বিড়ালের জন্য ফাঁদ পেতে আজকের মতো উদ্ধারকাজ শেষ করল ডিএনসিসি
Published: 1st, March 2025 GMT
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (দ্রুতগতির উড়ালসড়ক) নিচে বিমে আটকে পড়া বিড়ালকে উদ্ধারে ফাঁদ পেতে উদ্ধারকাজ আজকের মতো শেষ করল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও বিড়ালটিকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন। আগামীকাল রোববার আবারও উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।
রাজধানীর মহাখালী উড়ালসড়কের ঠিক ওপরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে ওই বিড়াল আটকে আছে। খবর পেয়ে এটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মহাখালী উড়ালসড়কের ওপরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে একটি বিমের বর্ধিত অংশে প্রথমে একটি হাইড্রোলিক লেডারের সাহায্যে আটকে পড়া বিড়ালটিকে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু বিড়ালটি ভয় পেয়ে সরে যাচ্ছিল। পরে সেখানে আরেকটি লেডার নিয়ে যাওয়া হয়।
ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, বিকেলের দিকে আটকে থাকা বিড়ালটিকে দেখতে পেয়ে নগরবাসীর কেউ একজন বিষয়টি ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে জানান। পরে তিনি বিড়ালটিকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। বিড়ালটিকে উদ্ধারে মহাখালী উড়ালসড়কের ওপরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে একটি বিমের বর্ধিত অংশে একটি লেডার যন্ত্র ওঠানো হয়েছে। ওই লেডারে করে সিটি করপোরেশনের দুই কর্মী ওপরে গিয়ে বিড়ালটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিড়ালটি ভয় পেয়ে দূরে সরে যেতে দেখা যায়। পরে আরেকটি লেডার দিয়েও চেষ্টা চালানো হয়।
মকবুল হোসাইন আরও বলেন, রাত ১০টা পর্যন্ত এ চেষ্টা চলে। পরে বিড়ালটিকে ধরতে একটি ফাঁদ পাতা হয়। ফাঁদের মধ্যে খাবার দিয়ে রাখা হয়েছে। রাতের মধ্যে বিড়ালটি খাবার খেতে এলে এই ফাঁদে আটকা পড়বে। সকালে আবার উদ্ধারকাজ শুরু হবে।
ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, বিড়ালটি এত ওপরে কীভাবে গেল ও আটকা পড়ল, সেটাই খুব আশ্চর্যের বিষয়। কেউ হয়তো বিড়ালটিকে গাড়িতে করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ফেলে রেখে গেছেন। সেখান থেকেই বিড়ালটি নিচে নামতে গিয়ে আটকে যেতে পারে।
আরও পড়ুনএলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আটকা বিড়াল, উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে ডিএনসিসি২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড এনস স
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক
অক্টোবরের প্রথম দিকে লম্বা এক ছুটিতে বেড়াতে গেলাম বগুড়া। দেশের উত্তরের জনপদ বরাবরই আমার পছন্দ। মানুষ কম, হালকা বসতি। পথে বা হাটবাজারে ততটা ভিড়ভাট্টা নেই। বাজারে কম দামে টাটকা শাকসবজি মেলে। এসব কেনার চেয়ে দেখেই তুমুল আনন্দ পাই। নিঝুম গ্রামের ভেতর ফসলের মাঠে ছড়িয়ে থাকা বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি বেশ উপভোগ করি। যত দূর চোখ যায়Ñ গ্রামের পর গ্রাম। মুঠো মুঠো সবুজের ভেতর এঁকেবেঁকে ছুটে চলা মেঠো পথ মাড়িয়ে আমরা প্রতিদিন দূরে কোথাও হারিয়ে যাই। দিনের মুহূর্তগুলো মানুষের জীবনাচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটা নিপুণভাবে ক্ষণে ক্ষণে বদলে যেতে পারে,Ñ এসব গ্রামে না এলে তা বোঝার উপায় নেই। কৃষিনির্ভর এই জনপদে প্রতিমুহূর্তের ব্যস্ততা যেন অনিবার্য নিয়তি।
বগুড়ার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে, দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে মনে হলো যথেষ্ট নয়! চোখের তৃষ্ণা মেটেনি। মনের ক্ষুধাও যায়নি! তখনই মনে পড়ল নওগাঁর ঘুঘুডাঙ্গার বিখ্যাত তালসড়কটির কথা। এত কাছে এসে তালসড়কটি দেখতে যাব না, তা কি হয়? স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ বললেন, ‘বগুড়া থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টারই তো জার্নি। ঘুরে আসুন।’ আমারও মনে হলো, এমন একটি অসাধারণ দৃশ্যের জন্য এই দূরত্ব কিছুই না।
সকালে তুমুল বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার থেমেও গেল। গাড়িতে ওঠার সময় স্থলপদ্মের গাছটি চোখে পড়ল। গাছভর্তি ফুলগুলো বৃষ্টির দাপটে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। অথচ বিকেলে ভেবে রেখেছিলাম, সকালে শরতের মধুর আলোয় স্থলপদ্মের ছবি তুলব। তা আর হলো না। দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। প্রথমে গেলাম নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানে। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন স্বপ্নমণ্ডিত সেই তালসড়কে পৌঁছাই, তখন ঠিক দুপুরবেলা।
কিন্তু দুপুর হলেও দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর তালসড়ক। শুধু বৃহত্তর রাজশাহী নয়, দূরদূরান্ত থেকেও পর্যটকেরা এখানে আসেন। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নে এই তালসড়কের অবস্থান। মূলত ঘুঘুডাঙ্গা-শিবপুর সড়কের দুপাশজুড়ে থাকা বীথিবদ্ধ তালগাছের জন্যই সড়কটি ‘তালসড়ক’ বা ‘তালতলী’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। হাজীনগর গ্রামের মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে এই তালসড়কের অবস্থান।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন রাস্তা ও খালপাড়ে ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে কয়েক লাখ তালগাছ। তখন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, পত্নীতলা ও ধামইরহাট, রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর উপজেলার রাস্তার দুপাশে রোপণ করা হয়েছে অনেক তালগাছ। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছই হারিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বেঁচে আছে কিছু। তবে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গার এই গাছগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। বর্তমানে গাছগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু হওয়ায় রাস্তার দুপাশে শোভাবর্ধন করছে।
একসময় নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়কটি ছিল একটি মেঠো পথ। ২০১২ সালের দিকে সড়কটি পাকা করা হয়। বর্তমানে তালসড়কের দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ থাকায় সড়কটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
ভাদ্র মাসে তাল পাকার মৌসুমে তালসড়ক ঘিরে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। নানা স্বাদের তালের পিঠা এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। তবে বেড়াতে আসা পর্যটকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য এখানে মানসম্পন্ন পর্যটনসেবা থাকা প্রয়োজন।
শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলই নয়, বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানেও প্রচুর পরিমাণে তালগাছ চোখে পড়ে। খেতের আলপথ, বাড়ির সীমানা, খালপাড়, পুকুরপাড় বা পথের ধারে এসব সুদৃশ্য তালগাছ প্রকৃতিতে ভিন্ন এক ব্যঞ্জনা তৈরি করেছে। দেশের বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে থাকা এসব তালগাছের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও আছে। দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দৃশ্যমান তালগাছের রস থেকে ভালো মানের সুস্বাদু গুড় ও মিছরি তৈরি করা হয়। বাজারে এসব গুড়-মিছরির চাহিদাও ব্যাপক। আমাদের দেশেও এসব গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে তালের গুড় তৈরি করা সম্ভব। প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার।
মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক