চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। পাঁচ মাসে সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন হার ছিল ২০ দশমিক ৭৩। এর ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ছিল ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট দেয় ক্ষমতাচ্যুত আওমায়ী লীগ সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও সেই বাজেট অব্যাহত রয়েছে। বাজেটের বড় দুটি অংশ হচ্ছে উন্নয়ন বাজেট এবং অনুন্নয়ন বা পরিচালন বাজেট। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয় ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে উন্নয়ন ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশে। টাকার অঙ্কে যা ২৪ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ৩৩ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট হচ্ছে। অর্থবছরের শুরু থেকে আন্দোলন ও পরে আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি প্রশাসনে রদবদলের ধাক্কায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীরগতি বিরাজ করছে। 
এমন পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ থাকলেও গত সরকারের নেওয়া অনিয়ন্ত্রিত ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। তা ছাড়া পরিচালন বাজেটে কাটছাঁটের খুব একটা সুযোগ থাকে না। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ব্যয় বাড়ায় পরিচালন বাজেটে ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি। তাই সার্বিক বাজেট বাস্তবায়ন কিছুটা বেড়েছে। 

সুদ পরিশোধেই সরকারি ব্যয়ের ৩৬ শতাংশ 
বাজেটের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত দাঁড়িয়েছে সুদ পরিশোধ। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারি ব্যয়ের ৩৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ অর্থাৎ ৭১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। এর মধ্যে দেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৬৩ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা ও বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৭ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৪০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। 
সুদ পরিশোধের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে শুধু সুদ পরিশোধেই প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় বাড়ে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং প্রথমবারের মতো ঋণের সুদ পরিশোধ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়; যা সরকারের মোট ব্যয়ের ২৮ শতাংশ। 
পাঁচ মাসে পরিচালন বাজেটের আওতায় অন্যতম বড় খরচের খাত হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৫ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। এদিকে পাঁচ মাসে জ্বালানি, সারসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। 
একই সময়ে পরিচালন বাজেটের আওতায় অন্য খাতগুলোর মধ্যে পাবলিক অর্ডার ও সেফটি খাতে ৩০ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১৯ হাজার ৩৩৫ কোটি, প্রতিরক্ষা ১০ হাজার ৫৩৮ কোটি, কৃষিতে ১২ হাজার ৭৫৩ কোটি, স্বাস্থ্যে ৪ হাজার ৯৪৬‍ কোটি এবং স্থানীয় সরকার খাতে ১ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর দ দ র সরক র র ন নয়ন ব দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং সিস্টেম- জিপিএমএস)’ বাস্তবায়নে অর্থ উপদেষ্টা  সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে তিন সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করেছে সরকার। 

সম্প্রতি এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

কমিটিতে বাকি দুই সদস্য হলেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি কাজের জবাবদিহিতা, দক্ষতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) পরিবর্তে নতুন সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস) চালু করা হয়েছে। এই জিপিএমএস বাস্তবায়নে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার), বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব কমিটিকে সহায়তা করবেন। তাছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

এ কমিটি জিপিএমএস বাস্তবায়নের বিষয়ে সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেবে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসে সেকশন ১-এর আওতায় প্রস্তুত করা পরিকল্পনা অনুমোদন দেবে এবং অর্থবছর শুরুর আগে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে এ কমিটি।

এছাড়া, প্রতি অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসের সার্বিক মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে। জিপিএমএস বিষয়ে সরকারের দেওয়া অন্য যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেসরকারি ঋণ তলানিতে, তবে ঋণপত্র খোলায় গতি
  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে
  • তিন মাসে গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি টাকা
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
  • সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 
  • ২৯ দিনে প্রবাসী আয় ২৪৩ কোটি ডলার