জামিন পাওয়া দুই আসামিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তুলে নিয়ে গেলেন বাদী ও তাঁর লোকজন
Published: 26th, February 2025 GMT
মামলায় জামিন হওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে মারধর করে আইনজীবীদের সামনে থেকে জামিন পাওয়া দুই ভাইকে ধরে নিয়ে গেছেন বাদী ও তাঁর লোকজন। আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাজীপুর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পর ছেড়ে দিয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে গেছেন।
জামিন পাওয়া ওই দুই ব্যক্তি হলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে বাবুল মিয়া ও তাঁর ছোট ভাই মিলন মিয়া (৩৩)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনজীবীদের সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে নাজমুল হক জমিসংক্রান্ত বিরোধের একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বেশ কয়েকজন আসামি জামিনের জন্য আদালতে আসেন। জামিন পাওয়ার পর তাঁরা গাজীপুর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর সামনে অবস্থান করছিলেন। এ সময় মামলার বাদীসহ বেশ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে বাদী ও তাঁর লোকজন মামলায় জামিন পাওয়া দুই আসামিসহ অন্যদের মারধর শুরু করেন। এ সময় আইনজীবীরা বাধা দিলে তাঁদের ওপরও চড়াও হন তাঁরা। পরে আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তি বাবুল মিয়া ও মিলন মিয়াকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যান। ঘটনাটি উপস্থিত লোকজন ভিডিও করেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই মামলার জামিন পাওয়া অপর ব্যক্তি এনামুল হক বলেন, ‘আদালতে আত্মসমর্পণের পর জামিন পাওয়ার পরপরই তাঁর নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালান। আমরা আদালত থেকে বের হওয়ার সময় বাদী ও তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন দা, চাকু, লাঠিসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে আমাদের পথ রোধ করেন। আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে জানালে তিনি আমাদের আনতে দুই কর্মচারী পাঠান। কিন্তু তাঁদের সামনেই আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।’
গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ওই মামলায় ১৩ জন অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। আজ বাদী তাঁদের জামিন বাতিলের আবেদন করেন। তবে বিজ্ঞ আদালত তাঁদের জামিন বর্ধিত করেন। এতে মামলার বাদী ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু সশস্ত্র লোকজন নিয়ে হামলা করেন। পরে হামলাকারীরা জামিন পাওয়া দুই আসামিকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যান। এটি আদালতের জন্য নিরাপত্তাহীনতা। তিনি আরও বলেন, পরে অবশ্য তাঁদের দুই ভাইকে রাজবাড়ী মাঠের পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছেন হামলাকারীরা। খবর পেয়ে সেখান থেকে তাঁদের উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জামিন পাওয়া বাবুল মিয়ার স্ত্রী দোলনা আক্তার বলেন, ‘জামিন হওয়ার পর উকিল আমাদের দাঁড়াতে বলেন। এমন সময় মামলার বাদী নাজমুল হকসহ ১০ থেকে ১২ জন লোক আসেন। এসেই আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে আমরা উকিলের রুমে গিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করি। সেখানে গিয়ে আমার স্বামী ও দেবরকে তুলে নিয়ে গেছেন। এখন তাঁরা কোথায় আছেন, জানি না।’
গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের জামিন হওয়ায় বাদীপক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে দুই ভাইকে মারধর করে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তাঁদের পাওয়া গেছে। যাঁদের ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে যাঁরা হামলা চালিয়েছেন, তাঁরা কোনো সাধারণ লোক নন, তাঁরা সন্ত্রাসী। আদালতে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা উদ্বেগের। এটি রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। দুপুরের পর থেকে পুলিশ এটি নিয়ে কাজ করছে। যাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ল কজন আইনজ ব আম দ র র স মন ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।
এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।
এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।
পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।