েলে ‘রাজনৈতিক ও আইনি ঝড়’ তৈরি করেছে। তবে আটক হওয়া ব্যক্তির ওপর বাড়তি মনোযোগ মূল ঘটনা থেকে নজর সরিয়ে দিচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের কারাগারগুলোয় অন্তত ৭৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন‘স্বপ্ন ছিল বুকে জড়িয়ে ধরার, এখন আশা দাফনটা যদি অন্তত করতে পারি’২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ