উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে ঋণের অর্থ ছাড়ের পরিমাণ এবং নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছেই। অথচ আগে নেওয়া ঋণের সুদাসল পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছেই। গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ বেড়েছে ৩১ শতাংশ। অন্যদিকে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে অর্থ ছাড় কমেছে ১০ শতাংশের মতো। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত সাত মাসে ঋণের সুদাসল বাবদ ২৯ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২০ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ পরিশোধ বেড়েছে ৮ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। অর্থবছরের সাত মাসে বিদেশি মুদ্রায় সুদাসল পরিশোধের পরিমাণ ২৪২ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৮৬ কোটি ডলারের কিছু কম। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনকার ঋণদায় বর্তমান সরকারের সময়ের নয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার মধ্যে পরিণাম চিন্তা না করেই বড় অঙ্কের ঋণ 
নেওয়া হয়। ঋণের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক প্রকল্প, ঠিকাদারকে সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজনে নেওয়া হয়। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকার চলমান সব প্রকল্প পর্যালোচনা করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে। 
ইআরডির তথ্য বলছে, গত ছয় মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে মাত্র ২৩৫ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭১৭ কোটি ডলারেরও কিছু বেশি। অন্যদিকে গত সাত মাসে বিদেশি ঋণের অর্থ ছাড় হয়েছে ৩৯৪ কোটি ডলারের কিছু কম, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৪০ কোটি ডলারের মতো। 
চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতি অত্যন্ত ধীর। অনেক ক্ষেত্রে এ কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় হচ্ছে না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ আইএমইডির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের গত সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত ১৩ বছরের মধ্যে যা সবচেয়ে কম। 
ইআরডির সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, চলতি অর্থবছর এডিপি বাস্তবায়নের সর্বনিম্ন রেকর্ড দাঁড়াতে পারে। অনেক কারণে এবার এ রকম হতে পারে। এর মধ্যে বিদেশি অর্থায়নের

বিভিন্ন প্রকল্পে 
যেসব বিদেশি কর্মী, ঠিকাদার প্রতিনিধি ও পরামর্শক কাজ করতেন, তাদের বেশির ভাগ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বাংলাদেশ ছেড়ে যান। তাদের বড় একটা অংশ এখনও 
ফেরেননি। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম কার্যত স্থগিত রয়েছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী 
সরকার এডিপিভুক্ত সব প্রকল্প পর্যালোচনা করছে। কিছু প্রকল্প বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এসব কারণে এডিপির  বড় একটা অংশই এবার অব্যয়িত থেকে যাবে। 
প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি না থাকায় উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থ ছাড়ও করছে না। এ 
কারণেই অর্থ ছাড় এত কম দেখা যায়। 
একই কারণে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতিও 
বাড়াচ্ছে না তারা। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প পর শ ধ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নীতি সুদহার অপরিবর্তিত, বেসরকারি খাতের জন্য সুখবর নেই
  • জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত
  • সবজির দামে স্বস্তি, মজুরি বৃদ্ধির হার এখনো কম
  • ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন