ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটির বেশি। কিন্তু মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের কাছে নিজের ইচ্ছামতো খরচ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে বলে ‘ব্লুম ভেঞ্চারস’ নামের একটি অর্থ সহায়তাকারী সংস্থা জানিয়েছে। অর্থাৎ বাড়তি পণ্য বা পরিষেবা কেনার ক্ষমতা ওই ১৩ বা ১৪ কোটি মানুষের কাছে রয়েছে, বাকি প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের সেই ক্ষমতা নেই।

ব্লুম ভেঞ্চারস একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংস্থা, যারা নতুন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে। তারা তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারত সম্পর্কে এ তথ্য জানিয়েছে।

ব্লুম ভেঞ্চারস বলেছে, ওই শীর্ষ ১০ শতাংশই তাদের ক্রয়ক্ষমতার মাধ্যমে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাজার ও বিক্রিকে সচল রাখছে। কিন্তু এই ১০ শতাংশ ক্রমশ বাড়ছে না, অর্থাৎ আরও বেশি মানুষের সম্পদ বাড়ছে না। বরং এই ১০ শতাংশেরই শুধু অর্থ ও সম্পদ ক্রমশ বাড়ছে, অর্থাৎ ধনী আরও ধনী হচ্ছে।

তবে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতে আরও ৩০ কোটি মানুষের একটা শ্রেণি তৈরি হচ্ছে, যাদের কনজিউমার বা উপভোক্তা বলা যেতে পারে। এরা সবেমাত্র খরচ করতে শুরু করেছে। তবে হয়তো এর অন্যতম কারণ এটা নয় যে তাঁদের আয়রোজগার বেড়েছে। কিন্তু খরচ করার নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে, যা হলো ইউপিআই বা ‘ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস’, অর্থাৎ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ আদানপ্রদান করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থা তাদের বিক্রয় কৌশলে পরিবর্তন আনছে। বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো ক্রমশ আরও বেশি দামি পণ্য বাজারে আনছে। কারণ, তারা বুঝতে পারছে, ভারতের ধনী আরও সম্পদশালী হচ্ছে। অর্থাৎ যাঁর একটি গাড়ি আছে, তিনি আরও গাড়ি কিনতে চাইছেন বা বিদেশি গাড়ি কিনতে চাইছেন।

ব্লুম ভেঞ্চারসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কারণে অত্যধিক দামি বাসস্থান বা প্রবল দামি ফোনের বিক্রয় ও ব্যবহার ভারতে বাড়ছে।

অন্যদিকে কম দামের পণ্যের বিক্রয় সেই হারে বাড়ছে না। অর্থাৎ যিনি সস্তার ফোন বা পণ্য কেনেন, তিনি দ্বিতীয় ফোন বা জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাইরে বাড়তি আর কিছুই কিনতে পারছেন না।

প্রতিবেদনে উদ্ধৃত তথ্য অনুসারে, শীর্ষ ১০ শতাংশ ভারতীয় এখন জাতীয় আয়ের ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশের অধিকারী, যা ১৯৯০ সালের ৩৪ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ বিশ্বে ভারতই প্রথম, যেখানে ১০ শতাংশের সম্পদ ৩৫ বছরে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।

জনসংখ্যার নিচের দিকের মানুষের সম্পদ ২২ দশমিক ২ থেকে কমে ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে, অর্থাৎ মধ্য ও নিম্নবিত্তের মানুষের সম্পদ এ সময়ে কমে গিয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, ভারতের জিডিপি কনজিউমারদের খরচ করার ক্ষমতার ওপরে ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ফলে আয়ের সুষম বণ্টনব্যবস্থার উন্নতি না হলে ব্যবসায়িক সংস্থাগুলো ভবিষ্যতে ক্রমবর্ধমানভাবে শুধু উচ্চ আয়ের গোষ্ঠীর জন্য পণ্য বানাবে এবং পরিষেবা দেবে। ফলে জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রান্তিক থেকে আরও প্রান্তিক হয়ে পড়বে।

অতীতে একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ভারতের ভবিষ্যতের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করলেও এই প্রথম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় আর্থিক সংস্থা দেশে ধনী ও দরিদ্রের অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিপদ নিয়ে সচেতন করল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ষমত দশম ক র একট

এছাড়াও পড়ুন:

এবার বিশ্ব জয় করতে চায় পিএসজি

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ– বছরের পর বছর শুধু এই একটি ট্রফির জন্য মাথা কুটে মরেছেন পিএসজি চেয়ারম্যান নাসের আল খেলাইফি। প্যারিসের ক্লাবটির কাতারি মালিকরা গত ১৪ বছরে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পর মহাকাঙ্ক্ষিত সেই ট্রফি ধরা দিয়েছে। সেই স্বপ্ন পূরণের ১৫ দিন পার না হতেই নতুন এক চ্যালেঞ্জ নিয়েছে পিএসজি। এবার ক্লাব বিশ্বকাপ জিততে চান লুইস এনরিকের শিষ্যরা। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় স্প্যানিশ জায়ান্ট অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নতুন মিশন শুরু করবে পিএসজি।
 
দুই সপ্তাহ আগে মিউনিখের অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায় ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে পিএসজি। তবে এমন একটি উত্তেজনায় ঠাসা ও স্মরণীয় মৌসুম শেষ করেও ক্লান্ত নন এনরিকে। ক্লাব বিশ্বকাপে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত তাঁর দল, ‘আমার দৃঢ়বিশ্বাস অসাধারণ একটি টুর্নামেন্ট হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ফুটবল খেলা এবং মৌসুমের পঞ্চম ট্রফিটি জয় করা।’ 

আর এই পাঁচ নম্বর ট্রফি জয়ের পেছনে এনরিকের ভরসা তারুণ্য। লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়র, কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো বিশ্বসেরারা যা পারেননি, এবার দেম্বেলে, দুয়ে, ভিতিনহা, বারকোলার মতো তরুণরা সেটা করে দেখিয়েছেন। তাদের সেই ঐতিহাসিক জয় উদযাপন করেছে পুরো ফ্রান্স। প্যারিসে পার্ক ডি প্রিন্সেস স্টেডিয়ামে প্রায় ৫০ হাজার সমর্থকের উপস্থিতিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ীদের সংবর্ধনা জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।

সেই উদযাপনের সময়ই ফরাসি ক্রীড়া দৈনিক লা’ইকিপকে ডিফেন্ডার লুকাস হার্নান্দেজ বলেছিলেন, ‘আমরা ক্লাবের জন্য, শহরের জন্য, দেশের জন্য ইতিহাস গড়েছি। তাই বলে এখানেই থেমে যাব না।’ তিনি এখানে যে বিশ্ব ক্লাব কাপকে ইঙ্গিত করেছেন, সেটা পরিষ্কার। গত আগস্ট থেকে পিএসজি ৫৮টি ম্যাচ খেলেছে এবং এই মৌসুমে ফ্রান্সের ঘরোয়া ফুটবলের সব ট্রফি জিতেছে।

পিএসজির এই অগ্রযাত্রায় বাধা হতে পারে ক্লান্তি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের হিরো ডিজেরে দুয়ে, দেম্বেলেসহ ক্লাবের অধিকাংশ খেলোয়াড় লম্বা সময় ধরে খেলছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শেষ করেই তারা জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। গত সপ্তাহে দেশের হয়ে মাঠে নামার পর আবার ক্লাব বিশ্বকাপে। আজ লস অ্যাঞ্জেলেস শহরতলীর অদূরে প্যাসেদানার রোজ বোল স্টেডিয়ামে ইউরোপের আরেক হেভিওয়েট অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের মুখোমুখি হবেন তারা। গ্রুপ ‘বি’তে তারা দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বোতাফোগো ও সিয়াটল সাউন্ডার্সের মুখোমুখি হবে। 

পিএসজি যদি ১৩ জুলাই নিউইয়র্কের ফাইনালে খেলতে চায়, তাহলে গ্রুপ পর্বের বাধা পেরোনোর পর আরও তিনটি ম্যাচ জিততে হবে। তবে এই ক্লাব বিশ্বকাপের জন্য নতুন কোনো খেলোয়াড় যুক্ত করেনি পিএসজি। ক্লান্ত খেলোয়াড়দের ওপরই নির্ভর করছেন এনরিকে। এখন দেখার বিষয়, তাঁর তরুণ ব্রিগেড ক্লান্তি কাটিয়ে কতটা ভালো খেলতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ