এক ঘরে পড়ে ছিল স্বামীর মরদেহ, আরেক ঘরে ঝুলছিল স্ত্রীর লাশ
Published: 28th, February 2025 GMT
সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ভাড়া বাসা থেকে এক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাসার এক ঘরে পড়ে ছিল স্বামীর লাশ। আরেক ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় স্ত্রীর লাশ পাওয়া যায়। ঘর থেকে উদ্ধার করা একটি চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমি সব কিছু শেষ করে দিলাম। আমি ২টা ৩১ মিনিটে মারছি, এবার আমিও মরছি। আর কেউ বিরক্ত করবে না...।’
আজ শুক্রবার সদর উপজেলার ওয়ারিয়া গ্রামের একটি বাড়িতে লাশ দুটি পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও স্বজনেরা ধারণা করছেন, বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময় স্বামী আবুল কালাম আজাদকে (৪৫) হত্যার পর ফাঁসিতে ঝুঁলে আত্মহত্যা করেছেন স্ত্রী নাজমিন নাহার (৩৫)।
আবুল কালামের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামে। তবে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমিন নাহারকে নিয়ে সদর উপজেলার ওয়ারিয়া গ্রামে মোহন পালের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। উপজেলার ঝাউডাঙ্গা বাজারের একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তাঁর বড় স্ত্রী শারমিন খাতুন দুই সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
আবুল কালামের ছোট ভাই ঝাউডাঙ্গা কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এনামুল ইসলাম বলেন, বছর দেড়েক আগে আবুল কালাম যশোর মনোহরপুর গ্রামের নাজমিন নাহারকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বাড়ির কেউ তা মেনে না নেওয়ায় তিনি বাসা ভাড়া করে থাকেন। বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিদিনের মতো তিনি দোকান বন্ধ করে রাত ১১টার দিকে বাড়ি ফেরেন। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ এনামুলের কাছে সংবাদ আসে, তাঁর ভাইকে ছোট ভাবি হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ওয়ারিয়া গ্রামের ভাড়া বাড়িতে এসে দেখেন, এক ঘরে ভাইয়ের মরদেহ পড়ে আছে। অন্য ঘরে তাঁর ছোট ভাবি নাজমিন নাহার ঘরের ফ্যান ঝোলানো হুকের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর মরদেহ ঝুলছে।
আবুল কালাম আজাদের পাশের দোকানদার ঝাউডাঙ্গা বাজারের ওহিদুজ্জামান জানান, সকালে দোকান না খোলায় আবুল কালামের কয়েকজন গ্রাহক এসে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও কেউ রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অনুরোধে সকাল ১০টার দিকে তিনি আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে যান। গিয়ে দেখেন, এক ঘরে আবুল কালামের মরদেহ পড়ে আছে। অন্য ঘরে তাঁর স্ত্রীর মরদেহ ঝুলছে। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির মালিক মোহন পালকে জানানো হয়।
বাড়ির মালিক মোহন পাল জানান, তিনি বিষয়টি জানার পর স্থানীয় ঝাউডাঙ্গা ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী, দফাদার মো.
ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী বলেন, আবুল কালামের বুকে কালির কলম দিয়ে লেখা ছিল, ‘সরি জান, আই লাভ ইউ।’ ধারণা করা হচ্ছে, হত্যার পর তাঁর স্ত্রী নাজমিন নাহার এসব লিখেছেন। সেখানে একটা চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমি সব কিছু শেষ করে দিলাম। আমি ২টা ৩১ মিনিটে মারছি, এবার আমিও মরছি। আর কেউ বিরক্ত করবে না।’
সাতক্ষীরা সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সুশান্ত ঘোষ ঘটনাস্থল থেকে জানান, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নাজমিন নাহার তাঁর স্বামী আবুল কালাম আজাদকে খাদ্যের সঙ্গে কিছু খাইয়ে প্রথমে অচেতন করে ফেলেন। পরে তাঁকে মাথায় আঘাত করে ও গলায় সরু রশি পেঁচিয়ে শ্বাস রোধে হত্যা করেন। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া সঠিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় এখনো থানায় কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করেননি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকসু নির্বাচন কমিশন ও তফসিল ঘোষণা দাবিতে প্রশাসনকে ‘সালাম’
‘২ জুন কি পেলাম? কি পাওয়ার কথা ছিল? সালাম প্রশাসন!’- লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি- অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের কমিশন গঠন করতে হবে এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
সোমবার (১৬ জুন) বিকাল ৫টায় অনুষ্ঠিতব্য হতে যাওয়া সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি এজেন্ডাভূক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। আগামীকালের এ সভায় যেকোনোভাবে যেন ডাকসু নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো পাশ হয়, সেজন্যই তাদের এমন তোড়জোড়।
আরো পড়ুন:
ঢাবিতে নামাজের কক্ষ নিয়ে বিতর্ক
ছাত্রদলের ফ্যাসিবাদী মনোভাবের প্রতিবাদ ডুজার
ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের আশঙ্কা, একটি পক্ষ ডাকসু নির্বাচন চায় না এবং এই পক্ষ বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে।
অনশনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ডাকসু নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে শক্তিশালী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী বলার চেষ্টা করছে যে ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের দোসর আছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে পুরোপুরি সক্ষম নয়; সুতরাং ডাকসু নির্বাচন দেওয়া যাবে না।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব কি কেবল প্রশাসন-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের? কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এবং হল সংসদে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরাসহ প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ব্যর্থতাগুলো লক্ষণীয়, সেগুলো ঘোচানোর জন্যই ডাকসু নির্বাচন প্রয়োজন।”
তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, ছাত্রলীগ যেভাবে হল নিয়ন্ত্রণ করা, দখলদারিত্ব কায়েম করা, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভিতর ক্ষমতার বলয় তৈরি করত-ঠিক এখনো আমরা এই প্রক্রিয়া দেখছি। আর এই প্রক্রিয়ার যারা এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, তারাই মূলত ডাকসু নির্বাচনে বাঁধা দিতে চায়।”
এর আগে, ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে বিন আমিন মোল্লার নেতৃত্বে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কয়েকজন শিক্ষার্থী।
গত ২৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ ২ জুনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের ওয়াদা করলে অনশন ভাঙ্গেন তারা। সে সময় অনশন শেষে ইয়ামিনসহ দুই শিক্ষার্থীকে হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছিল।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী