Prothomalo:
2025-05-01@05:37:08 GMT

দ্রুত দক্ষ জনবল নিয়োগ দিন

Published: 3rd, March 2025 GMT

বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবা পাওয়া ব্যক্তিকে তাঁর পকেট থেকে ৭৩ শতাংশ ব্যয় করতে হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় যা সর্বোচ্চ। ফলে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে অনেকের জীবনমান দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়। এর মূল কারণ হলো রোগীর অবস্থা একটু জটিল হলেই তাঁকে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়ের ব্যবধানটা অনেক বেশি। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা গেলেই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, চিকিৎসাসেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাসপাতালসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও কিংবা চিকিৎসার কাজে ব্যবহারের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম কেনা হলেও চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলসংকটে সেগুলো ঠিকমতো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একদিকে দামি চিকিৎসা সরঞ্জাম এমনি এমনি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে রোগীরা কম খরচে উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার এই অপরিকল্পিত চিত্রের একেবারে জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটি। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, আধুনিক এই সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সক ও দক্ষ জনবলের অভাবে এখনো কয়েকটি বিভাগে যন্ত্রপাতি সচল করা সম্ভব হয়নি। অথচ হাসপাতালটির বহির্বিভাগে গড়ে ২ হাজার ৫০০ জন ও অন্তর্বিভাগে ৫৫০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন।

৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে ৪টি উন্নত আইসিইউ শয্যা, ভেঙে যাওয়া হাত-পায়ে কৃত্রিমভাবে অস্ত্রোপচার করে রড সংযোজনের জন্য রয়েছে আধুনিক সিআরএম যন্ত্র, চোখের চিকিৎসার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাসিকস যন্ত্র। অথচ এগুলো চালানোর মতো লোকবল নেই। হাসপাতালটিতে সাত কোটি টাকা দামের সিটি স্ক্যান যন্ত্র সচল রাখা হয়েছে অন্য বিভাগ থেকে জনবল ধার করে এনে।

কোভিড মহামারি ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময় আমরা দেখেছি সংকটাপন্ন রোগীদের জীবন বাঁচাতে আইসিইউ বেড কতটা দরকারি। একটা আইসিইউ বেডের জন্য মানুষের হাহাকার, আর্তির কথা আমাদের নীতিনির্ধারকেরা নিশ্চয়ই বিস্মৃত হননি। প্রশ্ন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার পরও কেন ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালগুলো পুরোদমে চালু করা যাবে না?

এম মনসুর আলী হাসপাতালটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পাশাপাশি ৫০ শতাংশ চিকিৎসক ও দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এ বিপুল জনবল ঘাটতি নিয়ে একটা হাসপাতাল ঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। হাসপাতালটিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিন। সবকিছু থাকা সত্ত্বেও মানুষ কেন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আউটসোর্সিং এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন

আধুনিক শ্রমবাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্তৃত খাত হলো আউটসোর্সিং। এ খাতের মাধ্যমে হাজার হাজার শ্রমিক প্রতিদিন সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। অথচ এই শ্রমিকদের অধিকাংশই শোভন কাজের মৌলিক মানদণ্ড থেকে বঞ্চিত। চাকরির স্থায়িত্ব নেই; সুরক্ষার নিশ্চয়তা নেই; নেই সংগঠনের অধিকার– এমন বাস্তবতায় শ্রমিকরা এক অনিশ্চিত ও অনুৎপাদনশীল পরিবেশে দিন কাটাচ্ছেন।

এ প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি শ্রম সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে ‘শ্রমজগতের রূপান্তর-রূপরেখা: শ্রমিক-অধিকার, সুসমন্বিত শিল্প-সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি সুপরিকল্পিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনের বিভিন্ন অধ্যায়ে কাজের স্বীকৃতি, অধিকার, নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব নিয়ে যেসব সুপারিশ রাখা হয়েছে, তার মধ্যে আউটসোর্সিং খাতে নিযুক্ত শ্রমিকদের নিয়ে তৎপরতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে সরকারের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ১২৫০টি ঠিকাদারি সংস্থা জনবল সরবরাহ করছে। এর বাইরেও অগণিত অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকরা কর্মঘণ্টা, মজুরি, ছুটি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভয়াবহ বৈষম্যের শিকার।
অধিকাংশ আউটসোর্সিং শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি পান না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার নির্ধারিত মজুরি না দিয়ে বেতন থেকে অবৈধভাবে টাকা কেটে রাখে; উৎসব ভাতা দেয় না; ওভারটাইমের ভাতা দেয় না। সাম্প্রতিক ২০২৫ সালের আউটসোর্সিং নীতিমালায় উৎসব ভাতা ও বৈশাখী ভাতা অন্তর্ভুক্তিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলা যায়, তবে বাস্তবায়ন ও নজরদারি এখনও দুর্বল।

নীতিমালায় নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি সংক্রান্ত কোনো অর্থনৈতিক সুরক্ষা না থাকায় তারা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে অন্তঃসত্ত্বা হলেই চাকরিচ্যুতির শঙ্কা থাকে। বেসরকারি খাতে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ। নতুন নীতিমালায় ৪৫ দিনের প্রসূতিকালীন ছুটি সংযুক্ত করা হয়েছে, যা বিদ্যমান শ্রম আইনের ১১২ দিনের বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আউটসোর্সিং শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার পথ রুদ্ধ। তারা ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারেন না। করলে চাকরিচ্যুতির শিকার হন। ফলে শ্রমিকস্বার্থে কোনো সামাজিক সংলাপ বা দরকষাকষির সুযোগ থাকে না।
বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য, ওয়াসা, নিরাপত্তা খাতে কর্মরত হাজার হাজার আউটসোর্সিং শ্রমিক পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। করোনা মহামারিতে তারা সম্মুখ সারিতে থেকেও কোনো রকম ক্ষতিপূরণ পাননি। শ্রম বিধিমালার ১৬(৩) অনুযায়ী মালিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ দুর্বল।

সে জন্য শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে আউটসোর্সিং শ্রমিকদের জন্য যেসব সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়িত হলে এ খাতে শোভন কাজের নিশ্চয়তা আসবে। আউটসোর্সিং খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের শোভন কাজ, মৌলিক অধিকার এবং কর্মস্থলে সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।   
আমি মনে করি, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, করপোরেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়ী জনবল কাঠামো হালনাগাদ করে আইনের ধারা ও বিধি অনুসরণপূর্বক প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা দরকার। ঠিকাদারের মাধ্যমে সার্ভিস চার্জ বা কমিশনের ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সরাসরি নিয়োগ প্রদান নিশ্চিত করা দরকার। যারা ৫-১০ বছর বা তদূর্ধ্ব সময় ধরে কর্মরত থেকে দক্ষতা অর্জন করেছেন, তাদের শ্রম আইন অনুযায়ী অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মূল মালিককে দায়বদ্ধ করা দরকার।

শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত কাজ করতে রাজি না হলে তাদের চাকরিচ্যুত বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। এ বিষয়ে শ্রম পরিদর্শন দপ্তর কঠোর নজরদারি করবে।  রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, দপ্তর ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং বন্ধ করতে হবে। যেসব দপ্তর ও সেবা খাতে ইতোমধ্যে আউটসোর্সিং করা হয়েছে, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে স্থায়ী নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রত্যাশা একটাই– শোভন কাজের বাস্তবায়ন। এ খাতের বৈষম্য কমাতে হলে সরকারের নীতিগত, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক হস্তক্ষেপ দরকার। একই সঙ্গে সমাজকেও সচেতন হতে হবে, যাতে মানুষ সস্তা সেবার পেছনে শ্রমের শোষণকে গুরুত্ব দিতে শেখে।

মো. মাছুম বিল্লাহ: আইন কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আউটসোর্সিং এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন