হাঁসের মাংসের ‘মোড়কে’ পাখির মাংস বিক্রি, কেন–কীভাবে
Published: 28th, February 2025 GMT
পরপর কয়েকটি অভিযানের মুখে সিলেটের জৈন্তাপুরের হরিপুর বাজারে প্রকাশ্যে পাখির মাংস বিক্রি বন্ধ বলা হলেও গোপনে বেচাকেনা চলছে বলে অভিযোগ। সেখানকার রেস্তোরাঁগুলোতে হাঁসের মাংসের আড়ালে চলে পাখির মাংস বিক্রি। সম্প্রতি সেখানকার কয়েকটি রেস্তোরাঁয় ক্রেতা সেজে ঢুঁ মেরে প্রথম আলোর প্রতিবেদক এমনটাই দেখেছেন।
জলাভূমি থেকে রেস্তোরাঁয় পাখিসম্প্রতি পরিচয় গোপন রেখে রেস্তোরাঁর মালিক ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফাঁদ পেতে অথবা বিষটোপ দিয়ে শিকারিরা পাখি ধরেন। সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওর ও জলাভূমি থেকে পাখিগুলো ধরা হয়। এরপর পাখি বাড়িতে নেন শিকারিরা। জবাই করে পালক ছাড়িয়ে পলিথিনে মুড়ে নেন। এরপর গোপনীয়তার সঙ্গে সেগুলো পৌঁছে দেন রেস্তোরাঁমালিকদের কাছে।
স্থানীয় কয়েকজনের ভাষ্য, শীতকালে এখানে প্রতিদিন গড়ে কয়েক শ পাখি রান্না হয়। তবে সম্প্রতি প্রশাসন দফায় দফায় এখানে অভিযান চালিয়েছে। এ কারণে পাখির মাংস বিক্রি অনেকটা কমে গেছে, তবে একেবারে বন্ধ হয়নি। হাঁসের মাংসের কথা বলে পাখির মাংস বিক্রির কাজটি চলছে।
পাখির মাংস খেতে এসেছেন, এমন দুজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেস্তোরাঁ কর্মীরা তাঁদের জানিয়েছেন যে প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিন থেকে সাত প্রজাতির পাখির মাংস এখানে মেলে। এর মধ্যে বক, ঘুঘু, বালিহাঁস, ডাহুক, শামুকভাঙা ও কুড়া আছে। যেকোনো প্রজাতির পাখির এক টুকরা মাংসের সঙ্গে ভাত, ডাল ও সালাদ ফ্রি। পাখির প্রজাতি অনুযায়ী দাম ১৩০ থেকে ২০০ টাকা।
আট থেকে নয় বছর আগে সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়কের হরিপুর বাজারে কয়েকটি রেস্তোরাঁ চালু হয়। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০টিতে। চালুর পর থেকেই এসব রেস্তোরাঁয় পাখির মাংস বিক্রি শুরু হয়। মূলত সড়ক দিয়ে চলাচল করা পর্যটক ও ট্রাকচালকেরা এসব মাংসের ক্রেতা। সিলেট শহর থেকেও দলবেঁধে অনেকে পাখির মাংস খেতে যান।
সরেজমিনে দুই ঘণ্টাএই প্রতিবেদক ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত হরিপুর বাজারে কয়েকটি রেস্তোরাঁয় যান। দেখতে পান, রেস্তোরাঁগুলোর ভেতরে ক্যাশ কাউন্টারের সামনে সারি সারি বোল প্লাস্টিকের ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা। সেসব বোলে নানা আকৃতির মাংস রান্না করে রাখা। ক্রেতা এসে ঢাকনা উল্টে দরদাম করছেন। পছন্দ হলে মাংস নিয়ে রেস্তোরাঁয় বসে খাচ্ছেন।
এই দিন ক্রেতা সেজে কথা বললে সোনার বাংলা রেস্টুরেন্ট, তারু মিয়া রেস্টুরেন্ট ও তানভীর রেস্টুরেন্টের কর্মীরা পাখির মাংস বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেন। তাঁরা বলেন, স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে। তাই তাঁরা ভয়ে আছেন। পাখির মাংস বিক্রির বিষয়টি প্রকাশ্যে বলেন না। প্রকৃত ক্রেতা নিশ্চিত হলেই কেবল পাখির মাংস বিক্রির বিষয়টি তাঁরা বলেন। নইলে কেবল হাঁসের মাংস পাওয়া যাওয়ার কথা বলেন ক্রেতাদের।
ফাঁদ পেতে অথবা বিষটোপ দিয়ে শিকারিরা সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের বিভিন্ন হাওর ও জলাভূমি থেকে পাখিগুলো ধরেন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চার দিনের জ্বরে ভুগে মারা গেল কিশোর
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌর সদরের ফকিরহাট এলাকায় আশরাফুর রহমান (১৪) নামের এক কিশোর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। গত শুক্রবার সে জ্বরে আক্রান্ত হয়। আজ মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে পৌর সদরের জেনারেল হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পথে সে মারা যায়।
আশরাফুর রহমান ওই এলাকার মিজানুর রহমানের একমাত্র ছেলে। সে সীতাকুণ্ড আলিয়া মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সীতাকুণ্ডে এই প্রথম একজন মারা গেল।
আশরাফুর রহমানের দাদা এম এ আলীম আলী প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবার তাঁর নাতির জ্বর আসে। সামান্য ব্যথাও ছিল। জ্বর কমছে না দেখে রোববার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর আশরাফুরকে পৌর সদরের জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গতকাল সোমবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হয়। আজ ভোর পাঁচটার দিকে সে মারা যায়। দুপুরে মডেল মসজিদ এলাকায় জানাজার নামাজ শেষে ফকিরহাট নলুয়া দিঘি এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আশরাফকে।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি হাসপাতালের দায়িত্বগত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই কিশোর ভালো ছিল। আজ ভোর চারটার দিকে তার পাতলা পায়খানা ও খিঁচুনি হয়। এরপর তারা দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নেওয়ার পথে কিশোরটি মারা যায়।
সীতাকুণ্ডে আজ এক দিনেই ৬ জনের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত হয় বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন।