সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনা: নিহত তোফাজ্জলের লাশ দ্রুত দেশে আনার দাবি পরিবারের
Published: 28th, February 2025 GMT
পরিবারে সচ্ছলতা আনতে ধারদেনা করে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন তোফাজ্জল হোসেন (৪৬)। তবে নিজের স্বপ্ন পূরণ হয়নি, উল্টো পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। এক মাস আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এখনো তাঁর মরদেহ দেশে পৌঁছায়নি। মরদেহ দ্রুত দেশে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ পরিবারের।
তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারার ঝিকড়ার মীরপাড়া গ্রামে। গত ২৮ জানুয়ারি সৌদি আরবের মদিনায় তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি সেখানে আল-আওলাদ কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গাড়িচাপায় ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান। এর পর থেকে তাঁর মরদেহ সেখানে হিমঘরে রয়েছে।
তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী পারুল বেগম জানান, তিন বছর আগে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সৌদি আরবে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। দীর্ঘদিন ভালো কাজের সন্ধান করলেও পাননি। শেষে আল-আওলাদ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে নির্মাণশ্রমিকের কাজ পান। বাংলাদেশের টাকায় বেতন পেতেন ৩০ হাজার টাকা। নিজের খরচের পর দেশে টাকা পাঠাতেন তিনি। এই টাকা দিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হতো। পাশাপাশি সংসার ও দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানো হতো।
দ্রুত স্বামীর মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে পারুল বেগম বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। সহযোগিতার জন্য রাজশাহী শ্রম অধিদপ্তরেও যোগাযোগ করেছি। স্বামীর পাসপোর্টে আমার নাম পারুল বেগম; জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও জন্ম নিবন্ধন সনদে পারুল বিবি রয়েছে। এ সমস্যা হয়েছে। এটা সংশোধনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে গতকাল বৃহস্পতিবার আবেদন করেছি।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সব সরকারি দপ্তরে আশানুরূপ সহযোগিতার আশ্বাস পাচ্ছেন না।
তোফাজ্জল হোসেনের সহকর্মী নওগাঁর গণ্ড গোহালী গ্রামের হামিদুল ইসলাম বলেন, তাঁরা একসঙ্গে কাজ করছিলেন। ওই দিন (২৮ ফেব্রুয়ারি) পানির একটি গাড়ি এসে তাঁকে (তোফাজ্জল হোসেন) চাপা দেয়। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাঁদের চোখের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মরদেহ হিমঘরে রয়েছে। মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য তিনি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
তোফাজ্জল হোসেন ও স্ত্রী পারুল বেগম দম্পতির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে তাহমিদা আক্তার (২২) রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে স্নাতকে (সম্মান) পড়েন। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে বাবার পাঠানো টাকায় পড়াশোনার খরচ চলত। নিজের লেখাপড়া খরচ নিয়ে এখন তিনি চিন্তিত। আর হয়তো লেখাপড়া হবে না—বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বাবার মরদেহ দ্রুত সরকারি খরচে দেশে আনার দাবি জানান। পাশাপাশি আর্থিকভাবে সহযোগিতারও আবেদন করেন।
এ বিষয়ে আজ শুক্রবার বাগমারার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘পারুল বেগমের নাম সংশোধনীর দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে। তোফাজ্জল হোসেনের লাশ দেশে আনতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ল ব গম ন র জন য মরদ হ দ সহয গ ত দ র ঘটন র মরদ হ পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষকেরা বাড়তি যত্ন নেন, উপস্থিতি বেড়েছে শিক্ষার্থীদের
বর্ষায় পানিতে থই থই করে হাওর। শিশুরা দূরদূরান্ত থেকে বিদ্যালয়ে আসতে উৎসাহবোধ করত না। তাই হাওরের বিদ্যালয়গুলোতে বর্ষা মৌসুমে উপস্থিতি কমে যায়। তবে এবার বিশেষ মানোন্নয়ন পরীক্ষা চালু করায় সুনামগঞ্জের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র পাল্টে গেছে।
জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার কাওয়াজুড়ি হাওর এলাকার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমনা আক্তার প্রথম আলোকে বলছিল, এখন প্রতিদিনই স্কুলে যেতে হয়। নইলে শিক্ষকেরা বাড়িতে গিয়েও খবর নেন। শ্রেণিকক্ষে কোনো কিছু না বুঝলে শিক্ষকেরা ভালো করে বুঝিয়ে দেন।
সুমনা গত জুনে প্রাথমিকের মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর নেওয়া একটি বিশেষ মানোন্নয়ন পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮২ পেয়েছে। প্রথমে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৯৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর মধ্যে। পরে চালু হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার সবকটি, অর্থাৎ ১২টি উপজেলার সাড়ে ১৪ শ’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
নিজেদের বিদ্যালয়কে ভালো প্রমাণের জন্য শিক্ষকেরা এখন শিক্ষার্থীদের বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন, শ্রেণিকক্ষে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করছেন এবং পড়া ভালোভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নেওয়া এই পরীক্ষার ভিত্তিতে স্কুল ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের র্যাঙ্কিং (ক্রমতালিকা) করা হয়। যে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভালো করে, সেই স্কুল ও শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় স্বীকৃতি ও উপহার। ভালো করতে না পারা স্কুলগুলোকে এগিয়ে নিতে নেওয়া হয় বাড়তি উদ্যোগ।
ব্যবস্থাটি এ বছরই চালু হয়েছে। ১১টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্থানীয় শিক্ষক সমিতি, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ মানোন্নয়ন পরীক্ষা, স্কুল ও শিক্ষকদের এই র্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করেছে। নিজেদের বিদ্যালয়কে ভালো প্রমাণের জন্য শিক্ষকেরা এখন শিক্ষার্থীদের বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন, শ্রেণিকক্ষে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করছেন এবং পড়া ভালোভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
বিষয়টি নজরে এসেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার গত ৭ আগস্ট শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা চিঠি দিয়ে অভিনন্দন জানান। এদিকে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে ভালো ফল আসছে। অক্টোবরের শেষের দিকে জেলার সাড়ে ১৪ শ স্কুলে এই মানোন্নয়ন পরীক্ষা নিয়েছি। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৭৬ হাজার শিক্ষার্থী।’
স্কুলে উপস্থিতি বেড়েছেদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭। এসব বিদ্যালয়ে পড়ে ১ কোটি ৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ও শিক্ষার মান যেনতেন পর্যায়ের বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘লার্নিং টু রিয়েলাইজ এডুকেশনস প্রমিজ-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিত বোঝে না, তৃতীয় শ্রেণির ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা পড়তে পারে না।
সারা দেশে প্রাথমিক শিক্ষার এই দুরবস্থার মধ্যে হাওরে একটি বাড়তি সমস্যা আছে। সেটি হলো—স্কুলে অনুপস্থিতি ও ঝরে পড়া। বর্ষা ও ধান কাটার মৌসুমে হাওরের শিশুরা স্কুল কামাই দেয়। ২০২৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রাইমারি স্কুল পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ১৬ শতাংশের মতো। সুনামগঞ্জ জেলায় তা ৩৪ শতাংশের বেশি।
প্রথমে বিশেষ মানোন্নয়ন পরীক্ষাব্যবস্থা চালু হওয়া সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ১১টি স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব স্কুলে উপস্থিতি থাকত সাধারণত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। মানোন্নয়ন পরীক্ষা চালুর পর এই উপস্থিতি ৯০ শতাংশের কাছাকাছিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।
এ পদ্ধতিতে ভালো ফল আসছে। অক্টোবরের শেষের দিকে জেলার সাড়ে ১৪ শ স্কুলে এই মানোন্নয়ন পরীক্ষা নিয়েছি। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৭৬ হাজার শিক্ষার্থী।সুনামগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়াশান্তিগঞ্জ উপজেলার ৯৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সেরা ১০-এ স্থান পেয়েছে চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশীষ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অভিভাবক সমাবেশ করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা নিশ্চিত করেছি।’
চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত ২৫ আগস্ট এ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, শ্রেণিকক্ষ ভরা শিক্ষার্থী। বর্ষায় শ্রেণিকক্ষে কখনোই এত শিক্ষার্থী থাকত না বলে জানান স্কুলটির শিক্ষক আবু তাহের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়মিত আসা, পরীক্ষায় ৮০ শতাংশের উপস্থিতি, বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য বাড়তি চেষ্টা—সবকিছুই হয়েছে মানোন্নয়ন পরীক্ষার কারণে।
শিক্ষকেরা আসলেই কি উদ্যোগী, জানতে চেয়েছিলাম সুমনার বাবা জিয়াউর রশিদের কাছে। তিনি পেশায় কৃষক। জিয়াউর প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর তিনি মেয়েকে পড়াশোনায় বাড়তি মনোযোগী দেখতে পাচ্ছেন। শিক্ষকেরাও খোঁজ নিচ্ছেন।
এক স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে অন্য স্কুলে। পরীক্ষায় পরিদর্শক হিসেবেও ছিলেন অন্য স্কুলের শিক্ষকেরা। এ আয়োজনে উপজেলার রাজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে চার লাখ টাকার মতো।যেভাবে এল বিশেষ পরীক্ষাবিশেষ পরীক্ষার ভাবনাটি শান্তিগঞ্জের ইউএনও সুকান্ত সাহার। তিনি ২০২৩ সালের অক্টোবরে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগ দেন। তখন থেকেই এমন পরীক্ষা আয়োজনের কথা ভাবতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। সবাই মিলে আয়োজন করা হয় এ পরীক্ষার।
২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে তিন মাস সময় দিয়ে উপজেলার ৯৭টি স্কুলে মানোন্নয়ন পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। নাম দেওয়া হয় ‘প্রাথমিক শিক্ষা মানোন্নয়ন পরীক্ষা-২০২৫’। জুনে পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়। ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় বাংলায় ২৫, ইংরেজিতে ২৫, গণিতে ৩০, সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞানে ১০ এবং পঠনদক্ষতায় ১০ নম্বর থাকে। জুনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৯৭টি স্কুলের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৪ হাজার ৪৮৪ শিক্ষার্থী, যা মোট শিক্ষার্থীর ৮৭ শতাংশ।
এক স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে অন্য স্কুলে। পরীক্ষায় পরিদর্শক হিসেবেও ছিলেন অন্য স্কুলের শিক্ষকেরা। এ আয়োজনে উপজেলার রাজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে চার লাখ টাকার মতো।
বিশেষ পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরকে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে স্কুলের র্যাঙ্কিং করা হয়েছে। সঙ্গে শিক্ষকদের পড়ানোর দক্ষতার র্যাঙ্কিংও করা হয়। ইউএনও সুকান্ত সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এ পদ্ধতির ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মানসিকতা তৈরি হয়েছে।
বিশেষ পরীক্ষায় শীর্ষ ১০-এ স্থান পাওয়া স্কুলগুলো হলো তেঘরিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনবেগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাগলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেতকোণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বসিয়াখাউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কান্দাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উজানীগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শত্রুমর্দন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৩৩২ শিক্ষার্থী ৯০–এর বেশি নম্বর পেয়েছে।
বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা আসলেই কি ভালো ফল দিচ্ছে, জানতে চাওয়া হয়েছিল সুনামগঞ্জ জেলার সরকারি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হারুন রশিদের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মানোন্নয়ন পরীক্ষায় শিক্ষকদের মূল্যায়নের কারণে প্রত্যেক শিক্ষকই শ্রেণিকক্ষে মনোযোগী হয়েছেন। দুর্বল শিক্ষার্থীদের আলাদা করে সময় দিচ্ছেন।
বিশেষ পরীক্ষায় ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৩ নম্বরের কম পেয়েছে। অর্থাৎ তারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ৫২৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন শিক্ষকের প্রাপ্ত গড় নম্বর ছিল ৩৩–এর নিচে। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, খারাপ করা স্কুলগুলোর সমস্যা কী, তা খুঁজে বের করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকস্বল্পতা থাকায় যথাযথভাবে পাঠদান করা সম্ভব হয়নি, যে কারণে ফল একটু খারাপ হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও দুর্বল। ইউএনও বিষয়টি নিয়ে কথা বলে আরও ভালো করার পরামর্শ দিয়েছেন।
অধ্যাপক মনজুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের প্রতিবেদনে প্রতিটি স্কুলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অবকাঠামো কেমন—সবকিছু নিয়ে একটা র্যাঙ্কিং করে সবুজ ও লাল শ্রেণিতে ভাগ করার সুপারিশ করা হয়েছিল। সব জেলা ও উপজেলায় এমন উদ্যোগ নেওয়ার কথা।‘ভালো খবর’, তবে...বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি বিষয়ে কমিশন গঠন করলেও বাদ দিয়েছে শিক্ষাকে। প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে পরামর্শ দিতে শিক্ষাবিদ ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রগতি সামান্যই।
অধ্যাপক মনজুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের প্রতিবেদনে প্রতিটি স্কুলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অবকাঠামো কেমন—সবকিছু নিয়ে একটা র্যাঙ্কিং করে সবুজ ও লাল শ্রেণিতে ভাগ করার সুপারিশ করা হয়েছিল। সব জেলা ও উপজেলায় এমন উদ্যোগ নেওয়ার কথা। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে ইউএনওর উদ্যোগে স্কুলের র্যাঙ্কিংয়ের ব্যবস্থা হয়ে থাকলে তা ভালো খবর।
অধ্যাপক মনজুর আরও বলেন, নতুনভাবে কিছু একটা শুরু করলে এটা কিছুদিন চলে। তারপর তা হারিয়ে যায়। নতুন পদ্ধতির প্রভাব কী হচ্ছে, সেটা লম্বা সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ফল ইতিবাচক হলে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে এগোতে হবে।