‘পাবলিক প্লেস’ বা জনপরিসরে ধূমপান নারী–পুরুষ সবার জন্য অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। কেউ যেন উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান না করেন, সে জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

রাজধানীর লালমাটিয়ায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় দুই তরুণীর ধূমপান ঘিরে উত্তেজনা এবং শেষ পর্যন্ত তা থানা–পুলিশে গড়ানোর ঘটনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন উপদেষ্টা। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর পুলিশ লাইনসে অবস্থিত পাবলিক ম্যানেজমেন্ট অর্ডারের ব্যারাক পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর এ কথোপকথন হয়।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি তাঁরা (দুই তরুণী) নাকি সিগারেট খাচ্ছিল, কিছু লোক সেখান দিয়ে নামাজ পড়তে যাচ্ছিল। তাঁরা (লোকেরা) বাধা দেওয়ায়, তাঁদের ওপর চা ছুড়ে মেরেছিল।’ তিনি বলেন, ‘পাবলিক প্লেসে ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য অপরাধ। তাই সবাইকে অনুরোধ করব, কেউ যেন উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান না করে।’

পবিত্র রমজান মাস প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘রোজার সময় সবাইকে একটু সংযমী হতে হবে। আর আমাদের ধর্ম উপদেষ্টা সবাইকে অনুরোধ করেছেন, রমজানে দিনের বেলায় বাইরে যেন কেউ খাবার না খায়। এটা করতে পারলে রোজাদারদের সম্মান করা হয়।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো.

ইবনে মিজান প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের আসাদগেটের কাছে আড়ং গলির পেছনে এক তরুণী ধূমপান করছিলেন। তখন স্থানীয় লোকজন ওই তরুণীর উদ্দেশে উচ্চবাচ্য করেন। খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। তাঁকে আটক করা হয়নি। নিরাপদ হেফাজতের জন্য তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তরুণীর পরিবার থানায় আসে। পরে তাঁকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

রমজানে জিনিসপত্রের দাম না বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতেও রমজানে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে রাখা হয়। আর আমাদের দেশে উল্টোটা হয়। রমজানের সময় ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করব, তাঁরা যেন এ সময় জিনিসপত্রের দাম না বাড়ায়। রমজানের সময় তাঁরা যেন জিনিসপত্রের দাম যথাসম্ভব কম রাখে।’

রমজানে অন্যান্য বছরের মতো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা আপনাদের বলতে বা স্বীকার করতে হবে যে এবার জিনিসপত্রের দাম গতবারের চেয়ে কম রয়েছে। আর অভিযান না চালিয়েও যদি জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সেটা তো আরও ভালো।’

আরও পড়ুনধূমপান করায় হট্টগোল, তরুণীকে উদ্ধার করে থানায় আনল পুলিশ২১ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ন সপত র র দ ম অন র ধ প বল ক র জন য র সময় রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ