ঈদ মানেই বাড়ি ফেরার আনন্দ। যে যেখানেই থাকুক, কর্মস্থলের শত ব্যস্ততা ফেলে শিকড়ের টানে বাড়ি ফেরেন। কারণ, এই উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করেই পরিবারের সব সদস্য মিলিত হন, একসঙ্গে সময় কাটান। কিন্তু ঈদের সময়টায় যেহেতু সবারই একসঙ্গে থাকে বাড়ি ফেরার তাগিদ, তাই বাস বা ট্রেনের টিকিট পাওয়া এবং ঠিক সময়ে বাড়ি ফেরা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় দেখা যায়, ট্রাফিক জ্যাম থেকে শুরু করে পথের নানা ঝক্কি-ঝামেলার কারণে ঈদের দিনেও বাড়ি পৌঁছানো সম্ভব হয় না। আবার পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই ছুটি শেষ। ঈদের আনন্দ যেন পথেই মাটি! এ ধরনের সমস্যা এড়াতে আগেই করে ফেলতে পারেন টিকিট বুকিং। কারণ, সময় যত গড়ায়, টিকিটের দামও তত বাড়তে থাকে। রমজানের শুরুতে ফ্লাইটের টিকিট কাটলে কী কী সুবিধা পাবেন, জানা যাক।

কম খরচে টিকিট কেনার সুযোগ

এয়ারলাইনসগুলো সাধারণত ‘ডিমান্ড-বেইসড’ প্রাইসিং মডেল অনুসরণ করে, যেখানে ফ্লাইটের টিকিটের মূল্য নির্ধারিত হয় চাহিদার ভিত্তিতে। অর্থাৎ কোনো রুটে যখন টিকিটের চাহিদা কম থাকে, তখন এয়ারলাইনসগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে টিকিট বিক্রি করে। তবে চাহিদা বাড়তে শুরু করলে, বিশেষ করে ঈদের সময়, টিকিটের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়। রমজানের প্রথম দিকে সাধারণত আকাশপথে ভ্রমণের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকে। এ সময় যাঁরা আগেভাগে টিকিট বুক করেন, তাঁরা বেশ কম দামে টিকিট পেতে পারেন। বিশেষ করে প্রাথমিক বুকিং পর্বে এয়ারলাইনসগুলো বিভিন্ন রকমের ডিসকাউন্ট অফার করে, যা শেষ মুহূর্তে আর পাওয়া যায় না। অন্যদিকে রমজানের শেষের দিকে এবং ঈদের আগের সপ্তাহে টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে পৌঁছায়, ফলে টিকিটের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় দ্বিগুণ বা তিন গুণ পর্যন্ত। অনেক সময় শেষ মুহূর্তে আসন খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়, ফলে যাত্রীদের বাধ্য হয়ে ফার্স্ট ক্লাস বা বিজনেস ক্লাসের টিকিট কিনতে হয়, যা সাধারণ অর্থে অনেক ব্যয়বহুল। তাই যাঁরা বাজেটের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যে আকাশপথে ভ্রমণ করতে চান, তাঁরা বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির ওয়েবসাইটে গিয়ে আগেভাগেই করতে পারেন ঈদের টিকিট। এমনকি আগে টিকিট কেটে রেখে এর মূল্য পরেও পরিশোধ করতে পারেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন ‘বুক নাও, পে লেটার’ নামের এই ফিচার।

নিজের সুবিধা এবং পছন্দমতো ফ্লাইট ও আসন

শেষ মুহূর্তে টিকিট কাটলে সব সময় নিজের পছন্দসই ফ্লাইট বা আসন পাওয়া যায় না। ঈদের আগে ফ্লাইটের চাহিদা এতটাই বেড়ে যায় যে যাত্রীদের অপ্রত্যাশিত সময়ের ফ্লাইট নিতে বাধ্য হতে হয়, যা তাঁদের ব্যক্তিগত বা পেশাগত পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। বিশেষ করে, যাঁরা পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করতে চান, তাঁদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া শেষ মুহূর্তে বুকিং করলে ফ্লাইটের আসনের পছন্দসই বিকল্প না–ও থাকতে পারে। সাধারণত উইন্ডো সিট, এক্সট্রা লেগস্পেস কিংবা পছন্দসই কেবিন ক্লাস প্রথমেই বুক হয়ে যায়। ফলে অনেক সময় মাঝের সিট নিতে হয়, যা দীর্ঘ ভ্রমণে বেশ অস্বস্তিকর হতে পারে। আগেভাগে বুকিং করলে নিজের সুবিধামতো সিট বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে, যা যাত্রাকে করে তোলে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময়।

শেষ মুহূর্তের দুশ্চিন্তা কমে যায়

যাত্রার পরিকল্পনা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। ঈদের ঠিক আগের কয়েক দিন বিমানবন্দরগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় থাকে, ফ্লাইটে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয় এবং অনেক সময় ফ্লাইট বিলম্বিতও হয়। এসব দুশ্চিন্তা ও ঝামেলা এড়ানোর জন্য আগেভাগে টিকিট নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। টিকিট পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকলে যাত্রীরা প্রায়ই বিকল্প পরিবহনব্যবস্থার খোঁজ করেন, যা আবার সময় ও আর্থিক দিক থেকে ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় শেষ মুহূর্তে টিকিট না পেলে বাস বা ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা তুলনামূলক বেশি সময়সাপেক্ষ ও ক্লান্তিকর হতে পারে। আগেভাগে টিকিট বুক করলে এসব অনিশ্চয়তা দূর হয় এবং রমজানের শেষের দিনগুলো শান্তিতে উপভোগ করা যায়। তাড়াহুড়োর মধ্যে না থেকে নিশ্চিন্তে ঈদ উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি নেওয়া যায়।

ফ্লাইট বুকিংয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

অনলাইন টিকিট বুকিং করার সময় শুধু বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট বা ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবহার করুন। সাশ্রয়ীভাবে আকাশপথে যাতায়াত করতে চাইলে টিকিটের মূল্য তুলনা করে নেওয়া উচিত। বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির ওয়েবসাইটে গেলেই টিকিটের মূল্য দেখতে পাবেন। তবে অনেক ওয়েবসাইটেই প্রথমে সার্চ করলে যে খরচ দেখায়, টিকিট বুকিং করতে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন হিডেন চার্জ থাকে। ফলে খরচ অনেক বেড়ে যায়।

ফ্লাইট এক্সপার্টে এই ঝামেলা নেই। যেমন ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইটে টিকিট সিলেক্ট করলেই নিচে একসঙ্গে দেখতে পাবেন প্রতিটি এয়ারলাইনসের টিকিটের মূল্য। সব কটির মূল্য যাচাই করে এবং তুলনামূলক কম মূল্যে টিকিট কাটতে পারবেন। এ ছাড়া বেশ কিছু এয়ারলাইনস আগেভাগে বুকিং করলে বিশেষ ছাড় দেয়, সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রমজ ন র শ ফ ল ইট র র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশ লাইনসগুলো গোপন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল: নূর খান

মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ লাইনসগুলো গোপন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল। এসব গোপন কারাগারে বিভিন্ন জেলা ও বিভিন্ন জেল থেকে মানুষদের এনে নির্যাতন করা হতো।

মো. নূর খান বলেন, ‘পুলিশ লাইনস বলে একটা জিনিস আছে জেলায়। এই পুলিশ লাইনসগুলো গোপন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল। কীভাবে এটা সম্ভব? কীভাবে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নানা জেলা থেকে মানুষকে নিয়ে টর্চার করা হতো।...বর্তমান পুলিশ হেডকোয়ার্টার যেটা, সেটার নিচে এলআইসি নামে একটা ডিভিশন আছে সেখানে বন্দীদের এনেও টর্চার করা হতো।’

‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন মো. নূর খান। আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মো. নূর খান উদাহরণস্বরূপ বগুড়া ও বাগেরহাটের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সাম্প্রতিককালে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে যেয়ে এসব তথ্য পেয়েছেন। এসব ঘটনার সঙ্গে বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও দেশ পরিচালনাকারীরা সরাসরি জড়িত ছিলেন।

পুলিশের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার ওপর জোর দেন নূর খান। তিনি বলেন, ‘পুলিশকে যদি আপনি তার মতো চলতে দিতে পারেন এবং সেখানে কমিশনের যদি একটা হস্তক্ষেপ থাকে অর্থাৎ কমিশন যদি বিষয়গুলো জানে ও তারা যদি পদক্ষেপ নিতে পারে, তাহলে এই জায়গাটায় কিছুটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স (ভারসাম্য রক্ষা) হবে। পদায়নের ক্ষেত্রে একই অবস্থা হবে।’

সুশীল সমাজের যারা পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো জানেন, বোঝেন ও সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন, তাঁদের পুলিশ সংস্কার কমিশনে যুক্ত করার পরামর্শ দেন এই মানবাধিকারকর্মী।

পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দেন মো. নূর খান। পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীতে সত্যিকারের পরিবর্তনের জন্য সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো পুলিশ বাহিনীর রাজনীতিকীকরণ করবে না, এমন প্রতিশ্রুতিও দিতে হবে।

শুরুতে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।

গোলটেবিলে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী।

এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম এ বৈঠকে অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুলিশ লাইনসগুলো গোপন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল: নূর খান