সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ভাড়া বাসা থেকে এক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাসার এক ঘরে পড়ে ছিল স্বামীর লাশ। আরেক ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় স্ত্রীর লাশ পাওয়া যায়। ঘর থেকে উদ্ধার করা একটি চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমি সব কিছু শেষ করে দিলাম। আমি ২টা ৩১ মিনিটে মারছি, এবার আমিও মরছি। আর কেউ বিরক্ত করবে না...।’

আজ শুক্রবার সদর উপজেলার ওয়ারিয়া গ্রামের একটি বাড়িতে লাশ দুটি পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও স্বজনেরা ধারণা করছেন, বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময় স্বামী আবুল কালাম আজাদকে (৪৫) হত্যার পর ফাঁসিতে ঝুঁলে আত্মহত্যা করেছেন স্ত্রী নাজমিন নাহার (৩৫)।

আবুল কালামের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামে। তবে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমিন নাহারকে নিয়ে সদর উপজেলার ওয়ারিয়া গ্রামে মোহন পালের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। উপজেলার ঝাউডাঙ্গা বাজারের একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তাঁর বড় স্ত্রী শারমিন খাতুন দুই সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন।

আবুল কালামের ছোট ভাই ঝাউডাঙ্গা কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এনামুল ইসলাম বলেন, বছর দেড়েক আগে আবুল কালাম যশোর মনোহরপুর গ্রামের নাজমিন নাহারকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বাড়ির কেউ তা মেনে না নেওয়ায় তিনি বাসা ভাড়া করে থাকেন। বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিদিনের মতো তিনি দোকান বন্ধ করে রাত ১১টার দিকে বাড়ি ফেরেন। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ এনামুলের কাছে সংবাদ আসে, তাঁর ভাইকে ছোট ভাবি হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ওয়ারিয়া গ্রামের ভাড়া বাড়িতে এসে দেখেন, এক ঘরে ভাইয়ের মরদেহ পড়ে আছে। অন্য ঘরে তাঁর ছোট ভাবি নাজমিন নাহার ঘরের ফ্যান ঝোলানো হুকের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর মরদেহ ঝুলছে।

আবুল কালাম আজাদের পাশের দোকানদার ঝাউডাঙ্গা বাজারের ওহিদুজ্জামান জানান, সকালে দোকান না খোলায় আবুল কালামের কয়েকজন গ্রাহক এসে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও কেউ রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অনুরোধে সকাল ১০টার দিকে তিনি আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে যান। গিয়ে দেখেন, এক ঘরে আবুল কালামের মরদেহ পড়ে আছে। অন্য ঘরে তাঁর স্ত্রীর মরদেহ ঝুলছে। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির মালিক মোহন পালকে জানানো হয়।

বাড়ির মালিক মোহন পাল জানান, তিনি বিষয়টি জানার পর স্থানীয় ঝাউডাঙ্গা ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী, দফাদার মো.

কামরুজ্জামান ও চৌকিদার আবদুল্লাহ মামুনকে জানানো হয়। তাঁদের কাছ থেকে খবর পেয়ে বেলা একটার দিকে সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।

ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী বলেন, আবুল কালামের বুকে কালির কলম দিয়ে লেখা ছিল, ‘সরি জান, আই লাভ ইউ।’ ধারণা করা হচ্ছে, হত্যার পর তাঁর স্ত্রী নাজমিন নাহার এসব লিখেছেন। সেখানে একটা চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমি সব কিছু শেষ করে দিলাম। আমি ২টা ৩১ মিনিটে মারছি, এবার আমিও মরছি। আর কেউ বিরক্ত করবে না।’

সাতক্ষীরা সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সুশান্ত ঘোষ ঘটনাস্থল থেকে জানান, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নাজমিন নাহার তাঁর স্বামী আবুল কালাম আজাদকে খাদ্যের সঙ্গে কিছু খাইয়ে প্রথমে অচেতন করে ফেলেন। পরে তাঁকে মাথায় আঘাত করে ও গলায় সরু রশি পেঁচিয়ে শ্বাস রোধে হত্যা করেন। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া সঠিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় এখনো থানায় কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করেননি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র র মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুর গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা, নির্বাচনী আচরণবিধির সংশোধন চায় ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা এবং নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনে নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের কাছে এ স্মারকলিপি দেন ছাত্রদলের নেতারা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আসন্ন জকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন গোষ্ঠী জকসু সংবিধি এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ। ন্যায্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিতে আমাদের অনুরোধ, ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় প্রত্যেক ভোটারের ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচনে অমোচনীয় কালি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং স্বচ্ছ, নাম্বারযুক্ত ব্যালট বক্স রাখা আবশ্যক।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ব্যালট ছাপার সংখ্যা, ভোট প্রদানকারীর সংখ্যা এবং নষ্ট ব্যালটের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। মিডিয়া ট্রায়াল বা ভুল তথ্য প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার অনুমোদিত সব মিডিয়াকে নির্বাচনকালীন সময়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ডাকসুর তফসিল ঘোষণার ৪১ দিন, চাকসুর ৪৪ দিন, রাকসুর ৮০ দিন এবং জাকসুর তফসিল ঘোষণার ৩১ দিন পর নির্বাচন হয়েছে। যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এ ছাড়া বাকি চার বিশ্ববিদ্যালয়ের তফসিল ঘোষণার সময় ও নির্বাচনের মধ্যবর্তী পার্থক্য বিবেচনা করে জকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠু একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, এজন্য ছাত্রদল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। আশা করছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ